সাধারণত ১২ জন মিলে তৈরি হয় বাসন তৈরির এক একটি ইউনিট। পিতল, দস্তা, জার্মান সিলভার গলিয়ে তার মিশ্রণ মাটির ছাঁচে ঢেলে তৈরি করা হয় বিভিন্ন বাসন। এর পরে সেই বাসন ঘষে-মেজে কারুকাজ করার পালা। শহরের কামারপাড়ার বাসিন্দা মথুর দত্ত, সুনীল কাইতিরা বলেন, ‘‘কাঁচামালের খুব অভাব। ছাঁচ তৈরির জন্য বিশেষ ধরনের মাটি আর এলাকায় মেলে না। ভাঁটি চালানোর জন্য দরকার কয়লা। তার জন্য সরকার ভর্তুকি দেয় না। তার উপরে কয়লার দাম এখন অনেক বেড়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাসন শিল্প চালানো যাচ্ছে না।” তিনি জানান, এক সময় হাওড়া ও পানাগড় থেকে তাঁরা কাঁচামাল কিনে আনতেন। কিন্তু বাসন বিক্রি কমে যাওয়ায় আর আগের মতো কাঁচামাল কেনার জন্য টাকা ঢালতে পারেন না। তাই অধিকাংশই আটকে গিয়েছেন মহাজনের ফাঁদে। বাসনশিল্পীদের কথায়, “এখন মহাজনদের কাছ থেকে কাঁচামাল কিনতে হয়। চুক্তি অনুযায়ী তাঁদের বাজারের থেকে কম বাসন বিক্রি করতে হয়। সারা দিন হাড়ভাঙা খেটেও শিল্পীদের ৫০-৬০ টাকার বেশি রোজগার হয় না।”
স্টেনলেস স্টিলের বাসন বাজারে আসার পর থেকেই কাঁসা-পিতলের বাসন শিল্পীরা অশনিসংকেত দেখছিলেন। তাঁদের কথায়, “বছর কুড়ি আগেও আমাদের বাসনের কদর ছিল। রাজ্যের নানা জায়গায় তো বটেই ভিন রাজ্য, এমনকি নেপাল ও বাংলাদেশেও এখানকার তৈরি বাসন যেত। আর এখন, সেই বাজার ডালপালা গুটিয়ে ফেলেছে। বাঁকুড়া আর মেদিনীপুরেই অল্প কিছু বাসন বিক্রি হয়।” শিল্পীরা জানান, কাঁচামাল ও অন্যান্য খরচ বেশি হওয়ায় কাঁসা-পিতলের বাসনের দাম তাঁরা কমাতে পারছেন না। অন্য দিকে, স্টেনলেস স্টিলের বাসনের দাম অপেক্ষাকৃত কম। তাই তাঁদের তৈরি বাসন স্টেনলেস স্টিলের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে না। গত কয়েক বছরে অনেক বাসনশিল্পীই অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁরা কেউ পেটের দায়ে তাঁত বোনেন, কেউবা তৈরি করেন শালপাতার থালাবাটি।
বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা তরুণ কাইতি এখন শালপাতার থালা বানান। ওই এলাকারই বাসিন্দা সতীনাথ কর্মকার বাসন ছেড়ে এখন বালুচরী বোনেন।
এই অবস্থায় তাঁদের অনুরোধ, সরকার কাঁচামাল সরবরাহ এবং বিপণনের বিষয়টি দেখলে তাঁরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবেন। বিষ্ণুপুরের ব্লক ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট অফিসার প্রশান্ত কুমার মণ্ডল বলেন, ‘কাঁসা শিল্পের রুগ্ণ অবস্থার কথা জানি। কয়লা একক ভাবে শিল্পীদের সাহায্য করার অসুবিধা রয়েছে। সমবায় সমিতি গঠন করা দরকার। সমিতিগুলিকে সাহায্য করার সুযোগ রয়েছে।’ তাঁর আরও পরামর্শ, কাঁসার বাসনের বিক্রি যেহেতু কমেছে, সেই জন্য তাঁদের বিভিন্ন ধাতব যন্ত্রাংশ তৈরি করতে বলা হয়েছে। আগ্রহীদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। শিল্পীরা জানিয়েছেন, আগে সমবায় গড়েছিলেন। নানা সমস্যায় তা ভেঙে গিয়েছে। অনেকে আবার এই পেশাতেই থেকে যেতে বদ্ধপরিকর। |