লাল-নীল-সবুজ আলো আর কাচের উপরে রঙিন কারুকাজের মঞ্চ। ‘নো ওয়ান কিল্ড জেসিকা’ ছবিতে দাপুটে সাংবাদিকের চরিত্রে সেরা অভিনয়ের পুরস্কার নিতে মঞ্চে এলেন রানি মুখোপাধ্যায়। মেদ ঝরানো ছিপছিপে শরীর। গাঢ় রঙা শাড়িতে লাবণ্যময়ী। আবেগ কাঁপা গলায় বললেন, “আনন্দলোক পুরস্কার এমনই সম্মান যে, আনন্দে চোখে জল আসে। কলকাতার সঙ্গে বলিউডের আত্মীয়তা দীর্ঘদিনের। অজস্র ধন্যবাদ সেই দর্শকদের, যাঁদের ‘নো ওয়ান কিল্ড জেসিকা’ ভাল লেগেছে।” তাঁর পাশাপাশি ‘তন্নু ওয়েডস মন্নু’ ছবির জন্য স্টার পারফর্মার অফ দ্য ইয়ার এবং ‘জিন্দেগি না মিলেগি দুবারা’র জন্য সেরা পরিচালক হিসেবে পুরস্কৃত যথাক্রমে কঙ্গনা রানাওয়াত ও জোয়া আখতার। বলিউডি সিনেমায় বাঙালিদের অজস্র অবদানের কথা মনে রেখেই গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে “বোরোপ্লাস আনন্দলোক পুরস্কার ২০১১” অনুষ্ঠানে টলিউড তারকাদের পাশাপাশি হাজির হয়েছিলেন বলিউডের তিন কন্যে। |
...হৃদয় মাঝে আসি লাগে |
|
|
আনন্দতরঙ্গ: ‘বোরোপ্লাস আনন্দলোক পুরস্কার ২০১১’-র মঞ্চে নুসরত
জাহান ও দেব। বৃহস্পতিবার, সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে। |
|
বলিউডি গ্ল্যামারকে ছাপিয়ে যেতে অবশ্য একটুও দেরি হল না বাংলা ছবির নতুন জমানার। আবারও প্রমাণিত হল বাংলা ছবিতে দর্শক রুচি বদলের হাওয়া বইছে, বইবে। তাই ‘মনের মানুষ’ সাধারণ মানুষেরই পছন্দে হয়ে ওঠে সেরা ছবি। সেরা অভিনেতার পুরস্কারটিও চলে যায় নিজেকে নিয়ে অনেক পরীক্ষানিরীক্ষা, ভাঙা-গড়া করা নায়ক প্রসেনজিতের দিকেই। মঞ্চের দু’পাশে পর্দায় ভেসে ওঠে প্রসেনজিৎবেশী লালনের সংলাপ, “গুরু বিনা নৌকো নড়ে না, চড়ে না। সেই মাঝি হল আলেখ সাঁই। আমরা হগ্গলেই তাই মনের মানুষেরে খোঁজে।”
প্রমাণ হল এটাও, সেরা জাতের অভিনয় দেখলে পরিণত মনস্ক দর্শক বাণিজ্যিক ছবির নায়িকার সংজ্ঞা নস্যাৎ করে খুঁজে নিতে পারে অন্য ধরনের সেরা অভিনেত্রী। একশো দিন ধরে চলা ‘ইচ্ছে’র মতো হট্কে হিট ছবিতে চিরচেনা এক মায়ের চরিত্রের জন্য তাই পুরস্কৃত হন দীর্ঘদিনের নাট্যকর্মী সোহিনী সেনগুপ্ত। সেরা গান হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে অনুপম রায়ের ‘বাড়িয়ে দাও তোমার হাত’। এই ব্যতিক্রমী রুচির পথেই মঞ্চে এলেন বিচারকদের বিশেষ বিচারে সোমলতা আচার্য চৌধুরী। ‘রঞ্জনা আমি আর আসব না’ ছবির ‘জাগরণে যায় বিভাবরী’ গানটির জন্য পুরস্কার নিতে। দর্শকদের বাছাইয়ে সেরা সিরিয়াল ‘সুবর্ণলতা’, এবং সিরিয়ালের সেরা অভিনেত্রীও খোদ সুবর্ণলতা, অনন্যা চট্টোপাধ্যায়। ‘প্রলয় আসছে’ সিরিয়ালের জন্য পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় পেলেন সেরা অভিনেতার পুরস্কার।
