সনিয়ার নির্দেশে প্রধানমন্ত্রীর পাশে দল
তা হলে আমাকে ছেড়ে দিন, মনমোহন অনড়ই
রমাণু চুক্তির মতো খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি নিয়েও রীতিমতো কঠোর অবস্থান নিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। এবং তা এতটাই যে, সরকার ও দলের ঘরোয়া আলোচনায় তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটতে চাইলে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হোক। এ বিষয়ে কোনও সমঝোতা করতে তিনি রাজি নন। সরকার ও দলকে মনমোহন বুঝিয়েছেন, সংস্কারের সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে তা উভয়ের পক্ষেই ইতিবাচক হবে।
প্রধানমন্ত্রী যখন এমন অনমনীয় অবস্থান নিয়েছেন, তখন সনিয়া গাঁধীর নির্দেশে প্রাথমিক জড়তা ও সংশয় কাটিয়ে আজ কংগ্রেসও তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে। আজই প্রথম সাংবাদিক সম্মেলন করে কংগ্রেস জানিয়েছে, খুচরো-বিতর্কে দল সরকারের সঙ্গে সহমত। আবার আজই প্রকাশিত কংগ্রেস মুখপত্রের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, “২০০৪ সালেই সনিয়া গাঁধী বুঝেছিলেন, বাজার নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতিতে দেশের ভাল হবে।”
দল-সরকারের ঐক্যবদ্ধ চেহারা তুলে ধরার চেষ্টার পাশাপাশি সংসদের অচলাবস্থা কাটাতেও আজ উদ্যোগী হয়েছে কংগ্রেস। দলের তরফে মুলতুবি প্রস্তাব গ্রহণ করে সংসদে বিতর্কের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বিরোধীদের। তবে সেই প্রস্তাবের ভাষা নিয়ে এখনও আপত্তি রয়েছে বিজেপি-র। মুলতুবি প্রস্তাব মেনে নেওয়ার বার্তা দিতে আজ সন্ধ্যায় লালকৃষ্ণ আডবাণীকে ফোন করেন লোকসভার নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায়। আডবাণী তাঁকে জানিয়ে দেন, প্রস্তাবে খুচরো প্রসঙ্গে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের কথা রাখতে হবে। মুলতুবি প্রস্তাবের ভাষা নিয়ে এই টানাপোড়েনের মাঝেই লোকসভায় সংখ্যগরিষ্ঠতার অঙ্কটা ছকে ফেলার প্রক্রিয়া জারি রেখেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা চলছে। আর এক শরিক ডিএমকে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে তারা সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দেবে না।
তবে খুচরো-বিতর্কে সরকার ও কংগ্রেসের ঐক্যবদ্ধ সুরই আজ সব থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। সূত্রের খবর, দলকে এই অবস্থানে তুলে আনতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতাদের বক্তব্য, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির যে সিদ্ধান্ত কেন্দ্র নিয়েছে, তা আগ্রাসী ভাবে প্রচার করে কংগ্রেসই রাজনৈতিক ফায়দা পেতে পারে। পরমাণু চুক্তির সময়েও কংগ্রেসের মধ্যে প্রাথমিক বিভ্রান্তি ছিল। দলের নেতাদের অনেকেই প্রথমে বুঝতে পারেননি যে, আক্রমণাত্মক প্রচার ইতিবাচক ফল দিতে পারে। অথচ পরে সেই পথে হেঁটেই জনসমর্থন পেয়েছে দল। এ বারেও তার অন্যথা হওয়ার আশঙ্কা নেই।
কারণ এক, ইউপিএ-র প্রথম পর্বে বামেদের আপত্তি ও দ্বিতীয় পর্বে শরিকদের চাপে মনমোহন যে সংস্কার কর্মসূচিকে এগোতে পারেননি, তা সাধারণ মানুষ বোঝেন। সেই পঙ্গু অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে প্রধানমন্ত্রী কঠোর অবস্থান নিচ্ছেন, এমন বার্তা গেলে, মধ্যবিত্ত শ্রেণির সমর্থন পাওয়া যাবে। দুই, সামগ্রিক ভাবে সংবাদমাধ্যম কেন্দ্রের এই নীতির পক্ষে। জনমতেও তার প্রভাব পড়ছে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কংগ্রেস মানুষকে বোঝাতে পারে যে, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি এলে কৃষকরা যেমন ভাল দাম পাবেন, তেমনই পাইকারি ও খুচরো দামের ফারাক কমে উপকৃত হবেন ক্রেতারা। ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের আগে মানুষ হাতেনাতে সেই সুফল পেলে রাজনৈতিক ভাবে কংগ্রেসেরই লাভ হবে।
কিন্তু তাই বলে কি এখনও দলের মধ্যেই বেসুর বাজছে না? গত কাল সঞ্জয় সিংহের পর আজ আরও এক কংগ্রেস সাংসদ প্রবীণ অ্যারন প্রকাশ্যে কেন্দ্রের নীতির বিরোধিতা করেছেন। একই রকম মন্তব্য করেছেন কেরলের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রমেশ চেন্নিথালা। কংগ্রেস মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারি অবশ্য বলেন, “এটা ওঁদের ব্যক্তিগত মত। দল ওঁদের সংশয় দূর করতে সচেষ্ট হবে।” বস্তুত আজ সকালেই কংগ্রেস সংসদীয় দলের বৈঠকে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির সম্ভাব্য সুফল ব্যাখ্যা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। কাল কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী একই ভাবে কংগ্রেস সাংসদদের বোঝাবেন।
সংসদীয় দলের বৈঠকের পাশাপাশি আজ দু’দফায় বৈঠকে বসে কংগ্রেস কোর গ্রুপ। সেখানে স্থির হয়, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসার প্রশ্ন নেই। তবে সংসদ চালাতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিষয়ে সুনিশ্চিত হয়ে বিরোধীদের আনা মুলতুবি প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাক সরকার। সংখ্যাগরিষ্ঠতা সুনিশ্চিত করতে মমতা-সহ সরকারের শরিক এবং লালু-মুলায়ম-মায়াবতীর মতো সমর্থক দলের সঙ্গে আলোচনা চালানো হোক। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতা সুনিশ্চিত না করা গেলে সরকার সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে না এলেও নীতি প্রণয়ন কিছুটা পিছিয়ে দিক।
মনমোহনের কড়া অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে শরিক-সমর্থকদের বোঝানোর উপরেই সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে কংগ্রেস। ইতিমধ্যে ডিএমকে-প্রধান করুণানিধির সঙ্গে কথা বলেছেন প্রণববাবু। ডিএমকে সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দেবে না বলে জানিয়েছে। আবার কোর গ্রুপের প্রথম বৈঠকের পর লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মা। তৃণমূল যাতে সরকারের বিরুদ্ধে ভোট না দেয় সে জন্য তাঁকে বুঝিয়েছেন। যদিও মমতার তরফ থেকে ইতিবাচক বার্তা এখনও পাওয়া যায়নি। এই অবস্থায় কংগ্রেসের রাজনৈতিক ম্যানেজাররা মুলায়ম-মায়াবতী-লালুকেও বোঝাচ্ছেন।
কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, দলও চায় যে সংসদে আলোচনা হোক। পরমাণু চুক্তির সময় দল ও সরকার যে ভাবে সংসদকে ব্যবহার করে মানুষকে বুঝিয়েছিল, এ বারও তাই করতে চাইবে। প্রথমে এই নীতির সম্ভাব্য সুফল তুলে ধরা হবে। সেই সঙ্গে এ-ও বলা হবে যে, তিন ধরনের কারণের জন্য কিছু রাজনৈতিক দল এর বিরোধিতা করছে। মতাদর্শগত কারণে বিরোধিতা করছেন বামেরা। কিন্তু ওঁদের জবাব দিতে হবে, কী করে চিন, ভিয়েতনাম, কিউবার মতো কমিউনিস্ট দেশগুলি এই নীতি প্রণয়ন করেছে? বিজেপি আবার সুবিধাবাদের রাজনীতি করছে। কারণ ন’বছর আগে তাদের নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারই খুচরো ব্যবসায় ১০০% বিদেশি লগ্নির প্রস্তাব এনেছিল। এ ছাড়া, কিছু দল কেবল সংশয় ও সন্দেহের ভিত্তিতে আপত্তি জানাচ্ছে। সরকার তাদের বোঝানোর চেষ্টা করবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.