অতীতের মতো তিক্ত নয়। এমনও মন্তব্য হচ্ছে যে, সঙ্গীর সিদ্ধান্তকে তো সম্মান করতেই হবে। তবু লি-হেশের পেশাদার সার্কিটে ফের বিচ্ছেদের জন্য ঘুরিয়ে লিয়েন্ডার পেজের দিকে আঙুল তুলছেন মহেশ ভূপতি। বিশ্ব ডাবলস চ্যাম্পিয়নশিপে ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ শেষ বার খেলার পর লন্ডন থেকে দেশে ফিরে লিয়েন্ডার যখন যুবরাজ সিংহের গুরুতর অসুস্থতার ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমকে বলছেন, মহেশ তখন সরাসরি তাঁদের জুটির ভাঙন নিয়ে মুখ খুলেছেন টিভি-র নিউজ চ্যানেলে।
“সিদ্ধান্তটা লিয়েন্ডার পেজের। ওর হয়তো মনে হয়েছে, আমাদের একটু বেশি বয়স হয়ে গেছে। এটিপি ট্যুরে একটানা জুটি বেঁধে ভাল করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদের দু’জনেরই সঙ্গী হিসেবে তরুণ পায়ের দরকার আছে,” দাবি করেছেন মহেশ। তবে তিনি যে গোটা ব্যাপারটায় কিছুটা অবাক সেটাও মহেশের পরের মন্তব্যে ধরা পড়ছে। “সিদ্ধান্তটার ব্যাখ্যা দেওয়া আমার পক্ষে খুব কঠিন। দু’হাজার এগারোর গোড়ায় আমরা যখন সার্কিটে আবার জুটি বেঁধেছিলাম, আমাদের লক্ষ্য ছিল দু’হাজার বারোর অলিম্পিক, অস্ট্রেলিয়া ওপেন এবং সদ্য শেষ হওয়া ওয়ার্ল্ড ট্যুর ফাইনালস। কারণ এই তিনটেই আমরা জিতিনি। আর সব জিতেছি। আর আমার মনে হয়েছিল, আমাদের খেলোাড়জীবনে অস্ত নামতে চলেছে। সে জন্য বছর দুয়েকের মধ্যেই অধরা লক্ষ্যগুলো পূরণের চেষ্টা করা দরকার। কিন্তু লিয়েন্ডারের হয়তো অন্য রকম কোনও ভাবনা আছে। আমরা দু’জনেই পেশাদার আর দিনের শেষে দু’জনেই নিজেকে জয়ী দেখতে ভালবাসি। তার জন্য যেটা সর্বশ্রেষ্ঠ রাস্তা, সেটা নেওয়াই সঠিক।” |
মহেশ এ-ও পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, এ বারের বিচ্ছেদে তাঁর এবং লিয়েন্ডারের মধ্যে ‘মোটেই কোনও তিক্ততা নেই’। বলেছেন, “লন্ডনে যাওয়ার আগেও আমরা মুম্বইয়ে একসঙ্গে বসে কথা বলেছি। খুব ভাল প্র্যাক্টিস করেছি একসঙ্গে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে খুব ভাল খেলেছি, বিশ্বের এক নম্বর জুটিকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছি। বোঝাই যাচ্ছে, আমাদের মধ্যে বোঝাপড়ার কোনও অভাব ঘটেনি। নতুন মরসুমে বিচ্ছেদের ব্যাপারটা পুরোটাই পেশাগত।” এমনকী লন্ডন অলিম্পিকে লি-হেশ জুটিকে খেলতে দেখার সম্ভাবনাকেও মোটেই খারিজ করে দিচ্ছেন না ভূপতি। তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন, “বপ্সের (রোহন বোপান্না) সঙ্গে আমি নতুন মরসুমে জুটি বাঁধছি। কিন্তু অলিম্পিক এখনও সাত মাস দূরে। এর মধ্যে অনেক র্যাঙ্কিং, জয়-পরাজয়, এটিপি পয়েন্ট রক্ষা করা-না করতে পারা, প্রচুর ব্যাপার ওলোটপালট হয়ে যাবে। তা ছাড়া এখন দুটোর বদলে তিনটে জুটির মধ্য থেকে সেরা টিমটাকে অলিম্পিকে পাঠানোর সুযোগ থাকছে ভারতীয় টেনিসের হাতে। আমার মনে হয়, এ ক্ষেত্রে তিনটের মধ্যে শ্রেষ্ঠ জুটিটাকেই দেশের স্বার্থে অলিম্পিকে পাঠানো হবে।” আর কে না জানে, ভূপতি-বোপান্না, দুই ‘লেফ্ট কোর্ট’ প্লেয়ারের কোর্টে বোঝাপড়ার তুলনায় লি-হেশের বিখ্যাত কেমিস্ট্রি অনেক বেশি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা।
এ দিকে, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর মতো ইন্দো-পাক এক্সপ্রেস-ও থমকে পড়ায় অবাক আইসাম কুরেশি। বোপান্নার গত চার বছরের পাক সঙ্গী কুরেশি বলেছেন, “আমাদের সফল জুটির বিচ্ছেদের মধ্যে কোনও তিক্ততা নেই যেমন সত্যি, তেমনই ব্যাপারটায় আমি অবাক সেটাও সত্যি। আমাকে এক কথায় বলা হল, আমাদের জুটি আর পরের মরসুমে থাকছে না। আমি যেন নতুন জুটি খুঁজে নিই।” লিয়েন্ডারের মতো কুরেশি-ও এখনও পাকাপাকি কোনও পার্টনারের খোঁজ পাননি। ৩৮ বছরের লিয়েন্ডারের পক্ষে যে ৩২ বছরের রাদেক স্টেপানেককে নিয়ে নিয়মিত ভাবে এটিপি ট্যুরে খেলে নিজের পাশে ‘তরুণ পা’-এর সঠিক সন্ধান পাওয়া সম্ভব নয়, সেটা অনেক টেনিস, বিশেষজ্ঞই মনে করছেন। লিয়েন্ডার স্বয়ং অবশ্য এ দিন সম্পূর্ণ অন্য বিষয় মন্তব্য করেছেনযুবরাজের বুকের টিউমার। ২০০৩-এ ব্রেন টিউমার সন্দেহে লিয়েন্ডারও অরল্যান্ডোর ক্যানসার হাসপাতালে দীর্ঘ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে দেখা গিয়েছিল, সেটা প্যারাসেটিক সংক্রমণ। “এই সময়টায় কী রকমের মানসিক লড়াই লড়তে হয় সেটা আমি জানি,” বলে লিয়েন্ডার যোগ করেছেন, “তবে আমার মতোই যুবরাজও পুরোদমে খেলার মাঠে ফিরতে পারবে আমি নিশ্চিত।” |