রাজ্যে তাদের একজনও বিধায়ক নেই। সাংসদ মাত্রই একজন। দার্জিলিংয়ে। তা-ও তা গোর্খা জনমুক্তি নেতা বিমল গুরুঙ্গের ‘সৌজন্যে’। পৃথক গোর্খাল্যান্ডের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার বিনিময়ে। তা সত্ত্বেও বুধবার ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেলে সমাবেশে ‘সংগঠিত’ ভিড় করেছিল রাজ্য বিজেপি। গোটা রাজ্য থেকে বাস-ম্যাটাডর ইত্যাদিতে করে লোক আনা হয়েছিল। তবে বড় কোনও মিছিল হয়নি। যে কারণে হয়নি তেমন যানজটও। দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে ভোট থাকায় সে দিক থেকেও লোক আনা যায়নি।
ভিড় দেখে দলের নেতারা মন্তব্য করছেন, ‘অভূতপূর্ব’। এ রাজ্যে বেশ কয়েক বছর আগে তাদের একজন বিধায়ক নির্বাচিত হলেও তারপর থেকে বিধানসভা ভোটে খাতা খুলতে পারেনি বিজেপি। শেষ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু এ দিন ধর্মতলার সভায় ভিড় দেখে রাজ্য নেতৃত্ব ‘আশাবাদী’। তাঁদের দাবি, ‘আশাবাদী’ দলের সর্বভারতীয় সভাপতি নিতিন গডকড়ীও। যিনি প্রকাশ্যেই বলেছেন, এ রাজ্যে তাঁরাই তৃণমূল এবং সিপিএমের ‘বিকল্প’ হয়ে উঠবেন। প্রতিশ্রুতি মতোই ওই সভামঞ্চে বিজেপি-র মুর্শিদাবাদ জেলার কর্মীরা গডকড়ীকে বহরমপুরের ১১ কেজির ছানাবড়া এবং রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহকে ৫ কেজি ছানাবড়া উপহার দেন। গডকড়ী বা রাহুল কাউকেই অবশ্য মঞ্চে ওই ছানাবড়া খেতে দেখা যায়নি। |
কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে চন্দন মিত্র, সিদ্ধার্থনাথ সিংহ, দেবদাস আপ্টে এবং দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল ছাড়াও প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথাগত রায়, তপন শিকদার, সাধারণ সম্পাদক শমীক ভট্টাচার্য প্রমুখ সভায় ছিলেন। আজ, বৃহস্পতিবার থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত একগুচ্ছ কর্মসূচি সভা থেকে ঘোষণা করা হয়েছে। তার মধ্যে মূল্যবৃদ্ধি, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি পুঁজি, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল তুলে দেওয়ার প্রতিবাদ যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে উত্তরবঙ্গ এবং কৃষকের উন্নতির দাবিও। তবে গডকড়ীর বক্তৃতা চলাকালীন এক যুবক হঠাৎ হাতে-লেখা একটি লিফলেট ছড়িয়ে নিজের মাথায় কেরোসিন তেল ঢালেন। বিজেপি কর্মীরা তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যান। ওই যুবক হুগলি জেলায় তাঁর গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দাবিতে ওই কাণ্ড করেছেন বলে তাঁর লিফলেট থেকে জানা যায়।
ওই সামান্য বিচলনটুকু বাদ দিলে বিজেপি সভাপতির গোটা বক্তৃতা জুড়ে প্রত্যাশিত ভাবেই ছিল গাঁধী পরিবার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা। দুর্নীতি এবং মূল্যবৃদ্ধির প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে একহাত নিয়ে গডকড়ী বলেন, “প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হলে উনি বলেন, জানি না। কিছুই যখন জানেন না, তা হলে প্রধানমন্ত্রী আছেন কেন? মন্ত্রীরাও ওঁর কথা শোনেন না। উনি বরং আসন ছেড়ে স্বর্ণমন্দিরে গিয়ে ভজন-কীর্তন করুন!” মূলত ইউপিএ সরকারের দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও কালো টাকা উদ্ধারের দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে গডকড়ী বলেন, “কংগ্রেস মা-ছেলের দল। প্রণব’দা (কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়) বর্ষীয়ান নেতা। তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ারও স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু সনিয়া গাঁধীর ঘরে ঢুকে কোনও প্রশ্ন করতে পারবেন না! কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নেতৃত্বে যেতে পারবেন না। সেখানে যাবেন শুধু গাঁধী পরিবারের লোক।” পাশাপাশিই গডকড়ীর উক্তি, “আমি বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি। দলের যে কোনও কর্মকর্তা কিন্তু অনায়াসে আমার ঘরে ঢুকে পড়তে পারেন!”
কলকাতায় দাঁড়িয়ে কংগ্রেসকে ‘সহযোগিতা’ করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও দুষেছেন গডকড়ী। তাঁর বক্তব্য, ইউপিএ-২ সরকারের কোনও দুর্নীতির প্রতিবাদই মমতা করছেন না। গডকড়ীর প্রশ্ন, “মমতাজি, আপনি সিপিএম সরকারের দুর্নীতি, ভ্রান্ত নীতির
বিরুদ্ধে এত সরব ছিলেন। তা হলে আজ চুপ কেন?” |