বেপরোয়া যান চলাচলের বলি হলেন এক বৃদ্ধা। শনিবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার বাগনানের বাইনানের কাছে বাইনান-গাইঘাটা রাস্তায়। মৃতের নাম লতিকা ভট্টাচার্য (৬০)। বাড়ি উদয়নারায়ণপুরের দেবীপুরে। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও আট জন যাত্রী। তাঁদের প্রথমে বাগনান গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরিস্থিতি গুরুতর হওয়ায় পরে তিন জন মহিলাকে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে লতিকাদেবী আরও তিন মহিলার সঙ্গে বাইনানে একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন। শনিবার বিকেল ৪টে নাগাদ তাঁরা চার জন বাইনান ষষ্টীতলা থেকে নারিটগামী একটি ট্রেকারে ওঠেন। ট্রেকারটি ভিড়ে ঠাসা থাকায় লতিকাদেবীরা ভিতরে বসার জায়গা পাননি। ট্রেকারের পাদানিতে দাঁড়িয়েই যাচ্ছিলেন তাঁরা। কিছুটা যাওয়ার পরে ট্রেকারটি একটি অটোরিকশাকে ওভারটেক করতে গেলে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। ট্রেকারটি রাস্তার ধারে একটি গাছে ধাক্কা মারলে গাছের সঙ্গে কার্যত চেপ্টে যান লতিকাদেবী। আট জন আরোহী আহত হন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় লতিকাদেবীর।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বাইনান-গাইঘাটা রাস্তায় এই ধরনের দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটে চলেছে। প্রাণ যাচ্ছে নিরীহ মানুষের। সম্প্রতি প্রায় তিন কোটি টাকা খরচ রাস্তাটি সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু এর ফলে যাত্রীদের কোনও উপকার হয়নি বলে অভিযোগ। প্রায় ১৮ ফুট চওড়া এই ঝাঁ চকচকে রাস্তায় যেমন বেআইনি অটো-রিকশার দাপট তেমনই বেআইনি ভাবে বহনক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে ট্রেকার।
বাস বা ছোট গাড়ি না-থাকায় বাধ্য হয়েই অটোরিকশা এবং ট্রেকারে বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে যাতায়াত করতে হয় বলে নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ। অতিরিক্ত যাত্রীবহন করা ছাড়াও অটোরিকশা ও ট্রেকারগুলির রাস্তায় পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতার জেরে সাধারণ মানুষকে প্রাম হাতে নয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। দুর্ঘটনাও লেগে রয়েছে।
শনিবারের দুর্ঘটনাটি এই নৈরাজ্যেরই ফল বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। তাঁদের বক্তব্য, রাস্তাটি সংস্কার হয়েছে। এখন অনায়াসে বাস চলাচল করতে পারে। বাসে চড়ে মানুষ তুলনায় নিরাপদে যাতায়াত করতে পারেন। কিন্তু বার বার জেলা প্রশাসনের কাছে দাবি জানানো সত্ত্বেও এই রাস্তায় বাস চালানো হচ্ছে না বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। পুলিশও বেআইনি অটোরিকশা এবং ট্রেকারগুলির বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয় না বলে বাসিন্দারা অভিযোগ করেন।
উল্লেখ্য, ট্রেকারের ছাদে যে সব যাত্রী বসবেন বা যাঁরা পাদানিতে দাঁড়িয়ে যাবেন সেইসব ট্রেকার চালকের বিরুদ্ধে যেমন ব্যবস্থা নেওয়া হবে, একইভাবে যাত্রীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল। কয়েকদিন ধরে অভিযানও চালিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু কিছুদিন পর অভিযান পুলিশ বন্ধ করে দেয়।
জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, যাত্রীদের তরফ থেকেই বাধা আসে। ফলে পুলিশ যাত্রীদের বিরুদ্ধে অভিযান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। জেলা পুলিশের ওই কর্তা আরও জানান, যাত্রীরা জানিয়েছেন, যথেষ্ট সংখ্যায় বিকল্প যানবাহন না থাকায় তাঁরা বাধ্য হয়েই ট্রেকারের ছাদে বা পাদানিতে দাঁড়িয়ে যাতায়াত করেন। তবে যাত্রীদের বিরুদ্ধে না নেওয়া হলেও অতিরিক্ত যাত্রীবহনকারী ট্রেকারগুলিকে ধরতে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। একইসঙ্গে বেআইনি অটো রিকশার বিরুদ্ধেও অভিযান আরও জোরদার করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। |