মাওবাদী আতঙ্কের খুনটাঁড় গ্রাম থেকেই পদযাত্রা করল তৃণমূল
মাওবাদী আতঙ্কে বলরামপুরের ঘাটবেড়া-কেরোয়া পঞ্চায়েত এলাকায় রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ ছিল দীর্ঘ কাল। রবিবার পদযাত্রার মধ্যে দিয়ে সেখানে রাজনৈতিক কর্মসূচির সূচনা করল তৃণমূল। পদযাত্রার নেতৃত্বে ছিলেন যুব তৃণমূলের সভাপতি তথা সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। ঘটনাচক্রে, কিষেণজিকে ‘হত্যা’র প্রতিবাদে মাওবাদীদের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার ভারত বন্ধ এ দিন থেকেই শুরু হয়েছে। যদিও জঙ্গলমহলে বন্ধের প্রভাব বিশেষ পড়েনি।
সম্প্রতি এই অঞ্চলের ঘাটবেড়া গ্রামে মাওবাদীরা খুন করেছে তৃণমূল কর্মী জিতু সিংহকে। তার প্রতিবাদে বলরামপুরে জনসভা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাওবাদীদের জন-বিচ্ছিন্ন করার ডাক দিয়েছিলেন। জোর দিয়েছিলেন মাওবাদী উপদ্রুত এলাকায় রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণের উপরে। ওই সভার কিছু দিন পরেই ঘাটবেড়া লাগোয়া খুনটাঁড় গ্রামে মাওবাদীরা গুলি করে মারে রাজেন সিংহ সর্দার নামে এক তৃণমূল কর্মীর বৃদ্ধ বাবা ও ভাইকে।
খুনটাঁড় গ্রাম থেকে ঘাটবেড়া পর্যন্ত শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে
তৃণমূলের পদযাত্রা। ছবি: সুজিত মাহাতো
কলকাতায় গাঁধী মূর্তির পাদদেশে তাঁদের মরদেহ নিয়ে আসে তৃণমূল। সেখানে নিহতদের শ্রদ্ধা জানান স্বয়ং মমতা। পরে তাঁর নির্দেশে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায় এবং শুভেন্দু নিহতদের দেহ নিয়ে খুনটাঁড়ে যান। অযোধ্যা পাহাড়ের পাদদেশের সেই খুনটাঁড় গ্রাম থেকেই এ দিন পদযাত্রা করেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। শুধু তাই নয়, বাবা-ছেলেকে খুন করে মাওবাদীরা যে মাঠে দেহ ফেলে রেখে গিয়েছিল, সেই মাঠ থেকেই পদযাত্রার সূচনা করেন শুভেন্দু। যাত্রা শুরুর আগে তিনি বলেন, “আমরা শান্তির পক্ষে ও হিংসার বিরুদ্ধে। মুখ্যমন্ত্রী উন্নয়ন চান। চান এই এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান হোক। এখানে স্বাভাবিক জীবন ফিরুক। সেই লক্ষ্যেই এই কর্মসূচি।”
খুনটাঁড়, ঘাটবেড়া, মণ্ডল-কেরোয়া, মাহাতো-কেরোয়া, কুমারডিপাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা আঁকাবাঁকা এই পথে পদযাত্রায় সামিল হন হাজার পাঁচেক তৃণমূল নেতা-কর্মী-সমর্থক। ঘাটবেড়া-পঞ্চায়েত বা বলরামপুর ব্লকের পাশাপাশি পুরুলিয়ার অন্য ব্লকের কর্মীরাও এসেছিলেন। ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা বলরামপুরের বিধায়ক শান্তিরাম মাহাতো। রাস্তার দু’ধারে গাছে গাছে তৃণমূলের দলীয় পতাকা লাগানো হয়েছিল। গোটা পথে যৌথ বাহিনীর নজরদারি ছিল চোখে পড়ার মতো। মিছিলের সামনে-পিছনেও ছিলেন আগ্নেয়াস্ত্র হাতে জওয়ানেরা। দলনেত্রী মাওবাদীদের জন-বিচ্ছিন্ন করার যে ডাক দিয়েছেন, তারই প্রতিধ্বনি এ দিন শোনা গিয়েছে শুভেন্দুর মুখেও। তিনি বলেছেন, “যাঁরা পাহাড়ে-জঙ্গলে লুকিয়ে রয়েছেন, তাঁদের বলছি সমাজের মূলস্রোতে ফিরে আসুন। বন্দুক শেষ কথা বলে না। মানুষ উন্নয়ন চান। মুখ্যমন্ত্রীও সে কথাই বলছেন।” এই প্রসঙ্গে জাগরী বাস্কের উদাহরণ টেনেছেন শুভেন্দু।
পর পর তিনটি খুনের পরে এলাকায় চাপা আতঙ্ক এখনও আছে। ঘাটবেড়ার বিজয়কুমার সিংহ, রাধেশ্যাম মণ্ডল বা খুনটাঁড়ের যুগল হাঁসদারা বসেছিলেন ঘরের দাওয়ায়। তাঁরা সকলেই জানিয়েছেন, ওই এলাকায় দীর্ঘ দিন পরে কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি হল। সদ্য বাবা ও ভাইকে হারানো রাজেনের কথায়, “আতঙ্ক রাতারাতি কাটবে না। তবে আগে ওরা (মাওবাদী) দুপুরেও গ্রামে ঢুকত। আর এখন এখানে রাজনৈতিক কর্মসূচি হচ্ছে। একটা বদল তো হচ্ছেই! প্রশাসনকেও পাশে দাঁড়াতে হবে। এখানে একটা পুলিশ ক্যাম্প করা দরকার।”
মাওবাদীদের সম্পর্কে ‘ভীরু, কাপুরুষ’ বলে সম্বোধন করে বা তারা ‘পিছন থেকে মেরে পালিয়ে যায়’ জানিয়ে শুভেন্দু বলেন, “সাধারণ মানুষকে অস্ত্র হাতে ভয় দেখাবে, খুন করবে, তা হয় না! ওরা বন্ধ ডেকেছিল। তবু হাজার হাজার মানুষ পদযাত্রায় ওই গ্রাম থেকেই যোগ দিয়েছেন।” আজ, সোমবার বন্ধের দ্বিতীয় দিনে ঝাড়গ্রামের জামবনি থানার ভাতুড়ে ‘শান্তি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে’ সভা করবেন শুভেন্দু। ৯ তারিখ বাঘমুণ্ডিতে দলীয় কর্মসূচিতে যাবেন তিনি।
এ দিন বন্ধে অবশ্য বলরামপুর, ঝাড়গ্রাম-সহ জঙ্গলমহলের বড় অংশেই জনজীবন কার্যত স্বাভাবিক ছিল। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্তের প্রতিক্রিয়া, “এটা অত্যন্ত ভাল লক্ষণ।” পুরুলিয়ার আড়শা, কোটশিলা, বাঘমুণ্ডি বা ঝালদা, বাঁকুড়ার বারিকুল, রানিবাঁধ ও সারেঙ্গা এবং ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি ও লালগড়ের মতো হাতে গোনা কয়েকটি এলাকায় বন্ধের কিছুটা প্রভাব পড়েছে। এ সবের মধ্যেই ‘সাজানো সংঘর্ষে’ কিষেণজির মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছেন ছত্রধর মাহাতো। ‘সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন বিরোধী গণতান্ত্রিক মঞ্চ’-এর প্যাডে জেলবন্দি ছাত্রধরের সই করা বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, ‘কিষেণজিকে ধরে বর্বর অত্যাচার চালিয়ে সাজানো সংঘর্ষের নামে ঠান্ডা মাথায় খুন’ করা হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.