সাড়ে তিন মাস ধরে এক্স-রে ফিল্ম সঙ্কটে ভুগছে বহরমপুরের জেলা হাসপাতাল। চাহিদা অনুযায়ী ফিল্ম সরবরাহ না হওয়ায় বহরমপুর নিউ জেনারেল ও সদর হাসপাতালে এক্স-রে নিয়ে ভোগান্তি হচ্ছে রোগীদের। এক্স-রে করানোর ক্ষেত্রে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বেসরকারি ল্যাবরেটরির উপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে রোগীর আত্মীয়দের। নিউ জেনারেল হাসপাতাল ও সদর হাসপাতাল এক্স-রে বিভাগের তরফে সুপারকে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। হাসপাতালের সুপার পার্থ দে বলেন, “সরকার নির্ধারিত সংস্থাগুলি এক্স-রে ফিল্ম সরবরাহ করতে পারছে না বলেই সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাদের জানানো হয়েছে। স্থানীয় ভাবে এক্স-রে ফিল্ম কিনে ওই সমস্যা কাটানোর চেষ্টা চলছে।”
জেলা হাসপাতালের মেডিসিন ও সার্জিক্যাল রোগীদের চিকিৎসা সদর ও নিউ জেনারেল হাসপাতালে হয়ে থাকে। কিন্তু সাড়ে ৩ মাস ধরে ওই দু’টি হাসপাতালে ফিল্মের অভাবে এক্স-রে হচ্ছে না। এতে ভোগান্তির মুখে পড়েছেন বহরমপুর-সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা রোগী ও রোগীর আত্মীয়েরা। নিউ জেনারেল হাসপাতালের এক্স-রে ইউনিটের এক কর্মীর কথায়, “বড় মাপের এক্স-রে ফিল্ম পাওয়া প্রায় যাচ্ছেই না। খুব সামান্য পরিমাণে ছোট মাপের কিছু এক্স-রে ফিল্ম রয়েছে হাসপাতালের কাছে। তা দিয়েই কোনও মতে কাজ চালাতে হচ্ছে। কিন্তু বড় মাপের ফিল্ম না পাওয়া গেলে গরিব মানুষের চিকিৎসা আটকে যাচ্ছে।”
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য স্থানীয় ভাবে ১ প্যাকেট (৫০টি ফিল্ম) করে ফিল্ম কিনে সরবরাহ করলেও সমস্যা রয়েই গিয়েছে। কেননা, নিউ জেনারেল হাসপাতালে প্রতি দিন ৪০-৫০টি এবং সদর হাসপাতালে ৪০-৪৫টি এক্স-রে হয়ে থাকে। বৃহস্পতিবার যেমন সদর হাসপাতালে ৪৬টি এক্স-রে হয়েছে। সেই সঙ্গে নিউ জেনারেল হাসপাতালে এক্স-রে না হওয়ায় অনেক সময়ে ওই রোগীদের সদর হাসপাতালেও পাঠানো হচ্ছে। সদর হাসপাতালের এক্স-রে বিভাগের এক কর্মী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “বুধবার স্থানীয় ভাবে দুটি সাইজের ফিল্মের ২টি করে প্যাকেট দেওয়া হয়েছে। দু-দিনের মধ্যেই তা শেষ হয়ে যাবে। ওই সমস্যার কথা লিখিত ভাবে সুপারকে জানানো হয়েছে।” পার্থবাবু বলেন, “সেন্ট্রাল মেডিক্যাল সেন্টার থেকে ১ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকার ফিল্ম কেনা হয়েছে। কিন্তু ওই বাবদ দেওয়া হয়েছে মাত্র ৫৫ হাজার টাকা। বাকি টাকা পরিশোধ না করা পর্যন্ত সেন্ট্রাল মেডিক্যাল সেন্টার কর্তৃপক্ষ ফিল্ম সরবরাহ করবে না বলে জানিয়েছে। বিষয়টি আমি স্বাস্থ্য দফতরকে জানিয়েছি। হয়তো আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই ফিল্ম সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।”
বহরমপুরের গৌতম পাল, রানিনগরের আফজল হোসেনের মতো রোগীর বাড়ির আত্মীয়রা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “বাইরে থেকে এক্স-রে করানোয় বাড়তি টাকাও গুনতে হচ্ছে। এমন অনেকেই রয়েছেন যাঁরা টাকার অভাবে এক্স-রে করাতে পারছেন না। এর ফলে চিকিৎসা শুরু করতেও দেরি হয়ে যাচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গোটা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।” জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৈয়দ শাহজাহান সিরাজ বলেন, “এটা শুধু এই জেলার সমস্যা নয়, গোটা রাজ্যের সমস্যা। বিষয়টি স্বাস্থ্যভবনকে জানানো হয়েছে।” |