বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের পরে, পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডি। ফের মানুষের ছোঁয়া লাগায় দল থেকে ‘ব্রাত্য’ হয়ে গেল হস্তিশাবক।
প্রায় ১৫ ফুট গভীর মাঠ-কুয়োয় পড়ে গিয়েছিল দিন পনেরোর শিশু হাতি। সেখান থেকে তাকে বাঁচান স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু দল তাকে ফেরত নেয়নি। দলছুট হস্তিশাবক রয়েছে বন দফতরের আশ্রয়ে। পুজোর আগে ঝাড়খণ্ড থেকে ২৩-২৪টি হাতি পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডি ও মাঠা রেঞ্জের জঙ্গলে ঢোকে। নিয়মিত জঙ্গল লাগোয়া ধান খেতে হানা দিচ্ছিল তারা। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ বাঘমুণ্ডি রেঞ্জের বাগতি ও নন্দরামডি এলাকার ধান খেতে ঢোকে ১৮-১৯টি হাতি। তাদের মধ্যেই মায়ের সঙ্গে ছিল প্রায় ৪০ কেজি ওজনের খুদে হাতিটি।
|
উদ্ধার হওয়া হস্তিশাবক। ছবি: সুজিত মাহাতো |
সম্প্রতি বাঘমুণ্ডির চিকনাবাগান গ্রামে হাতির হানায় মৃত্যু হয় এক জনের। তাই এলাকাবাসী রাত-পাহারা দিচ্ছিলেন। মঙ্গলবার হাতিদের খেতের কাছে আসতে দেখে তাড়া করেন তারা। বাকি হাতিরা জঙ্গলের দিকে চলে গেলেও এক হস্তিনী ও তার শাবক পিছিয়ে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দা সোনা রায়, গুরুচরণ সিং মুড়ারা বলেন, “বাচ্চা হাতিটা ধান খেতের কাদায় আটকে গিয়েছিল। মা-হাতি টেনে তোলার চেষ্টা করছিল। কিন্তু লোকজনের চিৎকারে মা-হাতি বাচ্চা ছেড়ে জঙ্গলে ঢুকে পড়ে।”
ইতিমধ্যে কাদা থেকে উঠে রাতে পথ চলতে গিয়ে খেতের পাশের মাঠ-কুয়োয় পড়ে যায় হস্তিশাবক। তার চিৎকার শুনে বাগতি গ্রামের ফণিভূষণ সিং সর্দার, অতুল মাহাতো কুয়োর ভিতরে নেমে পড়েন। ফনিভূষণ বলেন, “কুয়োয় ফুট পাঁচেক জল ছিল। ঠান্ডায় হাতিটা কাঁপছিল। চটে ওর দেহ জড়িয়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে দিই। উপর থেকে এলাকাবাসী ওকে টেনে তোলেন।” হস্তিশাবকটিকে জঙ্গলের প্রান্তে নিয়ে যান গ্রামবাসী। তাকে সেখানে রেখে দূরে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন তাঁরা। কিন্তু মা-হাতি আর ফেরেনি। বাঘমুণ্ডি রেঞ্জের আধিকারিক পঞ্চানন শীট বলেন, “এই এলাকার জঙ্গলেই দিন পনেরো আগে হাতিটা জন্মেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা ওকে কুয়ো থেকে উদ্ধার করার পরে, দলে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু মানুষের ছোঁয়া লাগাতেই দল ওকে ফিরিয়ে নিল না।”
বুধবার সকালে মাঠা রেঞ্জের অফিসে গিয়ে দেখা যায়, বাচ্চা হাতিটার পরিচর্যা চলছে। সে দৌড়চ্ছে রেঞ্জ অফিস চত্বরে। বাঘমুণ্ডির প্রাণিসম্পদ আধিকারিক দেবরাজ নন্দী বলেন, “ওর চোখের নীচে ও শরীরে সামান্য চোট রয়েছে। ওষুধ দেওয়া হয়েছে। গুঁড়ো দুধ গুলে ফিডিং বোতলে খাওয়ানো হচ্ছে।” বাঘমুণ্ডির রেঞ্জ অফিসার জানান, বিষ্ণুপুর থেকে উদ্ধার হওয়া হস্তিশাবকের মতো, এই শিশু হাতিটিকেও পাঠানো হবে উত্তরবঙ্গের জলদাপাড়ায়। আজ, বৃহস্পতিবার ওই হস্তিশাবকের উত্তরবঙ্গের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা। |