|
|
|
|
রাজেশ-শর্মিলার ‘আরাধনা’য় সাজছে দার্জিলিং |
কিশোর সাহা • দার্জিলিং |
‘সপনো কি রানি’ এবং তাঁর নায়ক। ‘পাহাড়ের রানি’-র পটভূমিতে রাজেশ খন্না-শর্মিলা ঠাকুর!
সব ঠিকঠাক চললে আগামী ২০ ডিসেম্বর দার্জিলিংয়ে ফিরে আসতে পারে ১৯৬৯-র ম্যাজিক। ওই বছরই তো শক্তি সামন্তের ‘আরাধনা’ ছবিতে শর্মিলাকে উদ্দেশ করে রাজেশের ঠোঁটে সেই বিখ্যাত গান, “মেরে সপনো কি রানি কব আয়েগি তু...।” শচীন-কর্তার সুর (তাঁর অসুস্থতার কারণে দায়িত্ব অবশ্য অনেকটাই ভাগ করে নিয়েছিলেন পুত্র রাহুল দেববর্মন), কিশোরকুমারের গলা, রাজেশ-শর্মিলার রসায়ন আর দার্জিলিংয়ের সৌন্দর্য মিলেমিশে সৃষ্টি হয়েছিল ইতিহাস। সেই ইতিহাসেরই পাতা উল্টে দেখার সুযোগ আবার পাহাড়বাসীর দরজায়! দার্জিলিং জেলা প্রশাসন ও পর্যটন দফতরের সঙ্গে যত দূর কথাবার্তা হয়েছে, তাতে দার্জিলিঙে চা-পর্যটন উৎসবের উদ্বোধন করতে রাজি হয়েছেন ‘আরাধনা’র নায়ক-নায়িকা দু’জনেই।
ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখা, নাকি ইতিহাসের বাকি থেকে যাওয়া অংশটুকু সম্পূর্ণ করা? শোনা যায়, ‘আরাধনা’র এই গানটির শু্যটিংয়ের সময় কিছুতেই একসঙ্গে ‘ডেট’ দিতে পারছিলেন না রাজেশ আর শর্মিলা। শেষ পর্যন্ত রাজেশ একাই আসেন। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে জিপ চালাচ্ছেন রাজেশ এই অংশটাই দার্জিলিংয়ে শু্যট করা হয়। শর্মিলার অংশটা পরে শু্যট হয় মুম্বইয়ে।
দার্জিলিংয়ের টয়ট্রেনের আদলে বানানো সেট-এ শর্মিলা তাঁর অংশটুকু অভিনয় করেন। পরে সম্পাদনার সময় দু’টো অংশ এমন ভাবে জোড়া হয় যাতে সবটা এক ফ্রেমে চলে আসে। সুতরাং সে দিক থেকে দেখলে ‘সপনো কি রানি’ গানের সূত্রে দু’জনের যে একত্র আগমনটি বাকি থেকে গিয়েছিল, সেটাই ঘটতে চলেছে এ বার। ৪২ বছর পর। |
|
‘আরাধনা’ ছবির একটি দৃশ্যে রাজেশ খন্না ও শর্মিলা ঠাকুর। |
উৎসবের অন্যতম উদ্যোক্তা তথা দার্জিলিং জেলা প্রশাসনের অফিসারেরা ‘আরাধনা’র জুটিকে অভ্যর্থনা জানাতে সব রকমের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। দার্জিলিঙের জেলাশাসক সৌমিত্রমোহনের কথায়, “দার্জিলিং চা-পর্যটন উৎসব উদ্বোধনের প্রস্তাব পেয়ে ওঁরা দুজনেই সম্মতি দিয়েছেন। ফলে আমরাও সেই মতো প্রস্তুতি নিচ্ছি।” ‘আরাধনা’র জুটি আসবেন শুনে পাহাড়ে বাড়তি উচ্ছ্বাস শুরুই হয়ে গিয়েছে। রাজেশ খান্না, শর্মিলা ঠাকুর তো থাকছেনই। আসবেন হরিহরণও। কলকাতা থেকে অঞ্জন দত্ত, সব্যসাচী চক্রবর্তী, জুন মালিয়া উৎসবে থাকার সম্মতি দিয়েছেন। আসার কথা রয়েছে কবি ও সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়েরও।
