নব কলেবরে লোকপাল বিল পেশ হওয়ার আগেই তা নিয়ে কংগ্রেস-বিজেপি দ্বৈরথের ক্ষেত্র ফের প্রস্তুত হয়ে গেল। লোকপাল বিল নিয়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তৈরি খসড়া নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আজ বৈঠক ছিল। কিন্তু চূড়ান্ত রিপোর্টে প্রধানমন্ত্রীর পদ, আমলাতন্ত্রের নিচু স্তর ও নাগরিক সনদকে লোকপালের আওতায় না রাখায় অণ্ণা হজারে এবং তাঁর অনুগামীরা যেমন ফের অনশন আন্দোলনের হুমকি দিলেন, তেমনই আপত্তি জানাল বিজেপি-ও। বিজেপি নেতৃত্ব এও জানিয়ে দিয়েছেন, এর পর অণ্ণারা আন্দোলনে নামলে পূর্ণ সমর্থন জোগাবেন।
সংসদীয় স্থায়ী কমিটির আজকের বৈঠকে ৩০ জন্য সদস্যের মধ্যে ১৯ জন উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে বিজেপি, বিজু জনতা এবং বাম মিলিয়ে আট জন দাবি করেন, কিছু রক্ষাকবচ রেখে প্রধানমন্ত্রীর পদকে লোকপালের আওতায় রাখা হোক। কিন্তু পাঁচ কংগ্রেস সাংসদের বক্তব্য, লোকপালের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর পদ রাখলেও, তিনি ওই পদে থাকাকালীন কোনও রকম তদন্ত করা যাবে না। কারণ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত হলে তাঁর পক্ষে সরকার চালানো সম্ভব নয়। আবার সপা, বসপা-সহ ছয় সদস্যের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রীর পদকে পুরোপুরি লোকপালের আওতার বাইরে রাখা হোক। সেই মতই চূড়ান্ত হয়। এই অবস্থায় বিজেপি নেতৃত্ব জানিয়ে দিয়েছেন, স্থায়ী কমিটির যে চূড়ান্ত রিপোর্টটি সংসদে পেশ করা হবে তাতে যেন তাঁদের আপত্তির কথা থাকে। স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান বিজেপি সদস্যদের সোমবারের মধ্যে নোট দিতে বলেছেন।
প্রত্যাশিত ভাবেই লোকপালকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তোলার প্রস্তাব রয়েছে স্থায়ী কমিটির চূড়ান্ত রিপোর্টে। এ ব্যাপারে রাহুল গাঁধী সংসদে দাঁড়িয়ে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আর তা চূড়ান্ত রিপোর্টে রাখার ব্যাপারে গোড়া থেকে সক্রিয় ছিল কংগ্রেস। পাশাপাশি একটি আইনের মাধ্যমেই লোকপাল ও রাজ্যস্তরে লোকায়ুক্ত নিয়োগকে কথা বলা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে যুক্তি হিসাবে এটাই দেখানো হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় লোকপাল ও রাজ্যস্তরে লোকায়ুক্ত আইনের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকা বাঞ্ছনীয়। তবে বিচারব্যবস্থা, নাগরিক সনদকে লোকপালের আওতায় রাখা হয়নি। চূড়ান্ত সুপারিশে বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে পৃথক ব্যবস্থা প্রণয়ন করছে সরকার। আমলাতন্ত্রের নিচু স্তরকেও লোকপালের আওতায় রাখা হয়নি। কেবল ‘এ’ ও ‘বি’ গ্রুপের অফিসারদের লোকপালের আওতায় রাখা হয়েছে।
স্বাভাবিক ভাবেই অণ্ণা হজারে ও তাঁর সমর্থকরা অভিযোগ করেছেন, তাঁদের ধোঁকা দিয়েছে সরকার। তাই তাঁরা ফের প্রতিবাদে অনশন আন্দোলনে বসবেন। বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, রামলীলা ময়দানে অণ্ণার অনশনের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদে আলোচনায় যে সর্বসম্মত প্রস্তাব নেওয়া হয়েছিল, স্থায়ী কমিটির চূড়ান্ত রিপোর্টের সঙ্গে তার অনেক বিষয়ে মিল নেই। কথা রাখেনি সরকার। তাই তাঁরা অণ্ণার আন্দোলনের সঙ্গে পুরোদমে সামিল হবেন। যদিও অণ্ণারা লোকপাল বিল নিয়ে সরকার-বিরোধিতার জায়গা দখল করে নিলে বিজেপি-র ক্ষতি হতে পারে বলে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের মত। কিন্তু বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন, আডবাণীর রথযাত্রার পর বিজেপি এ ব্যাপারে সরকার-বিরোধিতার স্থান অনেকটাই দখল করে নিয়েছে। ফলে অণ্ণাদের আন্দোলনের ফলে সেই দিক থেকে কোনও আশঙ্কা নেই। বরং সরকার তথা কংগ্রেস-বিরোধী বাতাবরণ দেশজুড়ে তৈরি হলে কেন্দ্রে প্রধান বিরোধী দল হিসাবে তাঁদেরই লাভ হবে। বিজেপি ও অণ্ণারা যে রিপোর্টের বিরোধিতা করবে, তার আগাম আশঙ্কা কংগ্রেসের ছিলই। সেই কারণে গতকালই সনিয়া গাঁধী বলেছিলেন, কার্যকরী লোকপাল গঠনে সরকার বদ্ধপরিকর। বিরোধীরা সংসদে গোল পাকিয়ে বাধা না দিলে চলতি অধিবেশনেই লোকপাল বিল পাশ করানো সম্ভব হবে। কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, বিজেপির বিরোধিতায় লোকপাল বিল চলতি অধিবেশনে পাশ করানো সম্ভব না হলে কংগ্রেস এ কথাই বলবে যে, সরকারের উদ্যোগ ও আন্তরিকতার অভাব ছিল না। কিন্তু বিজেপি-র বিরোধিতায় তা সম্ভব হল না। |