সেই চালান দেখে জাজিগ্রাম চেকপোস্ট থেকে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্মীরা বালির গাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন। প্রশাসনের এক কর্তা জানান, সরকারি চালানের দু’দিকেই সংশ্লিষ্ট দফতরের সিল থাকবে। এ ক্ষেত্রে কোনও কিছুই ছিল না। তা সত্ত্বেও কী করে বালির লরি ছাড়া হল, তা নিয়ে প্রশাসনের কর্তারাই বিস্ময় প্রকাশ করছেন। মহকুমাশাসক বলেন, “ঘটনার সঙ্গে দফতরের কর্মীদের যোগ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
|
মাস দুয়েক আগে প্রশাসনের কর্তারা নড়েচড়ে বসায় অবশ্য পরিস্থিতি সামান্য বদলেছে। মহকুমা প্রশাসন সূত্রের খবর, চলতি আর্থিক বছরে মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যেখানে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের রাজস্ব আদায় ছিল কার্যত নগণ্য, সেখানে গত দু’মাসে কোটি টাকার কাছাকাছি রাজস্ব আদায় হয়েছে। মহকুমাশাসক বলেন, “অজয় নদে ৩৪টি জায়গা থেকে বেআইনি ভাবে বালি তোলা হচ্ছিল। চেকপোস্ট থাকলেও রাজস্ব আদায় হত না। ইটভাটাগুলিও অবৈধ ভাবে ব্যবসা চালাত। আমরা এ সব বন্ধ করার চেষ্টা করতেই রাজস্ব আদায় বাড়তে শুরু করেছে।” ওই ৩৪টি জায়গার মধ্যে ৩২টিকে ইতিমধ্যে বৈধ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তাতেও রাজস্ব বেড়েছে।
তবে ভূমি দফতরের দুর্নীতি যে এত সহজে বন্ধ হওয়ার নয়, তা বস্তুত সকলেরই জানা। কাটোয়া মহকুমা ল্যান্ড অ্যান্ড ল্যান্ড রিফর্মস এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সম্পাদক গৌর বণিকের অভিযোগ, “দফতরের মহকুমা আধিকারিকের দুর্নীতির শেষ নেই। তার উপরে কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা তাঁর দোসর হয়েছেন। এতে দুর্নাম হচ্ছে আমাদের দফতরের।” কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা সুরজিৎ মুখোপাধ্যায় পাল্টা বলেন, “দুর্নীতি তো হয়ই। কারা করেন সবাই জানেন। পরিবর্তনের পরে আমাকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হচ্ছে।” আধিকারিক আবুল আলিমের ব্যাখ্যা, “সুরজিতের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভাল বলেই দুর্নাম রটানো হচ্ছে।”
আবুল আলিম প্রায় নিশ্চিত, “এই দফতরে এত চোর যে চুরি বন্ধ করা অসম্ভব।” কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আশা রাখি, নতুন সরকার দুর্নীতি রুখতে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।” জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “আমাদের কাছে প্রচুর অভিযোগ ছিল। নজরদারি চালিয়ে কিছুটা কমানো গিয়েছে। পুরোপুরি আটকানোর চেষ্টা চলছে।”
ঘুঘু কবে ফাঁদে পড়বে, ‘ফাঁদ’ আদৌ ফাঁদ কি না, সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন। |