নাটকের মঞ্চে এ বার বলিউডের গল্প।
সম্ভবত এই প্রথম বার বলিউড একটা প্রতীকী চরিত্র হয়ে উঠছে বাংলা নাটকে। যেখানে নাটকের কাহিনি ও সংলাপে ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছেন শাহরুখ-সলমন-আমির-কাজল-গব্বর সিংহরা। এবং অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের লেখা এই ‘টোপি’ নাটকটির সূত্রেই নান্দীকারের বাইরে প্রথম বার কোনও দলের হয়ে পরিচালকের ‘টোপি’ মাথায় তুলতে চলেছেন দেবশঙ্কর হালদার।
অরিন্দমের আগের নাটক ‘২২১ বি বেকার স্ট্রিটে’ও ছিল চমক। বাংলা রঙ্গমঞ্চে শার্লক হোমসের অনুষঙ্গ তার আগে আসেনি। এ বারের চমক, বলিউড। ‘২২১ বি...’ বাংলা নাটকে কর্পোরেট অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে একটি নতুন দৃষ্টান্ত গড়েছিল। একই পথে হাঁটতে চাইছে ‘টোপি’-ও। আজ শনিবার, শহরের এক নাট্যোৎসবে এ নাটকের প্রথম মঞ্চায়ন। তার পর আগামী ফেব্রুয়ারি মাস থেকে নিয়মিত অভিনয় শহরের মঞ্চে।
এই দু’টি নাট্যপ্রযোজনার কর্ণধার অরিন্দম মুখোপাধ্যায় পেশায় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্তা। নাট্যপ্রযোজনায় কর্পোরেট অংশগ্রহণ বাড়ানোই আপাতত অরিন্দমের লক্ষ্য। তাঁর কথায়, “লন্ডন বা নিউ ইয়র্কে যে ধরনের নাটক হয়, আলো-শব্দ-মঞ্চসজ্জায় সেই মাপকাঠি যদি ছুঁতে হয়, কর্পোরেট সংস্থার সাহায্য ছাড়া গতি নেই। আমার দু’টো নাটকেই এখনও পর্যন্ত বন্ধুবান্ধবের ব্যক্তিগত সাহায্যের পাশাপাশি বহু সংস্থা ছোট-বড় অঙ্কের অর্থসাহায্য করেছে। কথা চলছে আরও কিছু সংস্থার সঙ্গে।” |
নাটকের মহড়ার একটি দৃশ্য। নিজস্ব চিত্র |
গ্রুপ থিয়েটারের সাবেকি দলীয় কাঠামোর বাইরে যাঁরা প্রযোজনাভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নাটক করতে চাইছেন, অরিন্দম তাদেরই এক জন। তাঁর দলে নিজস্ব অভিনেতা-অভিনেত্রী নেই। কলাকুশলীরা সকলেই পেশাদারি ভিত্তিতে বাইরে থেকে নেওয়া। দেবশঙ্কর হালদার, সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুরঞ্জনা দাশগুপ্ত অভিনীত ‘২২১ বি..’ ছিল বাংলা নাট্যমঞ্চের অন্যতম ব্যয়বহুল নাটক। নাটকটি তৈরি করতেই দশ লক্ষ টাকার উপরে বাজেট গিয়েছিল। নাটকটি প্রথম বার মঞ্চস্থ হওয়ার পরে একটি মোবাইল সংস্থা বেশ কিছু শো প্রযোজনার করার দায়িত্ব নেয়। কিন্তু দর্শক-সমালোচকদের প্রশংসা সত্ত্বেও অতিরিক্ত ব্যয়বাহুল্যের কারণেই প্রযোজকদের তরফে নির্ধারিত সংখ্যক শো হওয়ার পরে ‘২২১ বি...’ আর চালানো যায়নি। অরিন্দম বলছিলেন, “নাটকটা মঞ্চস্থ করতেই এত খরচ হত যে, হাউসফুল হলেও সেটা কুলোনো যেত না। ‘টোপি’-র ক্ষেত্রে সেটা হবে না। আশা করছি, এ বারও আমরা কিছু কর্পোরেট প্রযোজক পাব। সেই সঙ্গে দর্শক আনুকূল্য থাকলে নাটকটা আমরা দীর্ঘমেয়াদে চালিয়ে যেতে পারব।”