মীর আর রিমঝিম মিত্রের সঞ্চালনায় এই সন্ধ্যার সব চেয়ে বড় চমক? পরপর চার বছর রাজ চক্রবর্তী পেলেন সেরা পরিচালকের পুরস্কার। এ বার ‘শত্রু’ ছবির জন্য। যে ছবিতে অ্যাকশন হিরো হিসেবে নায়ক জিতের সঙ্গে নতুন করে পরিচয় হয় দর্শকদের। পুরস্কার ঘোষণার সময়ে পর্দায় রাজের বিস্মিত মুখ। দীপঙ্কর দে-র কাছ থেকে ট্রফি নিয়ে খুশি সামলে বললেন, “আশাই করিনি এ বছরও প্রাইজ পাব। প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল খুব কঠিন। ছবিটা করারও কথা ছিল না। প্রযোজক অশোক ধানুকা আর জিতের কথাতেই করেছিলাম। সত্যি, এ ছবি করে অনেক কিছুই শিখলাম।” জনপ্রিয়তার নিরিখে রাজের সেরা পরিচালক হিসেবে জিতে যাওয়াই বলে দেয় শহুরে বাংলা ছবি দেখতে গাড়ির লাইন লম্বা পড়লেও মুদ্রার ওপিঠে রয়েছে আরও এক ধরনের দর্শক। মশলাদার বাণিজ্যিক ছবি যাঁদের কাছে বিনোদনের একমাত্র উৎস। শুধু ‘শত্রু’ই নয়। আনন্দলোক-এর বিচারে ‘পাগলু’ও পেয়েছে শ্রেষ্ঠ বিনোদনমূলক ছবির শিরোপা। পুরস্কার নিতে মঞ্চে ওঠেন সঙ্গীত পরিচালক জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, দেব এবং পরিচালক রাজীব কুমার। |
তারার আলো: ‘বোরোপ্লাস আনন্দলোক পুরস্কার ২০১১’ |
মঞ্চে রানি মুখোপাধ্যায়। |
দর্শকাসনে
কঙ্গনা রানাওয়াত। |
পুরস্কৃত পরিচালক
রাজ চক্রবর্তী। |
|
পুরস্কার হাতে সুরকার
জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। |
|
‘পাগলু’-র সঙ্গীত পরিচালনার জন্য পুরস্কৃত জিৎ গঙ্গোপাধ্যায় মঞ্চে দু’দুবার এসে মাতিয়ে দিলেন তাঁর জনপ্রিয় গানে। কখনও ‘পাগলু থোড়াসা করলে রোমান্স’ কখনও বা ‘কৃষ্ণ করলে লীলা’। সঙ্গে দেবের নাচে আরও মাতোয়ারা গোটা প্রেক্ষাগৃহ। রূপম ইসলাম মঞ্চে গাইলেন রাজ চক্রবর্তীর প্রযোজনায় সানন্দা টিভির আগামী সিরিয়াল ‘জোশ’ এর গান। সোনালি নেটের পোশাকে, নাচের বিভঙ্গে অনেকটা নজর কেড়ে গেলেন নবাগতা নায়িকা নুসরত জাহানও।
সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কৃত না হলেও নায়ক থেকে স্টার হয়ে ওঠা দেব-কে দেখে দর্শককুল তখন উল্লাসে ফেটে পড়েছে। নাচের তুফান তুলে তারকা এগিয়ে গেলেন মঞ্চ থেকে সোজা দর্শকদের মাঝখানে। ঘিরে ধরল কিশোরী-তরুণীদের দল।
একই শামিয়ানার নীচে তারকা আর দর্শককে এ ভাবে কাছাকাছি আনারই যে অন্য নাম ‘বোরোপ্লাস-আনন্দলোক পুরস্কার ২০১১’!
|
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়, সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক |