প্রায় আট দিন গাছতলায় একেবারে খোলা আকাশের নীচে পড়েছিলেন বৃদ্ধ মানুষটি। শেষ পর্যন্ত রবিবার এলাকার কয়েক জন বাসিন্দার সাহায্যে হাসপাতালে ঠাঁই হল তাঁর।
গত রবিবার হঠাৎ কোথা থেকে যেন উদয় হয়েছিলেন জাহান্নগর পঞ্চায়েতের ব্রহ্মাণীতলায়। এলাকার মানুষেরা জানিয়েছেন, তখন তাঁর হাঁটতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল, খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছিলেন। প্রথমে কয়েক দিন কেউ তেমন আমল দেননি। তার পরে যখন দেখা গেল, ব্রহ্মাণীতলায় মন্দির লাগোয়া অশ্বত্থ গাছের তলা থেকে আর নড়ার ক্ষমতা নেই অজ্ঞাত পরিচয় ওই বৃদ্ধের, তখন কেউ রুটি, কেউ জল, কেউ বিস্কুট এগিয়ে দিয়েছেন।
তবে খোলা আকাশের নীচে ঠান্ডা হাওয়া আর প্রবল কুয়াশায় তাঁর অসুস্থতা বাড়তে থাকে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই বিপদ বুঝে সরে যান। কয়েক জন কেবল হাল ছাড়েননি। তাঁদেরই এক জন সুরজিৎ সরকার। |
তিনি বলেন, “ওই বৃদ্ধ কোনও কথাই বলতেন না। প্রথম দিকে এক বার জানিয়েছিলেন, পূর্ব মেদিনীপুর থেকে এসেছেন। কিন্তু নিজের নাম বলেননি।” আর এক বাসিন্দা অপূর্ব দেবনাথ বলেন, “বৃদ্ধের অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে দেখে দু’-তিন দিন ধরেই এলাকার প্রভাবশালী লোকেদের বলি। কেউ এগিয়ে আসেননি। উল্টে অনেকে বলেন, ‘ও মরে যাবে, ঘাঁটাঘাঁটি না করাই ভাল’।”
ফলে কোনও ব্যবস্থা হয়নি অসুস্থ ওই বৃদ্ধের। এর পরে এলাকার নাছোড়বান্দা কয়েক জন রবিবার স্থানীয় বিধায়ক তৃণমূলের তপন চট্টোপাধ্যায়কে খবর দেন। খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছন তপনবাবু। তাঁর কথায়, “গিয়ে দেখি, খুব বাজে অবস্থার মধ্যে পড়ে মানুষটি। লোক দিয়ে তাঁকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করিয়ে নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি।” বৃদ্ধকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে এসেছিলেন মাধাইপুরের অসিত ঘোষ। তিনি বলেন, “হাসপাতালে রাতে ডাক্তারবাবুরা দেখবেন। আমরা বলেছি, সব ধরনের সাহায্যের জন্য আমরা তৈরি। বৃদ্ধ যেন সেরে ওঠেন।” এঁদের জন্যই গায়ে কম্বল, মাথায় ছাদ পেলেন অজ্ঞাত পরিচয় মানুষটি। |