উত্তরের চিঠি
হারাচ্ছে পরিযায়ী
ছোটবেলার কথা খুব মনে পড়ে। বড়দিনের ছুটিতে আমাদের প্রধান আকর্ষণ ছিল সান্টাক্লজ, ক্যাথলিনের কেক আর চিড়িয়াখানা। পুজোর ছুটি ফুরোতেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকতাম, স্কুলে কবে ক্রিসমাসের ছুটি পড়বে। রীতিমত পরিকল্পনা করে বাবা, মা, ভাই, বোনেরা মিলে চিড়িয়াখানায় যেতাম। শুধু বাঘ-ভাল্লুক-সিংহ-হাতি কিংবা ময়ূর নয়, আমাদের কাছে চিড়িয়াখানার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল একঝাঁক বিদেশি অতিথি সুদূর সাইবেরিয়া কিংবা চিন থেকে উড়ে আসা পরিযায়ী পাখি (মাইগ্রেটরি বার্ডস্)। বলাই বাহুল্য, এই সকল পাখির মধ্যে ছিল রোজ-ব্রেসটেড, গ্রসবিক, ব্ল্যাক-থ্রোটেড, ব্লু ওয়ার্বলার, বার্ন সোয়ালোর, রুডি শেলডাক, শোভেলার, পিনটেইল, উইজিয়ন, কমন টেইল, লেসার হুইসলিং টিল, মালার্ড, কুট, অস্ট্র। শীত পড়তে না পড়তেই সাত-সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে ঝিল কিংবা জলাভূমিতে খুশির বার্তা বয়ে আনত এই অতিথিরা। আজও যে এরা আসে না তা নয়। কিন্তু ক্রমশ কমছে এদের সংখ্যা। আজ থেকে দশ-পনেরো বছর আগেও ৬০-৬৩টি প্রজাতির প্রায় ১.২০ লক্ষ পরিযায়ী পাখি ভিড় জমাত পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জলাভূমিতে। বিশেষ করে, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে। ২০০৪-এর এক সমীক্ষা বলছে এই পরিযায়ী পাখিদের সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গিয়েছে। হয়তো বর্তমানে এই সংখ্যাটা আরও কমেছে। কে জানে আগামী প্রজন্ম বা তাদের উত্তরসূরিরা হয়তো চিড়িয়াখানা কিংবা জলাশয়ে পরিযায়ী পখিদের আর দেখতে পাবে কি না! ইন্টারনেটের মায়াবি পর্দা কিংবা এনসাইক্লোপিডিয়ার রঙিন পাতায় প্রত্যক্ষ করে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাবে।
দলছুট বিপন্ন পরিযায়ী। ছবি: তপতী গায়েন
কিন্তু প্রশ্ন হল কেন দিন দিন পরিযায়ী পাখিদের সংখ্যা কমছে? কোনও সন্দেহ নেই নগরায়ণ আর পরিবেশ দূষণ এর জন্য মূলত দায়ী। শুধু তাই নয়, বিশেষজ্ঞদের ধারণা, জলবায়ুর তারতম্যও এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। ২০০৬-এ ডব্লিউ ডব্লিউ এফ-এর (বার্ড স্পিসিস অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ) এক সমীক্ষায় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বহু পাখির সংখ্যা প্রায় ৯০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আক্রান্ত হচ্ছে পরিযায়ী পাখিরা। প্রাক শিল্প যুগের তুলনায় তাপমাত্রা যদি আর দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পায়, তা হলে ইউরোপের ৩৮ শতাংশ ও উত্তর-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার ৭২ শতাংশ পাখি চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাবে। ইতিমধ্যেই গ্রেট লেক অঞ্চলের ৫৩ শতাংশ নিয়োট্রপিক্যাল পরিযায়ী পাখি লুপ্ত হয়ে গিয়েছে। শুধু পরিযায়ীরা নয়, জলবায়ুর পরিবর্তনে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে গ্যালাপাগোস পেঙ্গুইন, টাফটেড পাফিন, ইউরোপিয়ান পাইড, ফ্লাই ক্যাচার, ক্যালিফোর্নিয়ার রুফস ক্রাউনড স্প্যারো, রেনটিট, স্পটেড টাওহি ও ক্যালিফোর্নিয়া টাওহি। কিন্তু ভারতের চিত্র কী রকম? সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট-এর সমীক্ষায় জানা যায়, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জলাভূমিতে ২৫ বছর আগে যেখানে ২৭১ রকম পাখি দেখা যেত এখন চোখে পড়ে ১৬২ প্রজাতির পাখি। গবেষণা করে দেখা গিয়েছে পরিযায়ী প্রজাতির অস্তিত্ব রক্ষা ও প্রজনন ক্ষমতার উপর তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের প্রভাব রয়েছে। ৩৮.৪৬% পাখি তাপমাত্রা ও ২০.৫১% পাখি বৃষ্টিপাত দ্বারা প্রভাবিত। সি এম এস তালিকাভুক্ত ৪২.৩৪% পরিযায়ী পাখি জলস্তর কমে যাওয়ার কারণে বিপন্ন হবে। ২৮% খরার হার বৃদ্ধির কারণে হারিয়ে যাবে।
সুতরাং এখনই প্রয়োজন পাখিদের সম্পর্কে নিয়মিত ডেটাবেস চর্চার মাধ্যমে জলবায়ুর তারতম্যের ফলে এদের ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে ঠেকবে সে বিষয়ে গবেষণা ও ব্যবস্থা গ্রহণ।
এই বিভাগে চিঠি পাঠান সম্পূর্ণ নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করে।
‘উত্তরের চিঠি’
এ বি পি প্রাঃ লিঃ,
১৩৬/৮৯ চার্চ রোড,
শিলিগুড়ি ৭৩৪৪০১



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.