ছেলে ফিরে এলে মমতা ক্ষমা করবেন, আশায় মা
ন্দ্রকোনার উত্তর ফুলচক গ্রামে অসীম মণ্ডল ওরফে আকাশের বৃদ্ধা মা শঙ্করীদেবীর যা আর্জি, খেজুরখন্না গ্রামে রঞ্জিত পালের মা অলকাদেবীর আকুতি তার থেকে আলাদা নয়।
বাঁকুড়ার রানিবাঁধ থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে রানিবাঁধ-বারিকুল রাস্তায় ছোট্ট গ্রাম খেজুরখেন্নায় মাটির দোতলা বাড়িটার সামনে বুধবার দুপুরে পৌঁছতেই এক প্রৌঢ়া ঘর থেকে বেরিয়ে এসে শুধোলেন, “কোথা থেকে এসেছেন?” পরিচয় বলতেই খানিক নীরবতা। পরে নিজে থেকেই বললেন অলকা পাল, “সেই ১৩ বছর আগের এক বর্ষায় ছেলেটা আমাদের কাউকে কিছু না জানিয়েই বাড়ি ছেড়েছিল। আর ফেরেনি।”
ছেলে রঞ্জিত পাল পুরুলিয়া-বাঁকুড়া ও ঝাড়খণ্ড পুলিশের কাছে অতি পরিচিত নাম। মাওবাদী স্কোয়াডে ‘প্রভাতজি’ নামে পরিচিত। আরও অনেক নাম আছে। বারিকুলে ‘রাহুল’, দলমা স্কোয়াডে থাকাকালীন ‘নীতীন’। মাওবাদীদের অযোধ্যা প্লাটুনের এই ‘লিডার’ সংগঠনের মিলিটারি কমিশনের সদস্যও। এ কে-৪৭ সর্বক্ষণের সঙ্গী। পুলিশের খাতা বলছে, ঝাড়খণ্ড ও এ রাজ্যে পঞ্চাশেরও বেশি নাশকতার ঘটনায় অভিযুক্ত এই মাওবাদী নেতা। পুলিশের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ মাওবাদীদের তালিকায় উপরের দিকেই তাঁর নাম। অযোধ্যা পাহাড়ে ঘাঁটি গেড়ে এই রঞ্জিত একের পর এক নাশকতা ঘটাচ্ছেন বলে পুলিশের দাবি। সম্প্রতি বলরামপুরে তৃণমূল কর্মীর বাবা ও ভাই থেকে শুরু করে ২০০৬ বারিকুল থানার ওসি প্রবাল সেনগুপ্ত হত্যা, ঘাটশিলায় ফুটবল ম্যাচের আসরে সাংসদ সুনীল মাহাতো খুন থেকে ঝালদার বাগবিন্ধ্যায় ৭ ফরওয়ার্ড ব্লক কর্মীর হত্যা-রঞ্জিতের বিরুদ্ধে এমন অনেক অভিযোগ।
মাওবাদী নেতা রঞ্জিত পালের মা অলকা ও প্রপিতামহ প্রভাকর পাল। ছবি: দেবব্রত দাস
এ হেন ছেলে জঙ্গল-জীবন ছেড়ে ‘আত্মসমর্পণ’ করুনচাইছেন তাঁর মা। ছেলের সঙ্গে কি যোগাযোগ হয়েছে? প্রশ্ন শুনে কেঁদে ফেললেন অলকাদেবী। তাঁর আকুতি, “ছেলে ঘরে ফিরলে কোন মায়ের না ভাল লাগে? ছেলে সুস্থ জীবনে ফিরে এলে আমিই সবচেয়ে খুশি হব। আমি চাই, বন-বাদাড়ের জীবন ছেড়ে রঞ্জিত এ বার বাড়ি ফিরে আসুক। পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করুক।”
সে কি আদৌ হবে? জানেন না অলকাদেবী বা বাড়ির অন্য সদস্যেরা। কিন্তু সম্প্রতি যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে মাওবাদী র্শীষ নেতা কিষেণজির নিহত হওয়ার ঘটনা তাঁদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে কয়েকগুণ। অলকাদেবী বললেন, “আমার ছেলে জীবিত অবস্থায় ফিরুক। এর চেয়ে বেশি কিছু চাই না।” বুধবার বেলা ১১টা নাগাদ পৌঁছনো গেল অ্যাসবেস্টসের ছাউনি দেওয়ায় মাটির সেই দোতলা বাড়ির সামনে। উঠোনে খাটিয়ায় বসেছিলেন রঞ্জিতের প্রপিতামহ প্রভাকর পাল। মাটির জিনিস তৈরি করে আর জঙ্গল থেকে কাঠ কুড়িয়ে সংসার চালানো সত্য পাল ও অলকাদেবীর দুই ছেলে আর এক মেয়ের মধ্যে রঞ্জিতই বড়। বৃদ্ধ অশীতিপর প্রভাকরবাবু জানালেন, বারিকুল হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় ১৯৯৮ সালে বাড়ি ছেড়েছিলেন রঞ্জিত। নাম লিখিয়েছিলেন তৎকালীন জনযুদ্ধ গোষ্ঠীতে। ২০০২-এ একবার রানিবাঁধ থানা তাঁকে ধরেছিল। জামিন পাওয়ার পরেই জঙ্গলে গা ঢাকা দেন। এই ছেলের জন্য বাড়িতে বারবার পুলিশ এসেছে। রঞ্জিতের ঠাকুমা শুকদা পালের কথায়, “বিধানসভা ভোটের আগে পর্যন্ত পুলিশ প্রায় দিনই বাড়িতে রাত-বিরেতে হানা দিয়েছে। বারবার জানতে চেয়েছে ও কোথায়।”
আর অলকাদেবী বললেন, “জাগরী, রাজারাম, শোভারা যদি সব ছেড়ে আসতে পারে, আমার ব্যাটাই বা পারবে না কেন? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওঁদের ক্ষমা করেছেন। আমার ছেলেকেও নিশ্চয় করবেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.