|
|
|
|
ট্রাক চুরি, শিল্পশহরে নাজেহাল ব্যবসায়ীরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া |
আকরিক লোহা বোঝাই লরি নিয়ে বারবিল থেকে আসছিলেন চালক মহম্মদ জামাল। তমলুক পেরিয়ে বারসুদরার কাছে চলন্ত লরিতেই এক যুবক উঠে পড়ল। ভয় দেখিয়ে লরি ছিনতাই করে চম্পট দিল বছর পঁচিশের ওই যুবক। কাছেই থানায় অভিযোগ জানানো ছাড়া কিছু করার ছিল না চালক-খালাসির। রানিচক থেকে সিটি সেন্টার, ব্রজলালচক, কাপাসএড়্যা, বারসুদরা-চোর-ছিনতাইকারীদের উপদ্রব ক্রমশই বেড়ে চলছে শিল্পশহর হলদিয়ায়।
হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক ও পেট্রোকেমিক্যাল লিঙ্ক রোড যেন দুষ্কৃতীদের আখড়া। মহিষাদল, ভবানীপুর ও হলদিয়া থানার নাকের ডগায় মাদক খাইয়ে, ভয় দেখিয়ে চলছে ট্রাক ‘হাইজ্যাক’। সম্প্রতি সুতাহাটার কাছে তিনটি লরি ছিনতাইয়ের অভিযোগ দায়ের হয়। এর মধ্যে দু’টির হদিস মিললেও একটি এখনও বেপাত্তা। দুষ্কৃতীদের উৎপাতে মাথায় হাত পড়েছে হলদিয়া শিল্পতালুকে আসা লরিচালক, পরিবহন ব্যবসায়ী, কারখানা কর্তৃপক্ষের। হলদিয়া ট্রাক ওনার্স অ্যাসোশিয়েশনের সম্পাদক পশুপতি সাহুর অভিযোগ, ‘‘প্রতিনিয়ত চুরি-ছিনতাই হচ্ছে। প্রতিবাদ জানালেই প্রাণে মারার হুমকি দিচ্ছে দুষ্কৃতীরা। সব জেনেও নিষ্ক্রিয় পুলিশ-প্রশাসন।”
যদিও হলদিয়ার মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অমিতাভ মাইতির দাবি, ‘‘ট্রাক হাইজ্যাকের ঘটনা এখন অনেকটাই রোধ করা গিয়েছে। তবে ছিঁচকে চোরেদের উৎপাত বেড়েছে। আমরা বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছি। তবে সমস্যা নির্মূল করা যাচ্ছে না। আমরা রাতে নাকাপয়েন্ট করে নজরদাড়ি বাড়িয়েছি।”
মূলত হলদিয়া বন্দর থেকে আমদানি করা সামগ্রী বা বন্দরে রফতানির উদ্দেশ্যে পাঠানো মালপত্র চুরি হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘কখনও চলন্ত ট্রাকে আবার কখনও দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পিছনে উঠে পড়ছে চোরেরা। অস্ত্র দিয়ে ভয় দেখিয়ে লোহা, চিনি সবই সাফাই করে দিচ্ছে নিমেষে। তারপর স্থানীয় বস্তিতেই গা ঢাকা দিচ্ছে চোরেরা।” স্থানীয় বস্তিএলাকার ছেলেরাই যে চুরি-ছিনতাই করছে তা মেনে নিয়েছেন ভবানীপুর থানার ওসি বিশ্বজি হালদারও। তিনি বলেন, “মাস কয়েক আগে চোরেদের সাঙ্ঘাতিক দাপট ছিল। আমরা ধরপাকড় করে সেটা অনেক কমিয়ে এনেছি। দেখা গিয়েছে, স্থানীয় কিছু বস্তি এলাকার ১৬ থেকে ২৪ বছরের ছেলেরাই এই কাজে যুক্ত।”
পূর্ব মেদিনীপুরের এই শিল্পশহরে জীবিকার সন্ধানে আসা বহিরাগত বা জমিহারা স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে গড়ে ওঠা বস্তি এলাকায় দারিদ্রই প্রধান সমস্যা। কাজ না পেয়ে সমাজবিরোধী কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ছেন বস্তিবাসী। গত দু-তিন বছরে প্রবণতাটা আরও বেড়েছে। আগে ইদ্রিস, দলো, রাজু-সহ বেশ কিছু কুখ্যাত দুষ্কৃৃতী বন্দরগামী ট্রাক থেকে জিনিসপত্র রদবদল করত বলে অভিযোগ। এখন তারা গা ঢাকা দিলেও এসেছে নতুন মুখ। সমস্যা রয়ে গিয়েছে আগের মতোই। |
|
|
|
|
|