নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে দিন হাওড়ায় প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসেছিলেন, তার কয়েক ঘণ্টা আগে জোড়া খুন হয় মাছবাজারে। দু’দিন পরেও সেই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এরই মধ্যে বুধবার দুপুরে শিবপুরের কাসুন্দিয়ার কাছে স্বামী বিবেকানন্দ রোডে একটি নির্মীয়মাণ বহুতলে প্রোমোটারকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে নগদ ৫৯ হাজার টাকা ছিনতাই করে চম্পট দিল দুই দুষ্কৃতী। পালানোর সময়ে রিভলভার উঁচিয়ে ভয় দেখাল এলাকার লোকজনকে।
গত সেপ্টেম্বর মাসে হাওড়া পুলিশ কমিশনারেট হওয়ার পরে শহরের ট্রাফিকে কিছুটা শৃঙ্খলা এলেও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে সার্বিক উন্নতি হয়নি, গত তিন মাসের পরিসংখ্যানই তার প্রমাণ। হাওড়া শহরে গত তিন মাসে খুন হয়েছেন পাঁচ জন। ১৭ অক্টোবর লিলুয়ার একটি কারখানায় খুন হন রামজি সিংহ নামে এক কর্মী। ২৯ অক্টোবর লিলুয়ারই চামরাইলে রহস্যজনক ভাবে খুন হন ওষুধ ব্যবসায়ী অসীম কোলে। ১৫ নভেম্বর নিজের দোকানে কুপিয়ে খুন করা হয় সিপিএম কর্মী দিলীপ দত্তকে। এর পরে ২৮ নভেম্বর হাওড়া মাছবাজারের মধ্যেই নৃশংস ভাবে খুন হন বিনয় সাউ ও চন্দন সাউ নামে দুই কর্মী। হাওড়া সিটি পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনওটিরই কিনারা করা যায়নি। আততায়ীরা অধরাই।
ঠিক কী ঘটেছিল বুধবার দুপুরে?
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দুপুরে ওই নির্মীয়মাণ বাড়িটিতে রোজকার মতো কাজের অগ্রগতি দেখতে যান হাওড়ার ভগবান গাঙ্গুলি লেনের বাসিন্দা হরেন্দ্রপ্রসাদ ভগৎ। তিনি ও ভানু সিংহ নামে এক ব্যক্তি ওই বাড়িটির প্রোমোটার। হরেন্দ্রবাবু জানান, মিস্ত্রিদের সঙ্গে কথা বলার সময়ে হঠাৎই দুই যুবক এসে তাঁর হাতে ধরা টাকার ব্যাগটি ছিনিয়ে নিতে চেষ্টা করে। বাধা দিতে গেলে পকেট থেকে রিভলভার বার করে তাঁর মাথায় ঠেকিয়ে বলে, “কথা বললেই গুলি করব।”
হরেন্দ্রবাবু বলেন, “আমি ভয়ে ব্যাগটা দিয়ে দিই। ওরা পিছনের দরজা দিয়ে মন্দিরপাড়া লেন হয়ে পালিয়ে যায়। আমার চিৎকারে এলাকার লোক ছুটে এলেও দুষ্কৃতীরা রিভলভার উঁচিয়ে রাখায় কেউ আর এগোতে সাহস দেখাননি।”
আতঙ্কিত এলাকাবাসীদের কেউ কেউ দুই দুষ্কৃতীকে চিনতে পেরেছেন বলে পুলিশকে জানান। এলাকার দীর্ঘদিনের বাসিন্দা সুব্রত সাহা বলেন, “এই ধরনের ঘটনা গত ৩০ বছরে এখানে ঘটেনি। পুলিশের উচিত অবিলম্বে দুষ্কৃতীদের পাকড়াও করা এলাকাবাসীর আতঙ্ক দূর করা।” হাওড়ার ডিসি (সদর) সুকেশকুমার জৈন বলেন, “ওই ঘটনায় স্থানীয় দুই দুষ্কৃতীর নাম আমরা পেয়েছি। আশা করছি খুব শীঘ্রই অপরাধীদের ধরা যাবে। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।” |