স্কুলে ক্রিকেট ক্যাম্পে বাধা, ক্ষিপ্ত পাড়ার ক্লাব
স্কুলমাঠে ক্রিকেট কোচিং ক্যাম্প করতে বাধা দেওয়ায় শিক্ষিকাদের হেনস্থা করার অভিযোগ উঠল বর্ধমান শহরের একটি ক্লাবের বিরুদ্ধে। সঙ্গে রয়েছেন এলাকার কিছু লোকজনও। প্রধান শিক্ষিকা বর্ধমান থানাকে চিঠি দিয়ে স্কুলে পুলিশ মোতায়েন করার আর্জি জানিয়েছেন।
বর্ধমানের পায়রাখানায় মহারানী অধিরানী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় নামে ওই স্কুলে বহু সংখ্যালঘু ছাত্রী পড়ে। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি থাকায় ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তিত শিক্ষিকারা। কিন্তু দিলীপ স্মৃতি সঙ্ঘ নামে একটি স্থানীয় ক্লাবের কর্মকর্তারা সে সব শুনতে নারাজ। তাঁদের দাবি, প্রয়োজনে স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই তাঁরা কোচিং ক্যাম্প চালাবেন।
বুধবার স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। স্কুলের পাঁচিলে ইট ও চক দিয়ে লেখা নানা অশ্লীল কথা ও গালিগালাজ। গেটের বাইরে প্রচুর মানুষ জটলা করছেন। পরিস্থিতি দেখে প্রধান শিক্ষিকা ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়ে থানায় ফোন করেন। পুলিশ আসে। কিন্তু স্কুলের বড় গেট খুলিয়ে পুলিশের গাড়ি ঢোকার সঙ্গে-সঙ্গেই প্রচুর লোকও ঢুকে পড়ে। তাদের দাবি, এই মাঠে খেলতে দিতেই হবে। তবে সন্ধ্যায় পুলিশ বহিরাগতদের বের করে স্কুলের গেটে তালা দিয়ে দিতে বলে।
ঘটনার সূত্রপাত ভাইফোঁটার পরের দিন। স্থানীয় সূত্রের খবর, সে দিন স্কুলমাঠে ক্রিকেট পিচ তৈরির জন্য দু’ট্রাক মাটি আনা হয়েছিল। কিন্তু কেয়ারটেকার তেতনা মণ্ডল স্কুলের বড় গেট খুলে ট্রাক ঢোকাতে দিতে রাজি হননি। এর পরেই স্কুলের শিক্ষিকাদের নামে নানা কটূক্তি করা শুরু হয় বলে অভিযোগ। দেওয়ালে অশালীন কথাবার্তাও লেখা হয়।
তবে প্রধান শিক্ষিকার অনুমতি ছাড়া যে স্কুলমাঠে ক্যাম্প করা সম্ভব নয়, তা বোধহয় ক্লাবের কর্তারা বুঝেছিলেন। গত ৯ নভেম্বর ক্লাবের তরফে প্রধান শিক্ষিকা অপরাজিতা সরকারকে চিঠি লিখে কেবল মাত্র ছুটির দিন স্কুলমাঠে কোচিং ক্যাম্প চালানোর অনুমতি চাওয়া হয়। কিন্তু তিনি রাজি হননি। অপরাজিতা দেবীর অভিযোগ, “অনুমতি না পেয়ে ক্লাবের কর্মকর্তারা রেগে যান। তাঁরা আমায় বলেন, দরকার হলে আমাদের অনুমতি ছাড়াই ওঁরা স্কুলের মাঠে কোচিং ক্যাম্প চালাবেন।”
ঘটনা চরমে ওঠে মঙ্গলবার বিকেলে। স্কুল ছুটির পরে প্রধান শিক্ষিকা ও অন্য শিক্ষিকারা বেরনোর সময়ে শ’দুয়েক স্থানীয় বাসিন্দা স্কুলে ঢুকে পড়েন। তাঁদের মধ্যে কয়েক জন মহিলাও ছিলেন। শিক্ষিকাদের পথরোধ করে তাঁরা গালিগালাজ করতে শুরু করেন বলে অভিযোগ। তাঁদের বক্তব্য, স্কুলের এই মাঠ আসলে পাড়ার সম্পত্তি। সেখানে পাড়ার ছেলেদের খেলতে দিতেই হবে। প্রধান শিক্ষিকার কথায়, “ঘন্টা দেড়েক ধরে গালিগালাজ আর নানা ধরনের হুমকি শুনে আমরা কোনও মতে চলে আসি। কিন্তু ওই সব লোকজন তখনও স্কুলে থেকে যায়।”
দিলীপ স্মৃতি সঙ্ঘের সম্পাদক কাজল ভট্টাচার্য ও যুগ্ম সম্পাদক চিত্তরঞ্জন দাসের বক্তব্য, “গত ৪০ বছর ধরে ওই মাঠে ক্রিকেট অনুশীলন হচ্ছে। কেউ বাধা দেয়নি। আচমকা প্রধান শিক্ষিকা বলছেন, এখানে খেলা যাবে না। তাই পাড়ার লোকেরা রেগে গিয়ে ওঁকে ঘেরাও করেছেন। আমরা স্কুলের লেখাপড়ার ক্ষতি করতে চাই না। ছুটির দিনেই খেলা চালাতে চাই। কোনও খারাপ মন্তব্যও আমরা করিনি।”
ক্লাব ও পাড়ার কিছু লোকজনের মতিগতি বুঝে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারাও বিষয়টি বিশেষ ঘাঁটাতে চাইছেন না। সংশ্লিষ্ট ২০ নম্বর ওয়ার্ডের আরএসপি কাউন্সিলর অপূর্বকুমার দাস কোনও মন্তব্যই করতে চাননি। স্থানীয় তৃণমূল নেতা জয়দেব মুখোপাধ্যায়ের দাবি, এই ঘটনায় তাঁদের দলের কেউ জড়িত নয়। তিনি বলেন, “এলাকায় কোনও খেলার মাঠ নেই। তাই কিছু যুবক ও কিশোর ওই মাঠে খেলাধুলো করতে চায়। স্কুল তাদের খেলতে দিতে রাজি নয়। সমস্যাটি জটিল। তবে কোনও মতেই যাতে শিক্ষিকারা সমস্যায় না পড়েন, সে দিকে নজর রাখতে হবে।”
মঙ্গলবারই স্কুলে আইনশৃঙ্খলা ও শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার জন্য পুলিশ মোতায়েনের দাবি জানিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষিকা। বর্ধমান থানার আইসি স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। উনি অনুমতি না দিলে কেউই স্কুলের ভিতরে ঢুকে খেলতে পারবে না। ফের সমস্যা হলে আমাদের জানাতে বলেছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.