আটকানোর হাতিয়ার তো রাজ্যের হাতেই, তবুও বিরোধিতা নিয়ে ধন্দ
খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সুর চড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ-সহ বিভিন্ন রাজ্য। কিন্তু তাদের এই নাছোড় প্রতিবাদে বিস্মিত রাজনৈতিক এবং আর্থিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই। তাঁদের মতে, দেশে বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় (মাল্টি ব্র্যান্ড রিটেল) বিদেশি লগ্নির দরজা হয়তো খুলে দিতে পারে কেন্দ্র। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোন সংস্থা দেশের কোথায় ব্যবসা করতে পারবে, তা নির্ধারণের অধিকার তো রয়েছে রাজ্যেরই কাছে। অনিচ্ছুক রাজ্য সরকারের হাতে সম্পূর্ণ রাশ রয়েছে ‘অপছন্দের বিদেশি সংস্থা’কে সেখানে আটকে দেওয়ার। কিন্তু তা সত্ত্বেও স্রেফ আগাম আশঙ্কা থেকে তারা কেন এমন এককাট্টা বিরোধিতার পথে হাঁটছে, ধন্দ তৈরি হয়েছে তা নিয়েই।
ওয়ালমার্ট, ক্যারেফোর, টেস্কো-র মতো বিপুল আয়তনের বহুজাতিক লগ্নির ঝুলি হাতে এক বার দেশে পা রাখলে, ‘নিজের এলাকায়’ তাদের ব্যবসা করা কি সত্যিই রুখতে পারবে কোনও রাজ্য সরকার?
নিয়ম অনুযায়ী, এর উত্তর হ্যা।ঁ কারণ, খুচরো ব্যবসা এমন একটি ক্ষেত্র, যার জন্য শুধু কেন্দ্রের সবুজ সংকেতই যথেষ্ট নয়। কোথাও ব্যবসা করতে গেলে, তার জন্য প্রায় ৫০টির মতো অনুমোদন নিতে হয় সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের কাছ থেকেও। যার অধিকাংশই এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, তা ছাড়া ব্যবসা চালানো অসম্ভব। তাই কেন্দ্রের অনুমোদনের পরও কোনও রাজ্যের শাসকদল বেঁকে বসলে, সেখানে দাঁত ফোটানো বিশ্বের বৃহত্তম খুচরো ব্যবসা সংস্থা ওয়ালমার্টের পক্ষেও শক্ত। শুধু তাই নয়। এমন অনেক লাইসেন্স রাজ্যের হাতে রয়েছে, যা নির্দিষ্ট সময় অন্তর নবীকরণ সাপেক্ষ। ফলে, সমস্যা বুঝলে রাজ্যের কাছে সুযোগ রয়েছে পরে তা বাতিল করারও।
এ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কী কী অনুমোদন নিতে বাধ্য খুচরো ব্যবসা সংস্থাগুলি?
এর তালিকা যথেষ্ট লম্বা। যেমন এর মধ্যে রয়েছে বিপণি খোলা ও ব্যবসা শুরুর জন্য স্থানীয় পুরসভার ছাড়পত্র, খাদ্যপণ্য বিক্রির অনুমোদন, শিশু খাদ্যের (বেবি ফুড) বিশেষ লাইসেন্স ইত্যাদি। কন্ট্রোলার অফ রেশনিংয়ের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে খাদ্যপণ্য মজুত করার। সপ্তাহে সাত দিন কাজের ছাড়পত্র দেবে শ্রম কমিশন। বিভিন্ন পণ্যে কীটনাশক ব্যবহারের জন্য অনুমতি নিতে হবে খাদ্য কমিশনারের কাছ থেকে। এ ছাড়াও বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং লাগানো থেকে শুরু করে কর্মীদের ক্যান্টিন চালানো পর্যন্ত বিভিন্ন কাজে অনুমোদনের জন্য রাজ্যেরই মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে সংস্থাকে।
খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিরোধিতার পক্ষে রাজনীতির যুক্তি হল, এক বার খুচরো ব্যবসার বহুজাতিকেরা রাজ্যে পা রাখলে, মারা পড়বে অসংগঠিত ক্ষেত্র। মার খাবে পাড়ার ছোট দোকানগুলি। কাজ হারাবেন অসংখ্য মানুষ। এই সংস্থাগুলির চুক্তি-চাষের জালে জড়িয়ে যাবেন কৃষকরাও। তা ছাড়া, কৃষি এই সব বহুজাতিকের কব্জায় চলে এলে, ক্রমশ দাম বাড়বে সুলভ সাধারণ পণ্যেরও। ক্রমশ তা চলে যাবে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।
কিন্তু পাল্টা যুক্তি হল, সংস্থা রাজ্যের সীমানায় পা রাখলে তবেই তো এ সব হওয়া সম্ভব। লাইসেন্স দেওয়া বা না-দেওয়ার যে প্রভূত ক্ষমতা রাজ্যের হাতে রয়েছে, তাতে তো সহজেই নিজের তল্লাটে এই বিদেশি লগ্নির ঢুকে পড়া আটকাতে পারে কোনও রাজ্য। তাই তা সত্ত্বেও তারা কেন গোড়া থেকেই রাজনৈতিক বিরোধিতার পথ বেছে নিচ্ছে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা থেকে যাচ্ছে বলে অনেকেরই অভিমত।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.