এনআরএস

রোগীর বাড়ির অভিযোগে
দুর্ভোগের সেই চেনা ছবি
রকারি হাসপাতালে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ আকছার ওঠে। কিন্তু হাসপাতালে ঢোকার মুহূর্ত থেকে ছুটি পেয়ে বেরোনো পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে কী ভাবে হয়রান হতে হয় রোগী বা তাঁর পরিজনেদের, এ বার অভিযোগের আকারে আগাগোড়া সেই বৃত্তান্তই জানালেন এক রোগীর আত্মীয়। ঘটনাস্থল: নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। সব অভিযোগই স্বীকার করে নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্যকর্তারাও মনে করছেন, পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও বেহাল কর্মসংস্কৃতি কী ভাবে সব নষ্ট করতে পারে, এটা তারই এক প্রকট নমুনা।
নীলিমা দাস (নাম পরিবর্তিত) নামে ক্যানসারে আক্রান্ত এক বৃদ্ধা রেডিওথেরাপির জন্য এনআরএসে গিয়েছিলেন। সেখানে রেডিওথেরাপির ইন্ডোর বিভাগ এখনও চালু না হওয়ায় প্রতি দিন এসে রেডিয়েশন নিয়ে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় তাঁকে। কিন্তু রেডিয়েশন শুরুর আগেই বৃদ্ধার কোমরের হাড় ভেঙে যায়। ওই অবস্থায় প্রতি দিন অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে তাঁকে হাসপাতালে আনা সম্ভব নয় বলে বাড়ির লোকেরা স্ত্রী-রোগ বিভাগে ভর্তির চেষ্টা করতে থাকেন। কয়েক সপ্তাহ ঘোরাঘুরির পরে কোনওমতে সেখানে একটি শয্যা জোগাড় করে প্রতি দিন নীলিমাদেবীকে রেডিওথেরাপি বিভাগে রেডিয়েশন দিতে নিয়ে যাওয়া স্থির হয়।
নীলিমাদেবীর ছেলে মাধব দাস অভিযোগ করেন, “মায়ের সঙ্গে বাড়ির এক জনকে হাসপাতালে রাখার ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, বাধা এল আয়াদের কাছ থেকে। তাঁরা এককাট্টা হয়ে বললেন, আয়া না রাখলে রোগী সমস্যায় পড়তে পারেন। আমরা তাই এক-একটি শিফটে ১০০ টাকা, অর্থাৎ মোট ২০০ টাকার বিনিময়ে দু’জন আয়ার ব্যবস্থা করি। কিন্তু তার পরে দেখা যায়, এক-এক জন আয়া প্রায় ১০-১৫ জনের দেখভাল করছেন।”
তাঁর মা রাতে বেডপ্যান দিতে বললে বা জল খেতে চাইলে সেই সহায়তাটুকুও আয়ারা করেননি বলে মাধববাবুর অভিযোগ। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, “ট্রলি ঠেলার জন্য চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের ডাকলে তাঁরা আলাদা টাকা দাবি করতেন। আয়ারাও জানিয়ে দেন, তাঁরা ট্রলি ঠেলবেন না। তাই রোজ ট্রলিতে শুইয়ে রেডিওথেরাপি বিভাগে নিয়ে যাওয়ার জন্য অন্য দু’জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীকে ২০ টাকা করে মোট ৪০ টাকা ঘুষ দিতে হত।”
এনআরএসের সুপার স্বপন সাঁতরা বলেন, “চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। সেই নিয়ে আমরা নাজেহাল হয়ে যাচ্ছি। বাড়তি কাজ করতে হলেই ওই কর্মীরা টাকা চাইছেন। কোনও রকম হুঁশিয়ারিতেই কাজ হচ্ছে না।”
আর আয়াদের দাপট? স্বপনবাবু বলেন, “নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে কয়েক জন আয়ার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের হাসপাতাল চত্বরে ঢুকতেই নিষেধ করা হয়েছে। আরও কয়েক জনকে ডেকে সাবধান করা হয়েছে।”
মাধববাবুর অভিযোগ, ওয়ার্ড থেকে মূত্রের নমুনা একটি টিউবে ভরে তাঁর হাতে ধরিয়ে কর্তব্যরত নার্স বলেছিলেন, ‘প্যাথলজি বিভাগে পৌঁছে দিয়ে আসুন।’ তিনি বলেন, “জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আমি কেন নিয়ে যাব? ওঁরা বলেছিলেন, নিয়ে না গেলে নমুনা ওখানেই পড়ে থাকবে। টিউবের মুখে তুলো গোঁজা অবস্থায় আমি নমুনাটি সংশ্লিষ্ট বিভাগে নিয়ে যাওয়ার পরে সেখানকার কর্মীরা বললেন, ‘তুলোর গায়ে মূত্রের নমুনাটি ছলকে পড়েছে। ওটা আর পরীক্ষা করা যাবে না।’ আমি আবার টিউব নিয়ে ফিরে এলাম। ফেরার পরে নার্সদের আর এক প্রস্ত ধমক এবং পরীক্ষা না করানোর হুমকি শুনতে হল।”
রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “রোগী বা তাঁর পরিবারের লোকেরা আসলে জানেন না, কোনটা তাঁদের করার কথা আর কোনটা নয়। এই না জানার সুযোগটাই পুরোমাত্রায় নেন হাসপাতালের কিছু কর্মী। পরীক্ষার নমুনা রোগীর বাড়ির লোকের নিয়ে যাওয়ার কথাই নয়।” একই কথা বলেছেন সুপারও। রোগীর পরিজনেরা কী করবেন, কী করবেন না জানাতে লিখিত বিজ্ঞপ্তি দেওয়া যায় কি না, সে কথাও ভাবছেন তিনি।
মাধববাবু বলেন, “প্রতি দিন দালালদের উৎপাতও সহ্য করতে হত। মায়ের কোমরের হাড় ভেঙেছে জানার পরেই দালালেরা জানতে চাইত, স্টিলের প্লেট লাগবে কি না। লাগলে তারা ব্যবস্থা করে দেবে। লাগবে না জানার পরে তাদের দুর্ব্যবহারও সইতে হত।” সুপার অবশ্য দালালদের উৎপাতের কথাও মেনে নিয়ে বলেন, “ইউরোলজি এবং অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে দালালের উৎপাত বেশি। হাতনাতে ধরাও হয়েছে। ওদের ঠেকাতে নিয়মিত অভিযান চলছে।” নীলিমাদেবীর পরিবারের অভিযোগ, পরিষেবা নিতে গিয়ে প্রতি মুহূর্তে তাঁদের মনে হত, এটা তাঁদের প্রাপ্য নয়, তাঁরা কারও দয়া নিচ্ছেন। এই হয়রানি কবে বন্ধ হবে, প্রশ্ন তাঁদের।
এমন অভিযোগ যে মাধববাবুই প্রথম করলেন, তা নয়। রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে এটাই চেনা ছবি। তা হলে সবাই সব জানা সত্ত্বেও পরিস্থিতি বদলাচ্ছে না কেন? স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার মন্তব্য, “রোগটা পুরনো। তাই সারতে সময় লাগবেই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.