গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে রবিবার সকালে একটি বাড়িতে আগুন লেগে যায়। বর্ধমান শহরের নতুনগঞ্জে কাঁসারিপট্টির এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন মোট সাত জন। এঁদের মধ্যে ওই বাড়ির বাসিন্দারা ছাড়া এক পথচারীও রয়েছেন।
দমকলের দু’টি ইঞ্জিন প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় এই আগুন নেভায়। দমকল সূত্রে বলা হয়েছে, মোট ১১টি সিলিন্ডার ওই বাড়ি থেকে আটক করা হয়েছে। বাড়ির মালিক সাধন হালদারের ভাড়া গাড়ির ব্যবসা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেই গাড়িগুলিতে তিনি রান্নার সিলিন্ডারের গ্যাস ব্যবহার করতেন। বাড়ির দু’টি ঘরের সমস্ত আসবাব পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। দীর্ঘক্ষণ পরেও বাড়ির কয়েক গজের মধ্যে প্রচণ্ড উত্তাপ ছিল।
পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “আমরা একটি মামলা দায়ের করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি। ওই বাড়ির গাড়িগুলিতে রান্নার সিলিন্ডারের গ্যাস ব্যবহার করা হত বলে বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছি আমরা। আহতেরা সুস্থ হয়ে উঠলেই তাঁদের জেরা করবে পুলিশ।” |
বর্ধমান দমকল কেন্দ্রের ওসি তপন মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা এসে দেখি, বাড়ির দোতলা ও তিন তলা দাউদাউ করে জ্বলছে। বাড়ির ছাদে বাড়ির মালিক, তাঁর ছেলে ও স্ত্রী ছোটাছুটি করছেন। আমরা মই লাগিয়ে প্রত্যেককে উদ্ধার করি। বাড়ির ভিতরে একটি তালাবন্ধ ঘর রয়েছে। সেই ঘরে অসংখ্য ভর্তি সিলিন্ডার রয়েছে বলে স্থানীয় মানুষ আমাদের জানিয়েছেন। আমরা বাড়ির নীচের গ্যারাজ থেকেই ১১টি সিলিন্ডার উদ্ধার করেছি। কী করে এত সিলিন্ডার এই বাড়িতে মজুত হল, আমি সেই বিষয়ে জেলা প্রশাসনকে তদন্তের জন্য বলব।”
স্থানীয় বাসিন্দা শেখ পানাই বলেন, “হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দ শুনে দেখি, চার তলা বাড়ি থেকে আগুন আর ধোঁয়া বেরোচ্ছে। বাড়ির ভিতর থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসে এক চালক। তার সর্বাঙ্গে আগুন জ্বলছে। সে আমাকে বাঁচাও, বাঁচাও বল জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করতে আমি পালিয়ে যাই।” |
ঘটনার আরও কয়েক জন প্রত্যক্ষদর্শী গৌতম দত্ত, বিপদতারণ কর্মকার বলেন, “ওই চার তলা বাড়ির মালিক সাধনবাবুর ৮-১০টি গাড়ি। গাড়িগুলিতে অবৈধ ভাবে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবহার করা হত। কোনও ভাবে একটি সিলিন্ডারে বিস্ফোরণ হয়।” স্থানীয় মানুষ আরও জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল, যে বিস্ফোরণের পরে সিলিন্ডারের কয়েকটি টুকরো ছিটকে এসে লাগে রাস্তার উল্টো দিকের একটি বাড়িতে। সেই বাড়ির দরজা জানলায় ফাটল ধরেছে। ওই সময় রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন এক পথচারী। সিলিন্ডারের আগুন তাঁর গায়েও লাগে। তাঁর পেট ও কাঁধের কিছু অংশ পুড়ে গিয়েছে। গৃহকর্তা সাধনবাবু, তাঁর ছেলে সৌরভ, গাড়ির তিন চালক শেখ সেন্টু, পিন্টু দলুই ও দেবু মাঝি গুরুতর অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। তাঁদের প্রত্যেককে বর্ধমান মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়। তিন জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁদের কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। আর এক জনকে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে পাঠানো হয়েছে। সামান্য আহত হন বাড়ির এক পরিচারিকাও।
|