প্রায় চার বছর পরে শীতের মরসুমে পাহাড়ে কোনও বড় মাপের উৎসব হচ্ছে। ২০০০ সালে শুরু হয়েছিল চা-পর্যটন উৎসব। পরের তিন বছর সেটা আর হয়নি। ২০০৪ সালে ‘দার্জিলিং কার্নিভাল’ শুরু হয়েছিল। কিন্তু ২০০৭ সালে পৃথক রাজ্যের দাবিতে পাহাড় ফের উত্তপ্ত হলে সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। এ বছর জিটিএ চুক্তির পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গের কথার্বাতার সময়েই ীতে ফের পাহাড়ে উৎসব আয়োজনের প্রসঙ্গ ওঠে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মোর্চা নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে দার্জিলিং জেলা প্রশাসন তার রূপরেখা তৈরি করে। সেখানেই ঠিক হয়, ২০ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ‘টি-ট্যুরিজম ফেস্টিভাল’ হবে। আগে উৎসব শুধুই দার্জিলিং-কেন্দ্রিক হত। এ বার একযোগে দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং, মিরিক ও তিস্তায় উৎসব বলে ঠিক হয়েছে। এ বারের ম্যাসকট রেডপাণ্ডা ‘মিলি’। দার্জিলিং জেলা প্রশাসন ও মোর্চার প্রতিনিধিরা তো বটেই, বন-পর্যটন সহ রাজ্য সরকারের নানা দফতরের অফিসারদের নিয়ে তৈরি হয়েছে কমিটি। তাতে সামিল হয়েছে রেলও।
দার্জিলিঙের জেলাশাসক জানাচ্ছেন, এ এক অন্য স্বাদের উৎসব। একই দিনে কোথাও হবে মোমো খাওয়ার প্রতিযোগিতা। কোথাও ঘুড়ি ওড়ানোর। যাঁরা তিস্তায় মাছ ধরতে চান, উৎসব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা মাছ ধরার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন। রয়েছে পর্বতারোহণ, ট্রেকিংয়ের প্রতিযোগিতাও। প্যারাগ্লাইডিংয়ের জন্য প্রস্তুতি চলছে। সঙ্গে রয়েছে পাহাড়ি মানুষের নাচগান, নাটক দেখার ব্যবস্থাও।
চা নিয়ে যাঁদের বাড়তি কৌতূহল রয়েছে, তাঁদের হাতের মুঠোয় এনে দেওয়া হবে আস্ত বাগান। জেলাশাসক জানান, আগ্রহী পর্যটকদের বাছাই করা বাগানে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে চা চারা তৈরি থেকে পাতা তোলা ও কী ভাবে তা
থেকে নানা ধরনের চা তৈরি হয়, তা হাতে-কলমে দেখানো হবে। চা-প্রেমীরা ইচ্ছে হলে কী ভাবে চায়ের মান পরীক্ষা করতে হয় তা-ও শিখতে পারবেন। আর আছে টয়ট্রেনের নানা ‘রাইড’! রাজেশ-শর্মিলাকে দিয়েই তো সারা দেশের বলিউড দর্শকের মনে পাকাপাকি ভাবে গেঁথে বসে গিয়েছে সেই স্বপ্নের রেলযাত্রা! বলিউড সঙ্গীতে রফি-যুগের অবসান ঘটিয়ে এসেছে কিশোর-যুগ! অনেক বছর পরে সেই স্মৃতি পর্দায় ফের উস্কে দিয়েছিলেন শর্মিলা-তনয় স্যাফ, ‘পরিণীতা’ ছবিতে। এ বার সশরীরে হাজির হয়ে ইতিহাসের বৃত্তটি সম্পূর্ণ করতে চলেছেন খোদ রাজেশ-শর্মিলাই। দার্জিলিং তার অপেক্ষায় এখন থেকেই জমজমাট! |
|
|
|
|
|