বছর দেড়েক আগে মধ্য কলকাতার একটি ডেরায় জাল নোট লেনদেনের খবর থেকেই প্রথম মাঠে নেমেছিল কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স। জাল টাকা নিতে দিল্লি থেকে কলকাতায় এসেছিল ২৬ বছরের এক ‘সন্দেহভাজন’ যুবক। এটুকু ‘খবর’-এর ভিত্তিতে শুরু হওয়া তদন্তের সূত্র ধরেই এ দেশে নাশকতার বিভিন্ন ঘটনায় জড়িত কট্টরপন্থী জঙ্গি-সংগঠন ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন (আইএম)-এর ৬ জন জঙ্গিকে দিল্লি পুলিশ গ্রেফতার করল। ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রিয়াজ ভটকলের ভাই তথা বিস্ফোরক-বিশেষজ্ঞ ইয়াসিন ভটকলের ওই ৬ শাগরেদ পুণের জার্মান বেকারি, জামা মসজিদ চত্বরে বিস্ফোরণ এবং চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ।
দিল্লি পুলিশ এক বিবৃতিতে বলেছে, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কলকাতা পুলিশ, তামিলনাড়ু এবং বিহার পুলিশের সমন্বয়ের দৌলতে জঙ্গি মোকাবিলায় বড় ‘সাফল্য’ মিলল। ধৃতদের মধ্যে এক জন পাকিস্তানের নাগরিক। এই খবর জানার পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেছেন, গত কয়েক দিনে ওই ৬ জঙ্গি ধরা পড়ার ফলে জার্মান বেকারি বিস্ফোরণ, জামা মসজিদ চত্বরে বিস্ফোরণ এবং বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে বিস্ফোরণের কিনারা করতে বিশেষ সুবিধে হবে। |
তবে, আহমেদ সিদ্দি বাপ্পা ওরফে ইমরান নামে আরও এক ব্যক্তির খোঁজে রয়েছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের শীর্ষ স্থানীয় জঙ্গি ইমরানই বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গি সংগঠনটির কাজ পরিচালনা করে। তার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় এবং নিজেদের মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করার দায়িত্বও তারই উপর। শুধু তা-ই নয়, পুলিশের দাবি, গত বছর ১৯ সেপ্টেম্বর দিল্লির জামা মসজিদের বাইরে গাড়িটিতে বোমা রেখেছিল সে-ই।
যে ৬ জন জঙ্গিকে ধরা হয়েছে, তাদের নাম মহম্মদ আদিল, মহম্মদ কাতিল সিদ্দিকী, মহম্মদ এরশাদ খান, গহ্বর আজিজ খোমানি, গায়ুর আহমেদ জামালি এবং আব্দুল রহমান। এদের মধ্যে মহম্মদ আদিলের বাড়ি পাকিস্তানের সিন্ধুপ্রদেশে। বাকিদের বাড়ি বিহারে। কলকাতা পুলিশের এক কর্তার
দাবি, “বিস্ফোরক তৈরিতে তুখোড় ইয়াসিন ভটকল এদের পাণ্ডা। ধৃতেরা বিস্ফোরক রাখার সঙ্গে
সরাসরি জড়িত।”
কী ভাবে এই জঙ্গিদের বিষয়ে সূত্র মিলল?
কলকাতা পুলিশের দাবি, মধ্য কলকাতার এক হকারের থেকেই প্রথমে খবর মেলে কাতিল সিদ্দিকী কলকাতায় এসেছে। প্রাথমিক ভাবে সে জাল টাকা লেনদেনের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেলেও পরে পুলিশ জানতে পারে, সিদ্দিকী বেআইনি অস্ত্র কারবারের সঙ্গে যুক্ত। ২২ নভেম্বর দিল্লির আনন্দ বিহার বাস টার্মিনাল থেকে গ্রেফতার করা হয় কাতিলকে। পুলিশের দাবি, সে দিল্লির জামা মসজিদ বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত। কাতিলকে জেরা করে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের সাম্প্রতিক কাজকর্ম এবং বাকি সঙ্গীদের সম্পর্কে প্রচুর তথ্য পায় পুলিশ। ২৩ এ নভেম্বর আজিজ খোমানিকেও দিল্লি থেকেই গ্রেফতার করা হয়। এর পর ২৭ নভেম্বর চেন্নাইয়ে গ্রেফতার করা হয় মহম্মদ এরশাদ খান এবং আব্দুল রহমানকে। |