মঙ্গলকোটে ফের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব
বোমাবাজির অভিযোগ এক তৃণমূলকর্মীর, আজাদ অধরাই
দু’দিন ধরে মঙ্গলকোটের পাঁচটি গ্রামে তল্লাশি চালিয়েও আজাদ মুন্সীর কোনও খোঁজ পেল না পুলিশ। ধরা পড়েনি আজাদ গোষ্ঠীর অন্য অভিযুক্তেরাও। বৃহস্পতিবার রাতে মঙ্গলকোটে এক তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে বোমাবাজি হয়। অভিযোগের আঙুল ওঠে দলেরই ‘আশ্রিত’ ওই গোষ্ঠীর দিকে। তৃণমূল কর্মী আন্নু কাজি এর পরে শুক্রবার দুপুরে থানায় গিয়ে আজাদ মুন্সী, অঞ্জন মুন্সী-সহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মঙ্গলকোট ব্লকের কোর কমিটির অন্যতম সদস্য অপূর্ব চৌধুরী। ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশ। কিন্তু এখনও কাউকে ধরা যায়নি। দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে শনিবার বিকেলে ধিক্কার মিছিল করে তৃণমূল। এর আগেও পুলিশের কাছে আজাদ ও অঞ্জনের নামে তোলাবাজি, বেআইনি অস্ত্র রাখা-সহ প্রচুর অভিযোগ হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বোমা পড়লে আন্নু কাজির দোতলা মাটির বাড়ির একাংশ পুড়ে যায়। ভাতার থেকে দমকলের একটি ইঞ্জিন এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার পরে মঙ্গলকোটের ওসি দীপঙ্কর সরকার জানিয়েছিলেন, আন্নু কাজির দু’টি ঘর পুড়ে গিয়েছে। আসবাব পত্রও নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
এই ঘটনায় ফের এক বার প্রকাশ্যে চলে এসেছে মঙ্গলকোটে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। আজাদ ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে আন্নু কাজি শুক্রবার বলেন, “ওই সব দুষ্কৃতীদের কাজে আমি সমর্থন করছিলাম না। দলের ভিতরে প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। সেই কারণেই আমার বাড়িতে বোমাবাজি করা হল।” তাঁর কথা সমর্থন করে অপূর্ববাবু বলেন, “আন্নু কাজির বাড়িতে যারা বোমা মেরেছে, তারা একেবারেই ঠিক কাজ করেনি। দলের লোক হলেও পুলিশ ওদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিক।” পুলিশের ধারণা, মঙ্গলকোটের অজয় নদের উপরে বালির ঘাট নিয়ে আন্নু কাজি ও আজাদের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরেই বিবাদ চলছিল। তার জেরেই এই ঘটনা। পুলিশ আরও জানিয়েছে, বর্তমানে ওই ঘাটের ইজারাদার এক সময় সিপিএমের ‘ঘনিষ্ঠ’ ছিল। তাঁকে উৎখাত করতেই আজাদ-বাহিনী সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আন্নু কাজি সেই ইজারাদের পাশে দাঁড়ানোয় দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে।
বাম জমানায় মঙ্গলকোটের প্রাক্তন সিপিএম উপপ্রধান ডাবলু আনসারির বিরুদ্ধে একের পর এক সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠত। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পরে তোলাবাজি ও গুন্ডামির অভিযোগ উঠতে থাকে ডাবলুরই একদা সহচর, বর্তমানে তৃণমূলের আশ্রয়ে থাকা আজাদ মুন্সীর বিরুদ্ধে।
২০০৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে মঙ্গলকোট ছেড়ে বীরভূমের কিছু তৃণমূল নেতার আশ্রয়ে চলে যায় আজাদ। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের পরে দলবল নিয়ে সে মঙ্গলকোটে ফেরে। নানুরে খুন ও একাধিক সংঘর্ষ ছাড়াও মঙ্গলকোটে পুলিশকে আক্রমণ, বাড়িতে আগুন লাগানো, বোমাবাজি-সহ বেশ কিছু ঘটনায় আজাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। সম্প্রতি বর্ধমানের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীরের কাছে জেলার ইটভাটা মালিকেরা অভিযোগ করেছিলেন, আজাদ ও তার দলবলের তোলাবাজির দৌরাত্ম্যে মঙ্গলকোটে কাজ চালাতে পারছেন না তাঁরা। পুলিশের দাবি, এর পরেই ধরা হয় আজাদের তিন শাগরেদকে। পুলিশ সুপার আশ্বাস দিলেও ধরা পড়েনি আজাদ। গোপন ডেরা থেকে আজাদ মুন্সী ও তাঁর ভাই অঞ্জন ফোন করে তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁদের দাবি, “আমরা তো এলাকাতেই নেই। তা সত্ত্বেও গোষ্ঠী রাজনীতি করার জন্য সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমাদের নামে অভিযোগ করা হচ্ছে।” এঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, লাখুরিয়া অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি কচন শেখ। তাঁর কথায়, “মঙ্গলকোটের ত্রাস ডাবলু আনসারিকে গ্রামে ফেরানোর জন্যই এই মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।” অন্য দিকে, সিপিএমের ভাগীরথী-অজয় জোনাল কমিটির সম্পাদক দুর্যোধন সর এই সব অভিযোগকে হাস্যকর বলেছেন। তাঁর কথায়, “গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এড়াতে আমাদের নামে অভিযোগ তোলা হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.