রাস্তা এমন হবে যেন গাড়িতে চা খাওয়ার সময় গায়ে চলকে না পড়ে। পুণে-মুম্বই এক্সপ্রেসওয়ে তৈরির শর্ত ছিল এটাই। শর্তদাতা ছিলেন নিতিন গডকড়ী। মহারাষ্ট্রের তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী। বর্তমানে বিজেপি সভাপতি।
সিঙ্গাপুরে ছিমছাম সুন্দর নির্মাণশৈলী দেখে সফরসঙ্গী সচিবকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কেন ভারতে এমন হয় না। সচিব জানান, নির্মাণবিধি পুরনো। দীর্ঘদিন তার বদল হয়নি। রাজ্যে ফিরেই তাই বিধি বদলের নির্দেশ।
বুধবার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট-কলকাতার (আইআইএমসি) ছাত্রদের মুখোমুখি হয়েছিলেন নিতিন। একে রাজনীতিবিদ। তায় প্রাক্তন মন্ত্রী। স্বাভাবিক ভাবেই ছাত্রদের মনে সন্দেহ। সম্ভবত তা আঁচ করেই গডকড়ী বলেন, “পুণে এক্সপ্রেসওয়েতে শর্ত যে রাখা হয়েছিল, তা পরীক্ষা করে দেখেছিলাম।” আবার অকপটে এও জানালেন, নির্মাণবিধি কতটা বদল হয়েছিল, তার খুঁটিনাটি তিনি জানেন না। কারণ তিনি প্রযুক্তিবিদ নন। কিন্তু বিধি বদলালে নির্মাণশৈলী কী রকম বদলাতে পারে, সেটা দেখে পছন্দ হয়েছিল। তার ভিত্তিতেই বিধি বদলে সায়।
তাঁর আমলে মহারাষ্ট্রে পরিকাঠামো উন্নয়নের একটার পর একটা ঘটনার বিবরণ দিচ্ছিলেন গডকড়ী। মাঝেমধ্যেই তুমুল হাততালি বা টেবিল চাপড়ানোর মধ্যে চাপা পড়ে যাচ্ছিল তাঁর কথা। গডকড়ীর বক্তব্য, দেশ পরিচালনায় চাই দক্ষ ও কাজের লোক। অতএব ম্যানেজমেন্ট বা পরিচালন শিক্ষার অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের কাছে তাঁর আর্জি ভোট দেওয়ার সময় অন্য বিষয় নয়, দক্ষতার মাপকাঠিই যেন প্রাধান্য পায়।
নিতিন মনে করেন, প্রশাসনের লাল ফিতের ফাঁসই উন্নয়নের অন্তরায়। কারণ দ্রুত সিদ্ধান্ত তো দূরের কথা, সরকার কার্যত সিদ্ধান্তই নিতে পারে না। বৈঠকের পর বৈঠক হয়। সাব-কমিটি তৈরি হয়। আর কাজ পড়ে থাকে বছরের পর বছর। তাই ৪২০ কোটি টাকার ‘মুম্বই-বান্দ্রা সি লিঙ্ক’-এর অর্ধেক তৈরি করতে শেষ পর্যন্ত খরচ হয়ে যায় প্রায় চার গুণ টাকা। কিন্তু নিতিনের দাবি, ইচ্ছে থাকলে উপায়ও হয়। সেই বিশ্বাসেই কিন্তু পরিকাঠামোর জন্য লগ্নি জোগাড় করতে বাজার থেকে টাকা তুলতে নেমেছিলেন তাঁরা। যত টাকা তোলার লক্ষ্যমাত্রা ছিল, শেয়ার বাজার থেকে পেয়েছিলেন তার দ্বিগুণেরও বেশি। কাজ যাতে পড়ে না থাকে, সে জন্য নির্মাতাদের বলা হয়েছিল নির্দিষ্ট সময়ের এক দিন আগে কাজ শেষ করলে মিলবে পুরস্কার। এক দিন পরে হলে জরিমানা। গডকড়ীর আমলেই সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে প্রকল্প তৈরির নয়া নজির গড়ে উঠেছিল সে রাজ্যে।
যিনি নিজে এত সংস্কারপন্থী, তাঁর দলই কেন খুচরো বিপণনে বিদেশি লগ্নিতে বাধা দিচ্ছে? প্রশ্নটা যে উঠবেই, তা সম্ভবত আঁচ করেছিলেন গডকড়ী। ওজন কমাতে সদ্য অস্ত্রোপচার করিয়ে ওঠা বিজেপি সভাপতি দক্ষ পরিচালকের মতো এড়ালেন সেই গুগলি।
সহাস্যে বললেন, “আমরা মনে করি রাজনীতিকে শিক্ষার বাইরে রাখা উচিত। তাই এখানে এ নিয়ে কিছু বলতে পারব না। বাইরে গেলে বলতে পারি।” ফের হাততালিতে ফেটে পড়ল আইআইএম-সি-র ক্লাসরুম। |