ঢিমে তালে চলা অর্থনীতিতে
সকলের নজর স্থির আয় প্রকল্পে
বশেষে সরকার আনুষ্ঠানিক ভাবে মেনে নিল, অর্থনীতি ঝিমিয়ে পড়েছে। চলতি আর্থিক বছরে সম্ভাব্য বৃদ্ধির হার ৮% থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ৭.৫%। গত বছর ওই হার ছিল ৮.৫%। পাশাপাশি অবশ্য বলা হয়েছে, মার্কিন এবং ইউরোপীয় অর্থনীতির হাল ফিরলে দীর্ঘ মেয়াদে ভারতে ৯% বৃদ্ধি সম্ভব।
সমস্যা এখন অনেক। নভেম্বরে রফতানি কমেছে। আমদানি বেড়েই চলেছে। ফলে ছোট হচ্ছে বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার। টাকার তুলনায় দাম বাড়ছে ডলার-পাউন্ড-ইউরো-ইয়েনের।
বাড়ছে ভর্তুকি বাবদ সরকারের ব্যয়। বাজেট অনুযায়ী ভর্তুকির পরিমাণ হওয়ার কথা ১.৩৪ লক্ষ কোটি টাকা। মূলত তেল এবং সার আমদানির খরচ ভাল রকম বেড়ে ওঠায় ভর্তুকির অঙ্ক অনেকটাই বেড়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ বছরে সরকারি সংস্থার শেয়ার বিক্রি করে ৪০,০০০ কোটি টাকা সংস্থানের প্রস্তাব ছিল বাজেটে। এটা যে বাজারের বর্তমান অবস্থায় সম্ভব নয়, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। সব মিলিয়ে অবস্থা বেশ কঠিন। এই সব কারণে একটু আশার আলো দেখিয়ে বাজার ফের নেমে এসেছে খানিকটা।
বাজারে এখন একটিই ভাল খবর এবং তা হল, খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির নীচে নামা। এটা যদি একটু স্থায়ী হয় এবং সামান্য হলেও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যদি আসন্ন ঋণনীতিতে নগদ জমার অনুপাত (সিআরআর) কমায়, তবে হয়তো সাময়িক উদ্দীপনা আবার দেখা দিতে পারে বাজারে। এই হারেই বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক তার আমানতের একটি অংশ গচ্ছিত রাখে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে।
শুক্রবার বেশ ভাল জায়গায় বন্ধ হয়েছে মার্কিন বাজার। এর প্রভাবে সোমবার এশীয় বাজারগুলি যদি একটু উঁচুতে খোলে, তবে সেনসেক্স-নিফ্টি আবার খানিকটা শক্তি ফিরে পাবে।
১৭ হাজারের কাছাকাছি গিয়ে সেনসেক্স বারবারই ফিরে আসছে ১৬ হাজারে। বাজার যে শক্তি ধরে রাখতে পারছে না, তা এখন বেশ স্পষ্ট। ফলে সাধারণ মানুষের আর ইক্যুইটিতে মন নেই। চাকচিক্য হারিয়েছে ইক্যুইটি-নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ডগুলিও। লগ্নির সিংহভাগ এখন যাচ্ছে ব্যাঙ্কে। আগামী দিনে মোটা লগ্নি টানবে বিভিন্ন সংস্থার করমুক্ত বন্ড। করদাতাদের অনেকেই টাকা রাখছেন মিউচুয়াল ফান্ডের এফএমপি প্রকল্প বা মেয়াদি জমায়। লগ্নি বাড়ছে সোনা এবং স্বর্ণপত্র বা গোল্ড ইটিএফ-এও।
বেশ কিছু দিন বাদে পরিবর্তন আনা হয়েছে স্বর্ণ সঞ্চয় প্রকল্পে। এতে কিন্তু আকর্ষণ খুব একটা বাড়েনি। বরং কমেছে। করদাতাদের অবশ্য বেশ পছন্দ হয়েছে পরিবর্তিত পিপিএফ প্রকল্প। এখানে সুদের হার যেমন বেড়েছে, তেমনই বেড়েছে লগ্নির ঊর্ধ্বসীমাও। করমুক্ত ৮.৬% সুদ এই চড়া সুদের বাজারেও যথেষ্ট আকর্ষণীয়। লগ্নির মাত্রাও ১ ডিসেম্বর থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে বছরে ১ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ চলতি আর্থিক বছরে যাঁরা এরই মধ্যে পিপিএফে ৭০,০০০ টাকা জমা করেছেন, তাঁরা মার্চের মধ্যে এখানে জমা দিতে পারবেন আরও ৩০,০০০ টাকা। মনে রাখতে হবে, ৮০সি ধারায় কর ছাড়ের প্রয়োজন না থাকলেও পি পি এফ অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করা বেশ লাভ- জনক। ৮.৬% সুদ ছাড়াও প্রকল্পটি সুরক্ষার দিক থেকে অতি উত্তম। আছে কিছুটা টাকা তোলা, ঋণ নেওয়া এবং নমিনেশনের সুবিধাও। ১৫ বছরের মেয়াদ শেষ হলে বাড়িয়েও নেওয়া যায় ৫ বছর করে। যাঁরা নতুন কর্মজীবনে প্রবেশ করেছেন, তাঁরা যদি নিয়মিত পিপিএফ অ্যাকাউন্টে সাধ্যমতো সঞ্চয় করে চলেন, তবে কর ছাড় পাওয়া ছাড়াও দীর্ঘ মেয়াদে তাঁর নামে সুদে-আসলে জমে উঠবে এক বিরাট সম্পদ। পিপিএফ অ্যাকাউন্ট যুগ্ম নামে খোলা যায় না, খুলতে হয় একক নামে, খোলা যায় স্টেট ব্যাঙ্ক ও তার সব সহযোগী ব্যাঙ্ক, কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক এবং বড় ডাকঘরে।
ব্যাঙ্ক গ্রাহকদের কয়েকটি অসুবিধার কথা বিবেচনা করে সেগুলির প্রতিকারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সম্প্রতি কয়েকটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এগুলির সারমর্ম হল:
১) যদি কোনও মেয়াদি জমা অ্যাকাউন্ট ‘আইদার অর সারভাইভার’ (ই অর এস) শর্তে খোলা হয়, তবে মেয়াদ শেষে টাকা ফেরত দেওয়ার সময় দু’জনের স্বাক্ষরের প্রয়োজন নেই। মেয়াদ শেষের আগে যদি ভাঙানো হয়, তবে ব্যাঙ্ক দু’জনের স্বাক্ষর চাইতে পারে।
২) অনেক ব্যাঙ্ক এখন সেভিংস ব্যাঙ্ক পাস বুকের জায়গায় ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট পাঠাচ্ছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশ, ২০০৬ সালের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী পাস বুকের সুবিধা সব ব্যক্তিগত গ্রাহককে দিতে হবে। কেউ ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট চাইলে তা পাঠাতে হবে প্রতি মাসে। এর খরচ গ্রাহককে দিতে হবে না।
৩) চেক, ড্রাফট, পে-অর্ডার এবং ব্যাঙ্কার্স চেক-এর মেয়াদ ৬ মাস থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ৩ মাস।
৪) ২০,০০০ টাকা বা তার বেশি মূল্যের ড্রাফট ইস্যু করা হলে তাকে বাধ্যতামূলক ভাবে অ্যাকাউন্ট পেয়ি ক্রসিং করতে হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.