বধূকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগে স্বামী, দেওর ও শ্বশুর, শাশুড়িকে গ্রেফতার করল পুলিশ। হাবরা থানার রাঘবপুর এলাকায় মঙ্গলবার গভীর রাতে এই ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, নিহত গৃহবধূর নাম রিঙ্কি মণ্ডল (১৯)। ধৃতদের নাম সমীর মণ্ডল, টুকাই মণ্ডল, রবীন মণ্ডল ও কৃষ্ণা মণ্ডল। রিঙ্কিদেবীর বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে ধৃতদের বিরুদ্ধে বধূহত্যার মামলা রুজু করেছে পুলিশ। দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য বারাসত জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নদিয়ার কৃষ্ণনগরের যাত্রাপুরের বাসিন্দা হরেন শীলের কন্যা রিঙ্কিদেবীর সঙ্গে প্রায় দেড় বছর আগে বিয়ে হয় হাবরার রাঘবপুরের বাসিন্দা সমীর মণ্ডলের। রিঙ্কিদেবীর বাপের বাড়ির লোকের অভিযোগ, বিয়েতে পাত্রপক্ষের দাবিমতো টাকা, গয়নাগাটি, জিনিসপত্র দেওয়া হলেও আরও টাকার জন্য তারা রিঙ্কিদেবীর উপরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাত আড়াইটা নাগাদ একজন প্রতিবেশী দেখেন রিঙ্কিদেবীকে বাড়ির পাশেই একটি বাতাবি লেবুর গাছের সঙ্গে পিছমোড়া করে বেঁধে তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। এই দৃশ্য দেখে ওই প্রতিবেশী চিৎকার চেঁচামেচি করলে অন্যান্য প্রতিবেশীরা সেখানে ছুটে আসেন। তাঁরাই জ্বলন্ত রিঙ্কিদেবীর গায়ের আগুন নেভান। খবর দেওয়া হয় স্থানীয় পৃথিবা গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য এবাদুল হককে। ওই রাতেই গ্রামবাসীরা স্বামী সমীর ও শাশুড়ি কৃষ্ণাদেবীকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। গ্রামবাসীদের চাপে রিঙ্কিদেবীর শ্বশুর রবীন ও দেওর টুকাই একটি ভ্যানে করে তাঁকে প্রথমে হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে পরে বারাসত জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে বুধবার সকাল আটটা নাগাদ মারা যান রিঙ্কিদেবী। হাসপাতালে থেকেই রবীনবাবু ও টুকাইকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এদিকে, রিঙ্কিদেবীর মৃত্যু খবর পেয়েই উত্তেজিত গ্রামবাসীরা এ দিন দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে শ্বশুরবাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালান। রিঙ্কিদেবীর জেঠামশাই পরিমলবাবু বলেন, “আমার ভাই সেলুনে কাজ করে। চার মেয়ের মধ্যে রিঙ্কি মেজ। অভাবের সংসারেও শ্বশুরবাড়ির দাবিমতো সব দেওয়া হয়েছিল। কিছুদিন আগে স্বামী ব্যবসা করবে বলে রিঙ্কি ১২ হাজার টাকা নিয়ে যায় আমার স্ত্রীর কাছ থেকে।”
পঞ্চায়েত সদস্য এবাদুল হক বলেন, “দেনাপাওনা নিয়ে রিঙ্কিদেবীর উপরে প্রায়ই নিযার্তন করত শ্বশুবাড়ির লোকেরা। আমরা কয়েকবার সালিশি করে মিটিয়েছিলাম। মঙ্গলবার রাতে জানতে পারি রিঙ্কিদেবীর গায়ে শ্বশুবাড়ির লোকজন আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।” মেয়ের শোকে কাতর হরেনবাবু বলেন, “টাকার জন্য প্রায়ই মেয়ের উপরে অত্যাচার করত ওরা। কিন্তু তাই বলে ওকে পুড়িয়ে মারবে ভাবতে পারিনি।”
মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে রিঙ্কিদেবী শ্বশুরবাড়ির লোকেরাই তাঁর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন বলে জানিয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। |