গদামথুরা ও কেদারপুরের মধ্যে যাতায়াত করতে পেরোতে হয় মৃদঙ্গভাঙা নদী। কিন্তু দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমা ব্লকের এই দুই এলাকায় নদীপাড়ের দু’টি ঘাট দীর্ঘ দিন সংস্কার না হওয়ায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। মাঝে মধ্যে ছোটখাট দুর্ঘটনাও ঘটছে। সংস্কারের জন্য প্রশাসনের কাছে দরবার করেও সুফল মেলেনি বলে অভিযোগ।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘ দিন আগে নদীর দু’পাড়ে পাকা জেটিঘাট তৈরি করে দিয়েছিল সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদ। গদামথুরার দিকের নদীতে চড়া পড়ে যাওয়ায় বছর তিনেক আগে পর্যন্ত হাঁটু-সমান কাদা পেরিয়ে মানুষকে নৌকোয় উঠতে-নামতে হত। বছর দু’য়েক আগে পাকা জেটিঘাটের শেষ অংশ থেকে বাঁশের দীর্ঘ সাঁকো তৈরি করে দেন ঘাটের ইজারাদার (যিনি ঘাট লিজে নিয়েছিলেন)। কিন্তু ভাটার সময় মাচাটি জলের উপরে থাকলেও জোয়ারে তা ডুবে থাকে। সাঁকোটিরও হাল খারাপ। মাঝে মাঝে বাঁশ ভেঙে গিয়েছে। ভারি মালপত্র নিয়ে যাতায়াত করতে গেলে মড়মড় করে শব্দ হয়। যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়ার ভয় আছে বলে জানালেন যাত্রীরা। |
বাঁ দিকে কেদারপুর ও ডানদিকে গদামথুরা ঘাটের অবস্থা।-নিজস্ব চিত্র। |
অন্য দিকে, কেদারপুরের পাকা জেটিঘাটটিরও মেরামতির অভাবে খারাপ দশা। মাঝে বড় বড় গর্ত হয়ে গিয়েছে। কোথাও ফাটল দেখা দিয়েছে। ঘাটে যাত্রীশেড থাকলেও রাতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নেই দু’পাড়েই। ঘাটের মুখে আলো লাগানো থাকলেও সেই আলো ঠিক মতো এসে পৌঁছয় না। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, রাতে আলোর ব্যবস্থা না থাকায় ভাঙাচোরা জেটি ধরে কোনওমতে হাতড়ে হাতড়ে নৌকোয় ওঠা-নামা করতে হয়। স্কুলে যাওয়ার পথে পা পিছলে কাদায় পড়ে অনেক পড়ুয়াকে সে দিন কামাই করতে হয়। শুভঙ্কর জানা, শ্যামল জানাদের বক্তব্য, জেটি দিয়ে পারাপার করতে খুবই অসুবিধা হয়, বিশেষত রাতে। মালপত্র নিয়ে যাতায়াত করতে আরও সমস্যা।
এই জেটিঘাট ব্যবহার করেন দু’পাশের কেদারপুর, লক্ষ্মীজনার্দনপুর, হেড়ম্ব গোপালপুর, কে প্লট, জে প্লট এলাকার বহু মানুষ। দুই জেটিঘাটের দায়িত্বে থাকা শ্রীকৃষ্ণ মাইতি জানান, যাত্রীদের যাতে কাদা না মাড়াতে হয়, সে জন্য আমরাই ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ করে বাঁশের সাঁকো তৈরি করিয়েছিলাম। পঞ্চায়েত সমিতি ও ব্লক থেকে কিছু টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও কোনও সাহায্য আসেনি। সাঁকোর কিছু অংশ এখন না সারালেই নয়। সমস্ত বিষয়টি ব্লক প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
পাথরপ্রতিমার বিডিও অচিন্ত্য হাজরা বলেন, “জেটিঘাটের অবস্থা খারাপ। ওই জেটি আপাতত ব্যবহার না করার জন্য সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদ জানিয়ে দিয়েছে। তবুও যাত্রীদের সুবিধার কথা ভেবে জেটি যাতে মেরামত করা যায়, সে দিকটি দেখব।” সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদও জেটি মেরামতির কাজে উদ্যোগী হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান তথা পাথরপ্রতিমার বিধায়ক সমীর জানা বলেন, “ওই জেটিঘাট ছাড়াও আরও ছ’টি জেটিঘাট তৈরির জন্য পর্ষদকে বলা হয়েছে। টাকা অনুমোদন হলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |