|
|
|
|
জীবনের কঠিনতম যুদ্ধ লড়ছেন বিশ্বকাপের সেরা |
গৌতম ভট্টাচার্য • কলকাতা |
পাহাড়ের চুড়ো আর সমুদ্রের তল। দু’টোই ভারতীয় ক্রিকেটে সমান ভাবে সবচেয়ে বেশি দেখেছেন কে?
স্পোর্টস কুইজে প্রশ্নটা একাধিক বার এসেছে। বিকল্প যে ক’টা নামই দেওয়া থাক, ঠিক উত্তর মোহিন্দর অমরনাথ।
ভারতীয় কুইজমাস্টাররা মনে হয় না জানেন যে, ২০১১-র শেষ অর্ধে এসে মোহিন্দর জবাব দিলে উত্তরটা সম্পূর্ণ ভুল হবে। ঠিক উত্তর যুবরাজ সিংহ। বিশ্বকাপের ‘ম্যান অফ দ্য টুর্নামেন্ট’ তিনি। ৯ ম্যাচে দুর্ধর্ষ ৩৬২ রান,
১৫ উইকেট, মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া সব ‘পারফরম্যান্স’। তার পর দুনিয়া অত্যাশ্চর্য ভাবে বদলে গিয়েছে মাঝের আট মাসে। ভারতীয় ক্রিকেটের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ কামব্যাক ঘটিয়েছিলেন বিশ্বকাপে। সেখান থেকে অদৃষ্টের স্খলনে ফের তলদেশে যুবরাজ।
ওয়াংখেড়েতে যখন তিনি সেরার সেরা-র ট্রফি নিচ্ছেন, তখন কে জানত পরের আট মাসে ভারতের হয়ে একটাও ওয়ান ডে ম্যাচ খেলা হবে না তাঁর? আর কবে হবে, তা-ও চলে যাবে আশঙ্কার গর্ভে। কে জানত এমন রোমাঞ্চকর ‘কামব্যাকে’ও যুবরাজ সিংহ-র সুস্থির হওয়ার উপায় থাকবে না। পরের মাসেই তাঁকে কি না নেমে পড়তে হবে জীবনের কঠিনতম যুদ্ধে। লড়তে হবে এমন প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে, যাকে ব্যাট-বলের দক্ষতা দিয়ে হারানোর উপায় নেই। এর নাম ক্যানসার। যার মুখোমুখি দাঁড়ালে ওষুধ ছাড়া মাত্র দুটো অস্ত্র। ধৈর্য এবং অনমনীয় মনের জোর। |
|
সোনালি দিনে। বিশ্বজয়ের পর কাপ হাতে যুবি। |
রবিবার যুবরাজের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু আনন্দবাজারকে বলছিলেন, “আপনারা লেখেন, ও মাঠের হিরো। গত ক’মাসে কাছ থেকে দেখার পর মনে হচ্ছে, ওকে জীবনের হিরোও বলার সময় হয়েছে।” ভারতীয় খেলাধুলোর ইতিহাসে কোনও শীর্ষস্থানীয় ক্রীড়াবিদের এমন শারীরিক বিপণ্ণতার সঙ্গে যুদ্ধ করার ইতিহাস নেই। মনসুর আলি খান পটৌডি একমাত্র তুলনা হতে পারেন। কিন্তু পটৌডি এক চোখ হারালেও এত সাংঘাতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে নিয়ত যোঝেননি। আন্তর্জাতিক মঞ্চ তল্লাশি করলে হাতে গুণে তিনটে উদাহরণ পাওয়া যাচ্ছে। বার্সেলোনা ডিফেন্ডার এরিক আবিদাল, সাইমন ও’ডনেল এবং ল্যান্স আর্মস্ট্রং। এ বছরই ম্যালিগন্যান্ট ক্যানসার ধরা পড়ার পর দেড় মাসের মধ্যে অস্ত্রোপচার করিয়ে চমকপ্রদ ভাবে মাঠে ফেরেন আবিদাল। এমনকী, নেমে পড়েন বার্সেলোনার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে। সাইমন ও’ডনেলের ক্যানসার ধরা পড়েছিল ১৯৮৭ সালে। ইডেনে তাঁরা বিশ্বকাপ জেতার পরপর। পরের বছরই অস্ট্রেলিয়ার ওয়ান ডে টিমে তাঁর নাটকীয় প্রত্যাবর্তন ঘটে। এর দু’বছর বাদে ওয়ান ডে ক্রিকেটে তিনি হইচই ফেলে দেন ১৮ বলে ৫০ করে। তবে ও’ডনেল কখনও দূর কল্পনাতেও যুবরাজ মাপের ক্রিকেটার নন। একমাত্র আর্মস্ট্রংয়ের কাহিনিটাই অলৌকিক। গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট ম্যাচের আগে রাহুল দ্রাবিড়কে বহু বার আর্মস্ট্রংয়ের বই পড়ে উদ্দীপ্ত হতে দেখা গিয়েছে। যেখানে আর্মস্ট্রং ব্যাখ্যা করেছেন, ১৯৯৬-এ ক্যানসার রোগী হয়েও কেমন ভাবে পরবর্তী কালে টানা সাত বছর ‘ত্যুর দ্য ফ্রাঁস’ জিতেছিলেন।
দ্রাবিড়ের হয়তো সময় হয়েছে আর্মস্ট্রংয়ের বইটা যুবরাজকে উপহার দেওয়ার। ক্যানসারকে হারানোর যুদ্ধে আর্মস্ট্রংই আজ পর্যন্ত ক্রীড়াবিদের সেরা বিজ্ঞাপন। অবশ্য দ্রাবিড় প্রকৃত সত্য জানেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। ভারতীয় ড্রেসিংরুম সূত্রের খবর, একমাত্র সচিন তেন্ডুলকরকে প্রকৃত পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। যুবরাজ একাধিক বার বলেছেন ক্রিকেটে তাঁর প্রত্যাবর্তনের কারণ সচিন। এ বারও নাকি সচিন অনুপ্রাণিত করেছেন, সব ঠিক হয়ে যাবে। তুই দ্রুতই আবার মাঠে ফিরবি, এই বলে। যুবরাজের এক বন্ধুর ভাষায়, আগেও সচিন ওর কাছে ‘মিস্টার ইনস্পিরেশন’ ছিল। এখনও।
যুবরাজ পরিবারের পক্ষ থেকে অবশ্য রবিবারও বলা হল, তাঁর বাঁ ফুসফুসে যে টিউমার ধরা পড়েছে সেটা নন-ম্যালিগন্যান্ট। প্রাথমিক রিপোর্টে নাকি ওটা ক্যানসার সেল-ই মনে হচ্ছিল। কিন্তু তৃতীয় বায়োপসি-তে নাকি দেখা যায়, টিউমারটি নন-ম্যালিগন্যান্ট। অতএব ভয়ের কারণ নয়। ঠিক পারিবারিক এই ব্যাখ্যাতেই কিছু ধোঁয়াশা রয়েছে। রয়েছে স্বভাবতই স্পর্শকাতর কিছু প্রসঙ্গ। রয়েছে সহজবোধ্য কিছু সীমাবদ্ধতা।
শনিবার হঠাৎ প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কেন যুবরাজের পরিবার থেকে তাঁর অসুস্থতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হল, যেখানে অসুখ ধরা পড়েছে গত ২৭-এ মে? চণ্ডীগড় থেকে এ দিন যুবরাজের মা শবনম সিংহ ফোনে বললেন, “মুখ না খুললে বিভ্রান্তি বাড়ছিল। একে তো যুবরাজকে নিয়ে সব সময়ই উল্টোপাল্টা কথাবার্তা চলে। এর আগে বলা হয়েছিল, সুরেশ রায়না ক্যাপ্টেন হওয়ার জন্য ও ওয়ান ডে সিরিজ খেলেনি। কেউ বলল, যথেষ্ট সিরিয়াস নয়। কেউ আরও কোনও কারণ খুঁজে পেল। আমরা চেয়েছিলাম এ সব কথাবার্তা বন্ধ করে সত্যি কারণটা তুলে ধরতে।” শবনম বললেন, “ওর হৃৎপিণ্ডের ওপরে গল্ফ বলের সাইজের একটা টিউমার হয়েছে। কিন্তু ডাক্তারদের অভিমত হল, ওষুধ, থেরাপি এবং যোগাসনে ওটা মিলিয়ে যাবে।” যুবরাজ কেমন ভাবে কাটাচ্ছেন এখন? শবনম বললেন, “ভেতরে ভেতরে হয়তো চোখের জল ফেলছে, কিন্তু বাইরে একই রকম কঠোর। কারও বোঝার উপায় নেই যে, অস্বস্তিতে আছে। পনেরো-কুড়ি দিনের মধ্যে ট্রেনিং শুরু করতে চায়।” এর পর নিজেই যোগ করলেন, “আমার ছেলেটা সত্যিই সাহসী।” বলতে বলতে সামান্য গলা ধরে গেল। যা শোনামাত্র মনে হচ্ছিল, ঠিক তখুনি যুবরাজকে মুম্বইয়ের বাড়িতে ফোনে ধরলে তিনি অবধারিত বলতেন, আমার মা কী সাংঘাতিক সাহসী! একা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। |
|
আবার সিংহ-গর্জন শোনার প্রতীক্ষায় ভারতীয় ক্রীড়ামহল। |
শবনম আপাতত চণ্ডীগড়েই। কারণ তিনি পারিবারিক গুরুদের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন পঞ্জাবে। তাঁর অসুস্থতা শনাক্ত হওয়ার পর থেকে ভারতের হয়ে তিনটে টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন যুবরাজ। রান করেছেন ৬২, ৮, ২৩, ১৮, ২৫। যা নিয়ে তাঁর মোট টেস্ট রান দাঁড়িয়েছে, ৩৭ টেস্টে ১৭৭৫ রান। গড় নেহাতই মধ্যবিত্ত ৩৪.৮০। প্রতিবারই মিডিয়া লিখেছে, ছ’নম্বরে জায়গাটা পেয়েও তিনি রাখতে পারছেন না। কেউ জানতেও পারেনি ভেতরে ভেতরে কী মারাত্মক অসুখ নিয়ে তিনি মাঠের যুদ্ধ লড়েছেন। শবনম ফের দাবি করলেন, নন-ম্যালিগন্যান্ট টিউমার। বললেন, “শেষ বায়োপসি-তে তাই এসেছে।” এ ব্যাপারে ধোঁয়াশার নিষ্পত্তি না করে এটুকু বলা যেতে পারে, এই প্রত্যেকটা টেস্ট ম্যাচেই টানা পাঁচ দিন মাঠে থাকা যুবরাজকে প্রচণ্ড ভুগিয়েছে। এই ব্যাধিতে করণীয় হল, বিশ্রাম এবং ঠিক ওষুধ। পাঁচ দিন নাগাড়ে শক্তিক্ষরণে যে বিশ্রাম করা যায়নি। প্রতিটি টেস্ট ম্যাচের পরে আরও-আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন যুবরাজ। দিন পনেরো আগে ইডেনে যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট খেলতে এসেছিলেন যুবরাজ, হোটেলে নাকি তাঁর সঙ্গে ছিলেন এক সহকারী, যাঁর দায়িত্ব ছিল প্রতিদিন তাঁকে নিয়ম করে ওষুধ খাওয়ানোর। গত মে মাসের পর অনেক রাত্রে তিনি শুতে গিয়েছেন সারা শরীরে ব্যথা উপশমকারী সূচ ফুটিয়ে। শোনা গেল, যুবরাজের দুই কুলপুরোহিত এই সঙ্কটে উৎসাহ জোগাচ্ছেন তাঁকে। যেমন পাশে আছেন পুণে ওয়ারিয়র্স টিমের টিম মালিক সু্ব্রত রায়। কুলপুরোহিতদের কথা থেকে অবশ্য অসম্ভব উদ্দীপনা পাচ্ছেন যুবরাজ। সব ব্যাপারে যাঁদের তিনি শরণাপণ্ণ হন। এঁরাই বিশ্বকাপের আগে তাঁকে বলেছিলেন, এই টুর্নামেন্ট তোমাকে ফিরিয়ে দেবে বিশ্বমঞ্চে। এঁরা সন্ত বাবা অজিত সিংহ এবং রাম সিংহ। গুরুরা এ বারও যুবরাজকে আশ্বাস দিয়েছেন, “তুমি মোটেও বিশাল অসুস্থ নও। এর থেকে ঠিক বেরিয়ে আসবে। শুধু সময়ের অপেক্ষা।” শবনম চণ্ডীগড় থেকে পঞ্জাবে দেখা করতে যাচ্ছেন গুরুর সঙ্গে। যদি তাঁরা আশাব্যঞ্জক নতুন কোনও পাথেয় দেন। ডাক্তার কী বলেছেন যুবিকে? শবনম বললেন, “তিনটে জিনিস যেমন করে যাচ্ছ, করে যাও। ওষুধ, থেরাপি এবং বিশ্রাম। তোমার মোটেও জীবনের ভয় নেই।” যিনি তাঁকে দেখছেন এই ডাক্তার কী ফুসফুস রোগ বিশেষজ্ঞ, না ক্যানসার সার্জন? তাঁর নাম কী, কোথায় থাকেন? যুবরাজের পরিবার কোনও তথ্য দিতে আগ্রহী নয়। তাই জানার উপায় নেই কেমোথেরাপির প্রয়োজন হয়েছে কি না?
ফুসফুস রোগ বিশেষজ্ঞ ড. পার্থ ভট্টাচার্য বললেন, “যদি ক্যানসার না হয়ে থাকে, যদি পরিবারের থেকে যা বলা হচ্ছে নন-ম্যালিগন্যান্ট টিউমার তাই হয়, তা হলে শুধু ওষুধে ভাল হয়ে যাবে। এমনকী যদি ম্যালিগন্যান্ট স্টেজ ওয়ান স্মল সেল ক্যানসার হয়, তা হলেও ওষুধে সেরে যাবে। অস্ত্রোপচার করতে হবে না। শুধু সেটা আবার শরীরে ফিরে আসার আশঙ্কা থাকে।” ক্যানসার শল্য চিকিৎসক ড. গৌতম মুখোপাধ্যায় বললেন, “স্টেজ ওয়ান হলে থেরাপি এবং ওষুধে পুরো সেরে যায়। কিন্তু যদি অস্ত্রোপচার করতে হয় এবং ফুসফুসের অংশ বাদ দিতে হয়, তা হলে ক্রীড়াবিদের সক্ষমতা অনেকটাই কমে যায়। সে ক্ষেত্রে আজকালকার দিনে ক্রিকেট যে পর্যায়ে চলে গিয়েছে, তাতে স্ট্যামিনা সামান্য কমে যাওয়াও বড় সমস্যা হতে পারে।” শহরের নামী দুই চিকিৎসকই মনে করেন, পরিস্থিতি উদ্বেগের হলেও আশা হারানোর কিছু নেই। যুবরাজ সসম্মান জীবনে ফিরবেন। হয়তো বা ক্রিকেট মাঠেও।
ঘনিষ্ঠ মহলের রিপোর্ট অনুযায়ী, যুবরাজ সিংহ অবশ্য জীবনে ফেরা নিয়ে চিন্তিত নন। কত তাড়াতাড়ি ক্রিকেট মাঠে ফিরবেন সেটাই তাঁর লক্ষ্য। যেমন তিনি চান, সামনের মাসে দলীপ ট্রফি খেলে অস্ট্রেলিয়ার ওয়ান ডে টিমের জন্য দাবি তুলতে। গরিষ্ঠ অংশের ধারণা, সেটা প্রায় অসম্ভব। এখনও যে ভাবে চিকিৎসা চলছে তাঁর, তাতে দীর্ঘমেয়াদি ম্যাচের ফিটনেস তাঁর পক্ষে পাওয়া কঠিন। বেশিক্ষণ মাঠে থাকলেই তাঁর শরীরে রোগের নানা উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। সৌরভ বলছিলেন, “যুবরাজের সঙ্গে ফোনে কথা হয়। ও ঠিক ফিরে আসবে।” কিন্তু সৌরভও কী পরিস্থিতির খুঁটিনাটি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবহিত? না হলে আশ্চর্যের কিছু নেই। অস্ট্রেলিয়া সফর তো দূর অস্ত্, আইপিএল-টাও জমিয়ে যুবরাজ খেলতে পারবেন কি না সন্দেহ রয়েছে।
বিশ্বকাপের পর থেকেই আসলে যুবরাজের শরীরের নানা রকম সমস্যা ধরা পড়ে। বমি হচ্ছিল, জ্বর হচ্ছিল, সর্দি-কাশি যাচ্ছিল না। কিন্তু তিনি ভেবেছিলেন যেহেতু ওয়ার্ল্ড কাপে প্রচুর টেনশন গিয়েছে, এটা তারই প্রকাশ। অথবা কোনও অ্যালার্জির সংক্রমণ। দু’দিনে ঠিক হয়ে যাবে। রোগকে তাই পাত্তাই দেননি, উল্টে চোদ্দোটা আইপিএল ম্যাচ খেলেন (৩৪৩ রান, গড় ৩৪.৩০, স্ট্রাইক রেট ১৩১)। তখন বলাবলি হচ্ছিল আইপিএলটা বিশ্বকাপের মতো খেলতে পারলেন না যুবরাজ। তাঁর নিজেরও তাই মনে হচ্ছিল, তিনি ফর্মে নেই। ২৭-এ মে স্ক্যানের রিপোর্ট বেরনোর পর যুবরাজ প্রথম বোঝেন কেন বিশ্বকাপের মধ্যেও তাঁর তিন-চার বার বমি হচ্ছিল। এর পর থেকেই চলছে তাঁর কঠিন সংগ্রাম। শুধু ক্রিকেট কেন, ভারতীয় খেলাধুলোর জগতে যে কোনও বিপণ্ণ ক্রীড়াবিদের রোলমডেল হতে পারেন এখন যুবরাজ। ওই অবস্থায় তিনি অসম সাহসে ইংল্যান্ড সফরে যান। ফের টেস্ট সিরিজ খেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। শতকরা নিরানব্বই শতাংশকে বুঝতেই দেননি কী পরিমাণ প্রতিবন্ধকতা নিয়ে তিনি ক্রিকেট খেলছেন। অথচ ইংল্যান্ড সফরে এমনও হয়েছে যে, তিনি প্রচণ্ড ব্যথার মধ্যে টিমের যা ড্রিল সে সব কিছু করতে পারেননি। “অথচ ও বারবার বলেছে, মা কিচ্ছু চিন্তা কোরো না, আমি ফিরবই। এত কিছুর মধ্যেও কিন্তু আমার ছেলে মাথা ঝোঁকায়নি,” বললেন শবনম।
শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, গ্রেগ চ্যাপেল বিরক্ত হয়ে বলতেন, যুবরাজের টেস্ট ক্রিকেটে প্রতিশ্রুতি পূর্ণ না করতে পারার ধাঁধাকে একটা শব্দে অনায়াস ব্যাখ্যা করা যায়বলিউড। চ্যাপেল জানেন না, ২০১১-র শেষের এই যুবরাজ বলিউড থেকে শতহস্ত দূরে। মা আর ভাই ছাড়া প্রতিনিয়ত সাহস জোগানোর সঙ্গীও নেই। ওষুধ বিশ্রাম আর অসাধারণ মনের জোরকে সম্বল করে লড়ে যাচ্ছেন। আবার যদি ক্রিকেট-মাঠে সসম্মানে ফেরেন, ওয়াংখেড়ের জাদুকরী রাতের প্রত্যাবর্তন ঘটবে তাঁর জীবনে। এখানে না-ই বা পেলেন ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের ট্রফি। প্রত্যাবর্তনের পর না-ই বা হল টেস্ট দলে পাকা জায়গা। একটা পুরো প্রজন্মের কাছে জলজ্যান্ত বিস্ময়-উদ্রেককারী রোলমডেল হিসেবে থেকে যাবেন। তখন ছ’বলে ছ’টা ছক্কা নয়, যুবরাজ সিংহের আসল রেকর্ড থেকে যাবে এটাই। মুখোমুখি মরণপণ যুদ্ধে ক্যানসার-জয়ী। |
|
|
|
|
|