|
|
|
|
প্রবল চাপ সঙ্ঘ পরিবারের |
‘উদার’ জেটলিও বলছেন, বিদেশি পুঁজি এখন নয় |
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • নয়াদিল্লি |
সঙ্ঘ পরিবারের চাপে গোটা বিজেপি এখন একজোট হয়ে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিরোধিতা করছে। যার ফলে অরুণ জেটলির মতো উদার, সংস্কারপন্থী নেতাদেরও তাতে সুর মেলাতে হচ্ছে।
অথচ ২০০২ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারেরই বাণিজ্যমন্ত্রী মুরাসলি মারান খুচরো ব্যবসায় ১০০ শতাংশ বিদেশি পুঁজির পক্ষে সওয়াল করেই মন্ত্রিগোষ্ঠীর কাছে নোট পাঠিয়েছিলেন। দু’বছর পর এনডিএ-র নির্বাচনী ইস্তাহারেও ২৬ শতাংশ বিদেশি পুঁজির পক্ষে সওয়াল করা হয়। ক’দিন আগেও দলের অনেক নেতাই যে দলীয় বৈঠকে বিদেশি পুঁজির পক্ষে সওয়াল করেছেন, ঘরোয়া স্তরে বিজেপি-র অনেক নেতাই তা স্বীকার করছেন। নরেন্দ্র মোদীর মতো নেতারা এখন বাধ্য হয়ে দলের অবস্থানে সায় দিলেও চড়া সুরে খুচরো ব্যবসার বিরোধিতা করছেন না।
বিষয়টি নিয়ে আরএসএস কিন্তু বরাবরই একই অবস্থানে। বাজপেয়ী আমলে বিজেপি নেতৃত্ব যখন খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি আনার কথা বিবেচনা করছিলেন, সেই সময়ও আরএসএস, স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ রে-রে করে উঠেছিল। যে কারণে শরিক ডিএমকে নেতা মারান ১০০ শতাংশের সপক্ষে সওয়াল করলেও বিজেপি তখন কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। আরএসএস এখনও এর কঠোর বিরোধিতা করছে। সঙ্ঘের মুখপাত্র রাম মাধব জানান, “বিজেপি বা বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলি কী করবে জানি না, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি আমাদের কাছে কোনও ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।” এমনকী ২০০৪ সালে এনডিএ-র নির্বাচনী ইস্তাহারে যে ২৬ শতাংশের কথা বলা হয়েছিল, তা-ও এখন আর গ্রহণযোগ্য নয় আরএসএসের কাছে। রাম মাধবের কথায়, “২৬ শতাংশ না ৫১ শতাংশ, প্রশ্নটা তা নয়। আমরা এর পুরোপুরি বিরোধী।”
খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ দেখানো ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের কুশপুতুল পোড়ানো শুরু করে দিয়েছে। আগামিকাল ব্যবসায়ী সংগঠনগুলি যে ভারত-বন্ধের ডাক দিয়েছে, তাতেও পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছে সঙ্ঘ। আরএসএসের ‘আশীর্বাদধন্য’ বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ীও সকলকে এই বন্ধ সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন। সঙ্ঘ যখন বিদেশি লগ্নির বিরুদ্ধে এত কঠোর অবস্থান নিয়ে চলছে, বিজেপি নেতাদের পক্ষেও আর ভিন্ন অবস্থান নেওয়ার অবকাশ নেই। গোটা দল এখন বিরোধিতার সুরেই একজোট হয়েছে। জেটলির মতো উদার নেতারাও বর্তমান পরিস্থিতিতে আর সঙ্ঘের নির্দেশ অমান্য করতে চাইছেন না। তিনিও এখন বোঝানোর চেষ্টা করছেন, বাণিজ্যমন্ত্রী থাকার সময় আমেরিকার চাপ থাকলেও তিনি একাধিক ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় বিদেশি পুঁজির সিদ্ধান্ত নেননি। তবে ভবিষ্যতে বিদেশি লগ্নির পথও সুকৌশলে খোলা রাখছেন জেটলি। এক বিবৃতিতে তিনি আজ বলেছেন, “আমরা বিদেশি পুঁজির বিরোধী নই। কিন্তু এক ছাদের নীচে একাধিক ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় এখন বিদেশি পুঁজি এলে সব থেকে বেশি ক্ষতি হবে উৎপাদন শিল্পের। যত ক্ষণ না এই ক্ষেত্রের পরিকাঠামো উন্নত হচ্ছে, তত ক্ষণ খুচরো ব্যবসায় বিদেশি পুঁজি আনা থেকে বিরত থাকতে হবে। ভারতে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি পুঁজিকে আসতে দেওয়ার সময় এখনও আসেনি।”
দলের অনেকেই মনে করছেন, মনে মনে বিদেশি লগ্নির সমর্থক জেটলি কৌশলে ভবিষ্যতের জন্য পথ খোলা রেখে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করলেন। এই কাজটি তিনি আগেও করেছেন। ২০০৪ সালে বিজেপি-র ‘ভিশন ডকুমেন্ট’-এর দায়িত্বে থাকার সময় তিনি খুচরো ব্যবসায় বিদেশি পুঁজির বিরোধিতা করেননি। বরং নীরব থাকারই কৌশল নিয়েছিলেন। কিন্তু এ ব্যাপারে কট্টর বিরোধী মুরলী মনোহর জোশীর মতো নেতাদের বক্তব্য, “আমেরিকা প্রচুর টাকা ঢেলে চাপ দিয়ে এটা করিয়ে নিতে চাইছে। ভবিষ্যতের জন্যও ভারতে এই ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নি আসার পথ বন্ধ করতে হবে।”
সঙ্ঘের চাপ এখন এতই প্রবল যে, ২০০৪ সালের নির্বাচনী ইস্তাহারে কে বা কারা ২৬ শতাংশ বিদেশি লগ্নির বিষয়টি ঢুকিয়েছিলেন, সে ব্যাপারে কোনও নেতাই মুখ খুলতে চাইছেন না। জেটলি থেকে যশবন্ত সিন্হা সকলেরই বক্তব্য, “কে সেটি লিখেছিলেন, তা মনেই পড়ছে না।” তবে যে-হেতু সেটি এনডিএ-র ইস্তাহার ছিল, বিজেপি নেতারা তাতে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। তাঁরা যুক্তি দিচ্ছেন, প্রথমত, এনডিএ-র ইস্তাহারে কোথাও একাধিক ব্র্যান্ডের কথা লেখা নেই, যা নিয়ে এত বিতর্ক। দ্বিতীয়ত, মারান বিজেপি-র নেতা নন, শরিক দলের। জোটের ইস্তাহারে শরিকদের মতকে অনেক সময় গুরুত্ব দিতে হয়। বর্তমানে এনডিএ-র শরিক দল শিরোমণি অকালি দল বিদেশি পুঁজির প্রবেশকে সমর্থন করলেও জেটলির মতো নেতারাই এখন প্রকাশ সিংহ বাদলের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের বিজেপি-র অবস্থানে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। |
|
|
|
|
|