নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করা যায়নি। দেড় বছর ধরে চলছে সৌন্দর্যায়ন ও উন্নয়নের কাজ। তাই পর্যটকদের জন্য ওই সময়কালে বন্ধ রয়েছে বক্রেশ্বর উষ্ণ প্রস্রবন। এত দীর্ঘ সময় ধরে বক্রেশ্বর ধামের মূল আকর্ষণ বন্ধ থাকায় পর্যটকেরা যেমন বক্রেশ্বরে আসা থেকে মুখ ফিরিয়েছেন তেমনি একই ভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন ওই উষ্ণপ্রস্রবন ও দর্শনীয়স্থানের উপরে নির্ভরশীল ব্যবসাদার, বক্রেশ্বর শিব মন্দিরের সেবাইত, পাণ্ডা থেকে শুরু করে এলাকার মানুষ।
স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে আর কত সময় লাগবে সৌন্দর্যায়নের কাজ শেষ করতে? কারণ বক্রেশ্বর উষ্ণ প্রস্রবন বন্ধ থাকায় গত বছর শীতকালে মার খেয়েছে ব্যবসাপত্র। এ বারও যদি বন্ধ থাকে উষ্ণ প্রস্রবনের ঘাট তা হলে সংসার কী ভাবে চলবে সেই চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন ওই পর্যটন কেন্দ্রের উপরে নির্ভরশীল পরিবারগুলি। বক্রেশ্বরের সেবাইত সমিতির সম্পাদক রাসবিহারি আচার্য, সেবাইত তাপস চৌধুরীরা বলেন, “স্থানীয় গোহালিয়াড়া পঞ্চায়েত, বিধায়ক এমন কী সপ্তাহ খানেক আগে বক্রেশ্বর পরিদর্শনে আসা পর্যটন মন্ত্রী-- সকলকেই অনুরোধ জানানো হয়েছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উষ্ণ প্রস্রবনের ঘাট চালু করা হোক। যাতে পর্যটকেরা বক্রেশ্বর থেকে মুখ ফিরিয়ে না থাকেন। কিন্তু কাজের যা গতি তাতে শীঘ্রই এই ঘাট খুলতে পারে বলে সেই সম্ভাবনা খুবই কম!”
তাঁদের দাবি, “যোগাযোগ করা হয়েছিল গোহালিয়াড়া পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের দিলীপ মালের সঙ্গে।” দিলীপবাবুর পাল্টা দাবি, “বাম সরকারের পর্যটন মন্ত্রী মানব মুখোপাধ্যায় ২০১০-এর এপ্রিল মাসে যখন বক্রেশ্বর উষ্ণ প্রস্রবনকে ঘিরে উন্নয়ন মূলক কাজের লিান্যাস করেছিলেন, কথা ছিল এক বছরের মধ্যে সেটি সম্পূর্ণ হবে। কিন্তু এত দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার জন্য এলাকার মানুষের চরম অসুবিধা হচ্ছে। কারণ পর্যটকেরা যদি গরম জলে স্নান করতে না পারেন তা হলে তাঁরা এখানে আসবেন কেন? কিন্তু কাজে ঢিলেমি দেখে এলাকার বিধায়ক স্বপন ঘোষ ও প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।” |
প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যায়ে ভোল পাল্টে পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হিসেবে তুলে ধরার ইচ্ছে নিয়েই পর্যটন দফতর এক ঠিকাদারকে দিয়ে এ কাজ করাচ্ছে। কিন্তু কাজে দেরি হওয়ায় পর্যটন শিল্প মার খাচ্ছে দেখে একট মাঝামাঝি সমাধান সূত্র বের করার চিন্তা ভাবনা শুরু হয়েছে। তৃণমূল বিধায়ক স্বপন ঘোষ বলেন, “এক বছরের কাজ এ ভাবে দেড় বছর চলেও শেষ হয়নি দেখে বিষয়টি পর্যটনমন্ত্রী রচপাল সিংহকে জানিয়েছি। উনি কথা দিয়েছেন ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকেই কাজ শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু যা খবর পাচ্ছি কাজের বরাদ পাওয়া ঠিকাদার কাজের এখনও কাজে গতি আনতে পারেনি। নির্দিষ্ট ময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হলে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে অন্তত উষ্ণ প্রস্রবনের ঘাট পর্যটকের জন্য খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। বাকি কাজ পাশাপাশি চলবে।”
প্রায় একই বক্তব্য মহকুমাশাসক সুজয় আচার্যের। তিনি বলেন, “বিষয়টি আমার নজরে আছে। পর্যটন দফতরকেও বলা হয়েছে যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করতে। কিন্তু সেটা শেষ পর্যন্ত না হলে উষ্ণ প্রস্রবনটি পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।”
উষ্ণ প্রস্রবনে গিয়ে দেখা গেল, মূল দরজায় তালা বন্ধ। ঠিকাদারের লোকেদের ডাকাডাকি করে দেখা গেল, বহুদিন ব্যবহার না করায় জলে শ্যাওলা, নোংরা ভাসছে। চারি দিকে টাইলস ছড়ানো। রঙের কাজেও হাত পড়েনি। বাকি আছে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজও। বেরিয়ে আসার মুখে বক্রেশ্বর মন্দিরের পুরোহিত জয়ন্ত আচার্য, হোটেল মালিক রাজেন আচার্য, হস্তশিল্পের স্টলের মালিক মানব মশান বলেন, “শীত ঢুকবে ঢুকবে করছে। অন্য বারে এ সময় ভিড় লেগে যেত। এখন অনেক কম। যদি উষ্ণ প্রস্রবন শীঘ্রই চালু হয় তা হলে বেঁচে যাই।” |