দর্শক আনুকূল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে ‘টোপি’-র মূল আকর্ষণবিন্দু কী কী? নাটকে দু’টি মাত্র চরিত্র, যাতে অভিনয় করছেন বাংলা মঞ্চের দুই তারকা-অভিনেতা দেবশঙ্কর হালদার এবং শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়। দেবশঙ্করই এ নাটকের পরিচালক। বললেন, “পরিচালনার কাজটা করতে গিয়ে একটা নতুন রকম অনুভূতি তো হচ্ছেই। তবে ভাল অভিনেতারা সঙ্গে থাকলে পরিচালকের কাজ অনেকটা হালকাও হয়ে যায়।” এ নাটকের আর একটি আকর্ষণ, অবশ্যই তার বিষয়বৈচিত্র। বাংলা নাটকের কাহিনিতে ফিল্মের অনুষঙ্গ এর আগে খুব বেশি আসেনি। বলিউড তো নয়ই।
‘টোপি’ নাটকে বলিউডের ভূমিকাটা ঠিক কেমন? কাহিনিচুম্বকটা ভাঙতে না চেয়ে নাটককার অরিন্দম শুধু বললেন, “টোপি আসলে স্বপ্ন তাড়া করার গল্প। টাকা করার স্বপ্ন, সাফল্যের স্বপ্ন। বলিউড আর মুম্বই সেই স্বপ্নের আধার।” এর আগে বাংলার নাট্যদর্শক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘রাজকুমার’ দেখেছেন। সে নাটকের মূল চরিত্র ছিল এক নায়ক, সিনেমার নায়ক। কয়েক বছর আগে জনপ্রিয় হয়েছিল চন্দন সেনের ‘কন্টিন্যুইটি’। সেখানে মঞ্চে উঠে এসেছিল টিভি সিরিয়ালের জগত। সত্যজিৎ রায়ের গল্প অবলম্বনে ‘পটলবাবু ফিল্মস্টার’ নাটকটি বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়। এর বাইরে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি, টলিউড বা বলিউড কখনও নাটকের বিষয় হয়েছে কি? প্রবীণ নাট্যপরিচালক বিভাস চক্রবর্তী বললেন, “সে ভাবে হয়নি। অথচ এখানে গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলন আর ফিল্ম সোসাইটি আন্দোলন প্রায় একই সঙ্গে শুরু হয়েছিল। তবে দীর্ঘদিন পর্যন্ত সিনেমার মতো বাণিজ্যিক মাধ্যমের প্রতি গ্রুপ থিয়েটারের একটা উন্নাসিকতা ছিল। দু’টো মাধ্যমের মধ্যে আদানপ্রদান হলে সেটা কিন্তু ভালই হত।” ‘টৌপি’ কি সেই আদানপ্রদানের রাস্তাটা খুলবে? ফিল্মের মতো নাটকেও কর্পোরেট অংশগ্রহণ কি বাড়বে? উত্তরের অপেক্ষায় নাট্যজগত। |
অতিরিক্ত সংযোজন
‘টোপি’ নাটকের মধ্যে ফিল্মের বিষয়আশয় উৎপল দত্তের ‘আজকের শাজাহান’
এবং ‘ছায়ানট’ নাটকেও ছিল। উপরোক্ত প্রতিবেদনে যদিও কোনও পূর্ণাঙ্গ
নাট্যতালিকা
পেশ করার প্রয়াস ছিল না,
তবু ওই দু’টি নাটকের উল্লেখ থাকা প্রয়োজন বোধে এই সংযোজন। |
|