বেশি টাকার লোভ দেখিয়ে গাড়ি ভাড়া করেছিল কিছু দুষ্কৃতী। সুযোগ বুঝে চালকের গলায় তার পেঁচিয়ে খুন করে দুষ্কৃতীরা দেহ ফেলে দেয় জঙ্গলে। চম্পট দেয় গাড়ি নিয়ে। শেষ রক্ষা অবশ্য হয়নি। পুলিশের জালে ধরা পড়েছে এক জন। আরও দু’জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে পুলিশ।
গত বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) রাত থেকে গাড়ি-সহ নিখোঁজ ছিলেন পুরুলিয়ার মানবাজার থানার গোপালনগর গ্রামের বাসিন্দা নিমাই কর্মকার (৩৫)। শুক্রবার সকালে ঝাড়খণ্ডের বোকারো জেলার পিঁড়রাজোড়া থানা এলাকার জঙ্গল থেকে স্থানীয় পুলিশ উদ্ধার করে নিমাইবাবুর দেহ। ওই ঘটনায় বর্ধমানের কুলটি থানার রাধানগর গ্রামের যুবক ইমরান খানকে গ্রেফতার করেছে মানবাজার থানার পুলিশ।
বুধবার ইমরানকে পুরুলিয়া আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার সুনীলকুমার চৌধুরী বলেন, “জেরার মুখে ইমরান নিজের অপরাধের কথা স্বীকার করেছে। খুনের ঘটনায় জড়িত আরও দু’তিন জনের নাম মিলেছে। তাদের আটক করে জেরা করা হচ্ছে।”
মানবাজার থানার পুলিশ নিহত গাড়ি চালকের ছবি ও ধৃত ইমরানকে সঙ্গে নিয়ে মঙ্গলবার বোকারো যায়। পুলিশের দাবি, সেখানে ইমরান তাদের দেখায়, কোথায় নিমাইবাবুকে খুন করে জঙ্গলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। ঘটনাস্থলটি পিঁড়রাজোড়া গ্রামের অদূরেই। এর পরে পুলিশ বোকারো হাসপাতালে গিয়ে নিমাইবাবুর দেহের হদিস পায়। খবর পেয়ে বুধবার দুপুরে নিমাইবাবুর বাড়ির লোকজন ও কিছু পড়শি তাঁর দেহ আনতে যান বোকারো হাসপাতালে। পিঁজড়াজোড়া থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন নিহতের দাদা উদ্ধব কর্মকার। মানবাজার থানায় অপহরণ ও
|
নিহত নিমাই কর্মকার। |
গাড়ি চুরির অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, নিহত নিমাইবাবু পেশায় গাড়ি চালক। গত পাঁচ বছর ধরে গোপালনগর লাগোয়া জাগদাকোচা গ্রামের বাসিন্দা, প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক গোপাল মুর্মুর গাড়ি চালাচ্ছিলেন। ওই গাড়িটি বিভিন্ন জায়গায় ভাড়া খাটতে যেত। শুক্রবার রাতে নিমাইবাবুর স্ত্রী সীমা কর্মকার মানবাজার থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। সীমাদেবী পুলিশকে জানিয়েছিলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিমাইবাবু ফোনে তাঁকে বলেন, দুই যাত্রীকে কেন্দা থেকে মানবাজার পৌঁছে দিতে হবে। ওই দুই যাত্রী কলকাতাগামী রাতের বাস ধরবেন। কিন্তু শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত স্বামীর খোঁজ না মেলায় সীমাদেবী দুশ্চিন্তায় পড়েন। বারবার মোবাইলে ফোন করলেও সেটি ‘স্যুইচ অফ’ ছিল।
ঘটনার তদন্তে নেমে মানবাজার থানার পুলিশ জানতে পারে, গোপাল মুর্মুর গাড়িটি কুলটি থানা চত্বরে রাখা আছে। বৃহস্পতিবার রাতেই কুলটির আস্থা সিনেমাহলের কাছে স্থানীয় পুলিশের টহলদারি ভ্যান ওই গাড়িটিকে আটক করেছিল। গাড়ির ভিতরে থাকা তিন যুবকের কাছেই গাড়ির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বা লাইসেন্স না মেলায় পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। তিন জনের অসংলগ্ন কথায় পুলিশের সন্দেহ হয়। এ সবের মধ্যেই এক যুবক পুলিশের নাগাল এড়িয়ে পালিয়ে যায়। বাকি দু’জনকে গ্রেফতার করে কুলটি থানার পুলিশ। তাদেরই এক জন কুলটির রাধানগর গ্রামের বাসিন্দা ইমরান খান। ধৃত অন্য জন গুড্ডু আনসারিও স্থানীয় বাসিন্দা। পরের দিন আদালতে হাজির করানো হলে দু’জনেই জামিন পেয়ে যায়। খবর পেয়ে মানবাজার থানার পুলিশ গাড়িটি এবং ইমরান ও গুড্ডুকে আটক করে নিয়ে আসে।
পুলিশের দাবি, জেরার মুখে ইমরান জানিয়েছে, সে, গুড্ডু এবং মানবাজার থানার ন’ডিহা গ্রামের এক যুবক ওই গাড়িটি ছিনতাই করেছে। ন’ডিহার ওই যুবকের ডাকেই ইমরান আর গুড্ডু বৃহস্পতিবার দুপুরে মানবাজারে পৌঁছয়। বেশি টাকার লোভ দেখিয়ে নিমাইবাবুকে ওই তিন জন ধানবাদ পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে। ন’ডিহার ওই যুবক নিমাইবাবুর পূর্ব পরিচিত বলে পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে। জয়পুরের চাষ রোড পেরিয়ে বোকারো সীমান্তে ঢুকতেই নিমাইবাবুকে গলায় তার পেঁচিয়ে খুন করা হয়। তাঁর দেহ রাস্তার ধারে জঙ্গলে ফেলে দিয়ে পুরুলিয়ার আনাড়া হয়ে তিন জনে কুলটি চলে যায় বলে পুলিশের দাবি।
নিহত নিমাইবাবুর দাদা উদ্ধব কর্মকার এ দিন বলেন, “এমন যে হবে, ভাবতে পারিনি। গাড়িটা উদ্ধারের পরে আশা হয়েছিল, হয়তো ভাইকেও ফিরে পাব।” গোপালনগরের বাসিন্দা ত্রিলোচন চক্রবর্তীর কথায়, “নিমাই সাহসী ছেলে ছিল। যে কোনও বিপদে বা প্রয়োজনে ও গাড়ি নিতে বেরোত।” নিমাইবাবুর দুই মেয়ে। এক জন বছর সাতেকের। অন্যটি মাস ছয়েকের। স্বামীকে হারিয়ে কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না সীমাদেবী। |