ছাত্র সংসদের নির্বাচন-সহ বিভিন্ন দাবিতে ছাত্র পরিষদের অনশন চলছেই। বৃহস্পতিবার তা দ্বিতীয় দিনে পড়ল। কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে চিঠি দিয়ে এ দিন আন্দোলনকারীদের জানানো হয়েছে ছাত্র সংসদের নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শীঘ্রই নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হবে। দিনক্ষণ ঘোষণা না করায় বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে কেউ আন্দোলন মঞ্চে না যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ছাত্র পরিষদ নেতৃত্ব। তা ছাড়া অন্যান্য দাবির বিষয়েও কোনও আশ্বাস না মেলায় তারা লাগাতার অনশন আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা আধিকারিক মানস চক্রবর্তী বলেন, “এ দিন আন্দোলনকারীদের লিখিতভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে দ্রুত নির্বাচন সম্পন্ন হবে। সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।” কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, নিষেধাজ্ঞার জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচন করানো সম্ভব হয়নি। তবে গত ১৮ নভেম্বর নিষেধাজ্ঞা ওঠায় নির্বাচন সম্পন্ন করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। তবে কর্মচারী সমিতির আন্দোলনের ভোটার তালিকা তৈরি, মনোনয়ন পত্র ছাপা-সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়েছে। ছাত্র পরিষদের উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের সভাপতি রোনাল্ড দে, মুক্তি শর্মারা জানান, বুধবার থেকে তাঁরা অনশনে বসেছেন। অথচ বৃহস্পতিবর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে কেউ তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে আসেননি। তাঁদের ডেকে এ দিন একটি চিঠি দিয়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচন শীঘ্রই হবে বলে জানানো হয়েছে। নির্বাচন কবে হবে সেই দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়নি। রোনাল্ড দে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মচারী সমিতির আন্দোলনের জেরে গ্রন্থাগার বন্ধ রয়েছে। পড়ুয়ারা পড়াশোনা করতে পারছেন না। রিসার্চ ওয়ার্কের প্রয়োজনেও অনেকে গ্রন্থাগার ব্যবহার করতে পারছেন না। রেজিস্ট্রেশনের কাজকর্ম ব্যহত হচ্ছে। তাতে বাইরে থেকে আসা ছাত্রছাত্রীদের অনেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র পাচ্ছেন না। প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হবে। অথচ ভর্তির প্রক্রিয়াই সম্পন্ন হয়নি। ওই সমস্ত দাবির বিষয়গুলি নিয়েও কর্তৃপক্ষ আমাদের কোনও রকম আশ্বাস দেননি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন আন্দোলন চলবে।” ছাত্র পরিষদের অভিযোগ, হস্টেলে জলগরম, চা তৈরির মতো কাজ করতে ‘হিটার’-এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অথচ শীতে স্নানের জন্য গরম জল পেতে ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের জন্য অ্যাম্বুল্যান্স দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানানো হলেও কাজ হয়নি। সেল্ফ ফিনান্স কোস-এ ছাত্রছাত্রীদের হস্টেল না থাকায় তাদের সমস্যা পড়তে হচ্ছে। অন্য দিকে ৯ নভেম্বর থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ আন্দোলন করছেন কর্মচারী সমিতি। কর্মীরা সংশ্লিষ্ট বিভাগ ছেড়ে আন্দোলনে সামিল হওয়ায় গ্রন্থাগার-সহ অনেক বিভাগে কাজকর্ম ব্যহত হয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যাল কর্তৃপক্ষের তরফে তাদের চিঠি দিয়ে দাবির বিষয়গুলি সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হলেও আন্দোলনকারীরা মানতে চাইছেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতির সম্পাদক দেবীপ্রসাদ বুট বলেছেন, “গত ১১ নভেম্বর উপাচার্য আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে রোস্টার কমিটি, স্ট্যান্ডিং কমিটির, কর্ম সমিতির বৈঠক করার কথা জানিয়েছিলেন। সেই মতো রোস্টার কমিটির বৈঠকে আমরা গেলেও উপাচার্য যাননি। তাতে বৈঠক হয়নি। ২৫ নভেম্বর কর্মসমিতির বৈঠক ছিল। এখন সেটাও হবে না বুঝতে পারছি। মৃতের পোষ্য বান্টি লামাকে কাজে নিয়োগ-সহ গত মার্চ মাসে শেষ কর্ম সমিতির বৈঠকে সিদ্ধান্ত কার্যকরী করার দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি। দাবির বিষয়গুলি মেটানো না পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।” বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, আন্দোলনের জেরেই সেই সমস্ত সমস্যা মেটানোর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সমস্যা হচ্ছে। |