অবশেষে স্বস্তি। শেয়ার বাজার উঠেছে। উঠেছে টাকার দরও। সপ্তাহের শেষ তিন দিনে একনাগাড়ে বেড়ে সেনসেক্স উঠেছে ৮৩৮ পয়েন্ট। সাম্প্রতিক কালে এটি একটি বড় উত্থান। অন্য দিকে ডলারের তুলনায় টাকার দর বেড়ে হয়েছে ৫১.২১ টাকা। মূল্যবৃদ্ধিও খানিকটা যেন নতমুখী। সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে কিছুটা ভাল লাগার ভাব ফিরে এসেছে। সবাই চাইছেন, এই ভাবটা যেন বজায় থাকে।
কিছু দিন হল, বাজারকে তুলছে-ফেলছে ইউরোপীয় সঙ্কট। এই সঙ্কট কিছুটা কাটার আশা দেখা দেওয়ায় বুধবার থেকেই বিশ্ব বাজার তেতে ওঠে। এর প্রভাব পড়ে ভারতীয় বাজারেও। এ দেশে নতুন করে লগ্নির পথে ফিরতে দেখা যায় বিদেশি লগ্নি-সংস্থাগুলিকে। এটি একটি ভাল লক্ষণ।
জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির হার নেমে এসেছে ৬.৯ শতাংশে। সবাই মনে করছেন, এ বার সময় এসেছে বাজারে নগদের জোগান বাড়ানোর। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উচিত তাদের কাছে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের নগদ জমার অনুপাত (সিআরআর) ১০০ বেসিস পয়েন্ট কমানো। তা হলে ৬০,০০০ কোটি টাকার জোগান বাড়বে বাজারে। নগদ টাকার অভাব খানিকটা হলেও দূর হবে। সুদ কমার আশা অবশ্য এখনই করা হচ্ছে না। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যদি সিআরআর কমানোর পথে হাঁটে, তার একটি তাৎক্ষণিক সদর্থক প্রভাব পড়বে বাজারে। এই আশাও বাজারকে চাঙ্গা করতে সাহায্য করেছে। এর পর সুদ কমার ইঙ্গিত পেলে বাজার আরও তেতে উঠতে পারে। শিল্পে মন্থরতা দূর করতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক হয়তো কিছু পদক্ষেপ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ডলারের তুলনায় টাকার বিনিময়মূল্য বাড়ার মূল কারণ তিনটি:
(এক) বন্ডে বিদেশি লগ্নির শর্ত শিথিল হওয়ায় এবং সুদের হার আকর্ষণীয় হওয়ায় বিদেশি লগ্নির হঠাৎ বৃদ্ধি, অর্থাৎ দেশে ডলারের আগমন। ১০ বছর মেয়াদি ভারতীয় বন্ডে এখন সুদের হার ৮.৭২ শতাংশ, যা বহু দেশের তুলনায় বেশি। সুদ এত আকর্ষণীয় হওয়ায় বন্ডে বিদেশি লগ্নি-প্রবাহ বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে, যা টাকার দাম বাড়াতে সাহায্য করবে।
(দুই) আকর্ষণীয় সুদের হার এবং ডলার- পাউন্ডের চড়া দাম অনাবাসী ভারতীয়দের উদ্বুদ্ধ করছে ভারতে বেশি করে টাকা পাঠাতে। এই পথে মোটা টাকা আসায় ডলারের মূল্যবৃদ্ধি কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। (তিন) বাজার সাময়িক তেতে ওঠায় ইক্যুইটিতেও নতুন করে আসছে বিদেশি লগ্নি। অর্থাৎ রফতানির পথে ততটা না হলেও অন্যান্য পথে দেশে ডলার-প্রবাহ বাড়ছে। ডলার-প্রতি টাকার দাম কমে হয়েছিল ৫২.৭৩ টাকা, যা সর্বকালীন রেকর্ড। দেশে ডলার-আগমন বেড়ে ওঠায় ডলারের দাম কিছুটা কমে শুক্রবার নেমে এসেছে ৫১.২১ টাকায়।
আর্থিক বছরের গোড়ায় জীবনবিমা নিগম ইক্যুইটিতে ৬০ হাজার কোটি টাকা লগ্নির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। অর্থনীতি কিছুটা শ্লথ হয়ে পড়ায় এই লগ্নির পরিমাণ কমিয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২০ হাজার কোটি টাকার শেয়ার গত ৮ মাসে কেনা হয়েছে। বাকি ২০ হাজার কোটি টাকা লগ্নি করা হবে আগামী চার মাসে। লগ্নির পরিমাণ কমলেও শেয়ারের দাম পড়ে যাওয়ায় ক্রীত শেয়ারের সংখ্যা হয়তো তেমন কমবে না। আশা করা যায়, এই লগ্নি বাজারকে শক্তি জুগিয়ে যাবে।
ভাল খবর আছে আয়করদাতাদের জন্যও। কিছু দিনের মধ্যেই হয়তো আমরা বাজারে দেখতে পাব করমুক্ত বন্ড। ২০১১-১২ আর্থিক বছরের বাজেটে এই বন্ডের কথা বলা হয়েছিল। যে-সব সংস্থা এই বন্ড ইস্যু করবে, তাদের মধ্যে থাকতে পারে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি (১০,০০০ কোটি টাকা), ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ফিনান্স কর্পোরেশন (১০,০০০ কোটি টাকা), হাডকো (৫,০০০ কোটি টাকা) এবং পাওয়ার ফিনান্স কর্পোরেশন (৫,০০০ কোটি টাকা)। এই সব বন্ডের সুদ হবে পুরোপুরি করমুক্ত। মেয়াদ ১০ এবং ১৫ বছর। থাকবে না কোনও লক-ইন মেয়াদ। শেয়ার বাজারে নথিবদ্ধ হবে বলে যখন খুশি বিক্রি করা যাবে। বন্ড পাওয়া যাবে ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্টে এবং সার্টিফিকেট আকারেও। তবে প্যান থাকা বাধ্যতামূলক। বন্ডগুলি হবে জামিনযুক্ত অর্থাৎ সুরক্ষিত। পিপিএফ অ্যাকাউন্টের পর এটি হবে আর একটি প্রকল্প, যেখানে সুদ হবে পুরোপুরি করমুক্ত। সুদের হার হতে পারে ৮.২৫ শতাংশের আশেপাশে। অর্থাৎ উঁচু হারের করদাতাদের কাছে এই বন্ড হবে অতি আকর্ষণীয়।
আইডিএফসি-র পর কর সাশ্রয়কারী পরিকাঠামো বন্ড বাজারে ছেড়েছে এল অ্যান্ড টি ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফিনান্স কোম্পানি। সুদের হার ৯ শতাংশ। ইস্যুটি খোলা থাকবে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই ধরনের বন্ডে ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত লগ্নি করছাড়ের যোগ্য হবে। বন্ডের সুদ অবশ্য করযোগ্য। |