পরিচালন সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র হয়ে উঠল অন্ডালের খান্দরা হাইস্কুল চত্বর। সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে জখম হল পুলিশও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়। দুর্গাপুরের অতিরিক্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (এডিসিপি) শুভঙ্কর সিংহ সরকার জানান, পাঁচ পুলিশকর্মী-সহ অন্তত ২০ জন জখম
|
ইটের ঘায়ে জখম। |
হন। দু’দলই পরস্পরের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ করে। পাঁচ জনকে আটক করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রবিবার সকাল থেকে নির্বিঘ্নেই চলছিল ওই স্কুলের পরিচালন সমিতির অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচন। স্কুলের ঠিক বাইরে কাছাকাছি দু’টি বুথ গড়ে বসেছিলেন সিপিএম এবং তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। ছিলেন জনা পনেরো পুলিশকর্মী। দুপুরে ওই দুই বুথ থেকে ‘পারস্পরিক কটূক্তি’র জেরে বচসা বাধে। পৌনে ২টো নাগাদ লাঠিসোটা নিয়ে পরস্পরের উপরে ‘চড়াও’ হন দু’দলের লোকজন। প্রাথমিক ভাবে দু’পক্ষকে সেখান থেকে হটিয়ে দেয় পুলিশ। কিন্তু তার পরেই দু’দিক থেকে উড়ে আসতে থাকে ইট-পাটকেল। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, গোটা দু’য়েক বোমাও ফাটে। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে ইটের আঘাতে মাথা ফেটে যায় অন্ডাল থানার সেকেন্ড অফিসার মৃন্ময় হাইতের। বাঁ পায়ে ইট লাগে অন্ডালের সার্কেল ইনস্পেক্টর সুমোহন রায়চৌধুরীর। জখম হন আরও তিন পুলিশকর্মী। তৃণমূলের দু’জন এবং এক সিপিএম কর্মীর মাথা ফেটে যায় বলে জানায় পুলিশ। খবর পেয়ে পুলিশ বাহিনী নিয়ে স্কুলে যান এডিসিপি শুভঙ্করবাবু। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠি চালায় পুলিশ। ফাটানো হয় তিনটি কাঁদানে গ্যাসের শেল। জখম পুলিশকর্মীদের খান্দরা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হয়। গণ্ডগোল শুরু হতেই স্কুলে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বিকেল ৩টে নাগাদ তা ফের শুরু হয়। |
সিপিএমের দামোদর-অজয় জোনাল কমিটির সম্পাদক তথা পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “পুলিশের উপস্থিতিতেই দেদার ছাপ্পা ভোট দিচ্ছিল তৃণমূল। দুপুরে হঠাৎই ওদের বেশ কিছু লোকজন লাঠি, রড, ইট নিয়ে আমাদের কর্মীদের উপরে চড়াও হয়। হামলায় সুদীপ্ত সরকার নামে আমাদের এক কর্মীর মাথা ফেটে যায়।” তিনি জানান, তাঁদের জনা দশেক কর্মী-সমর্থক জখম হন। ছ’জনকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠাতে হয়।
তৃণমূলের অন্ডাল ব্লক সভাপতি কাঞ্চন মিত্রের পাল্টা অভিযোগ, “শান্তিপূর্ণ ভাবেই ভোট চলছিল। সিপিএম-আশ্রিত কয়েকজন দুষ্কৃতী আচমকা আমাদের বুথে হামলা চালায়। বোমাবাজিও করে। আমাদের কর্মী বিধান বাউরির মাথা ফেটে যায়। খান্দরা পঞ্চায়েত সদস্য উত্তম হাজরা ইটের ঘায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন।” কাঞ্চনবাবুর দাবি, “এত দিন এই স্কুলে ভোট হত না। পরিচালন সমিতি দখল করে রেখেছিল সিপিএম। এ বার হেরে যাবে বুঝেই ঝামেলা পাকিয়েছে ওরা। আমাদের ১০ জনকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠাতে হয়েছে।” তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) কার্যকরী সভাপতি তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা পুলিশের কাছে এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছি।” বিধায়ক গৌরাঙ্গবাবুর ক্ষোভ, “আমাদের লোকজনের উপরে হামলা হল। অথচ, পুলিশ আমাদের স্থানীয় নেতা রবীন মুখোপাধ্যায়, মুক্তি বক্সীকে মারতে মারতে গাড়িতে তুলে নিয়ে গেল। আরও তিন কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। কতটা নিরপেক্ষ ভাবে তদন্ত হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।” দুর্গাপুরের এডিসিপি বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ জনকে আটক করা হয়েছে। তদন্তে পক্ষপাতের প্রশ্নই ওঠে না।” |