দলীয় সমর্থকদের কাজে নেওয়ার দাবিতে এক ঠিকাদার সংস্থার মালিককে মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। ‘সেইল গ্রোথ ডিভিশন’-এর কুলটি কারখানায় নিযুক্ত ঠিকা সংস্থার মালিক প্রেম ঝা শনিবার সন্ধ্যায় পুলিশের কাছে এই অভিযোগ করেছেন। নিরাপত্তা চেয়ে ও কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার আবেদন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে চিঠিও লিখেছেন তিনি। পুলিশ তিন জন তৃণমূল নেতা-কর্মীকে আটক করে। পরে মুচলেকা লিখিয়ে, ব্যক্তিগত জামিনে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
চিত্তরঞ্জনের বাসিন্দা প্রেমবাবুর অভিযোগ, “কারখানায় কাজ নেওয়ার পর থেকে প্রায়ই এলাকার তৃণমূল নেতা পার্থ ঠাকুর ও তাঁর লোকজন দলীয় সমর্থকদের সেখানে নিয়োগ করার জন্য চাপ দিচ্ছেন। আমি জানিয়েছি, যখন কর্মীর প্রয়োজন হবে, তখন নেব। তবু আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন ওঁরা।” কুলটি থানায় দায়ের করা অভিযোগে তিনি জানিয়েছেন, শনিবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ তিনি কুলটির ক্লাব রোড ধরে ফিরছিলেন। হঠাৎ পার্থবাবুর নেতৃত্বে এক দল যুবক তাঁকে ঘিরে ‘মারধর’ শুরু করে। কিল, চড়, ঘুষি মেরে তারা পালিয়ে যায়। তার পরেই তিনি থানায় অভিযোগ করেন।
পুলিশ এই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে তৃণমূল নেতা পার্থ ঠাকুর ও তাঁর দুই সঙ্গীকে আটক করে। কুলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত আসানসোলের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশের উপস্থিতিতে অভিযুক্তেরা ওই ঠিকাদারের কাছে ক্ষমা চান। ‘ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর ঘটবে না’ জানিয়ে মুচলেকা দেওয়ার পরে ব্যক্তিগত জামিনে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।”
প্রেমবাবুর বক্তব্য, “কাজকর্ম দেখার জন্য রাতবিরেতে কারখানায় যাতায়াত করি। ফের এ ভাবে আক্রমণ হলে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হব।” রাজ্যের আইনমন্ত্রী তথা আসানসোলের (উত্তর) তৃণমূল বিধায়ক মলয় ঘটক বলেন, “আমরা শিল্পের পক্ষে। যারা এই ঘটনায় যুক্ত, তাদের অবশ্যই শাস্তি হবে। কোনও আপস করব না।”
ঠিকাদারকে মারধরের ঘটনায় উদ্বিগ্ন কারখানা কর্তৃপক্ষও। ‘সেইল গ্রোথ ডিভিশন’-এর জেনারেল ম্যানেজার কৃষ্ণকান্ত তিওয়ারি জানান, ওই কারখানায় কোনও স্থায়ী কর্মী নেই। ঠিকাদার সংস্থার মাধ্যমেই উৎপাদন চলছে। তিনি বলেন, “বছর পাঁচেক কারখানাটি বন্ধ থাকার পরে আউটসোসির্ংয়ের মাধ্যমে এখানে উৎপাদন শুরুর প্রক্রিয়ায় নামে ইস্পাত মন্ত্রক। কিন্তু এ ভাবে কর্মী নিয়োগের দাবিতে ঠিকাদারকে মারধর করা হলে কারখানাটি ফের বন্ধ হয়ে যেতে পারে!”
অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা পার্থ ঠাকুর অবশ্য মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁর দাবি, “ওই ঠিকাদার বাইরে থেকে কর্মী এনে কাজ করাচ্ছেন। আমরা বহু বার স্থানীয় বেকারদের কাজে নিতে বলেছি। কিন্তু তিনি কর্ণপাত করছেন না। তাই আমাদের কয়েক জন তাঁকে ঘিরে ধরেছিল। তবে কেউ মারধর করেনি।” |