|
|
|
|
ফালাকাটায় ঘোষণাই সার |
পুরসভার মর্যাদা না পেয়ে ক্ষোভ |
নিলয় দাস • ফালাকাটা |
দিনটি ছিল ১৬ নভেম্বর ২০১০। ফালাকাটার বাসিন্দারা সে দিন বিকালে তৎকালীন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যকে স্থানীয় কমিউনিটি হলে নাগরিক সম্বর্ধনা দেন। কারণ, ফালাকাটাকে পুরসভা হিসাবে অনুমোদন দিয়েছে রাজ্য সরকার, এই ঘোষণা করেন অশোকবাবু। হাততালিতে ফেটে পড়ে হলঘর। শীঘ্রই রাজ্যপাল সই করলে পঞ্চায়েত থেকে পুরসভার মর্যাদায় উত্তরণ ঘটবে এলাকার, এমন আশায় বুক বেঁধেছিলেন ফালাকাটাবাসীরা। বাম সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে শহরের মোড়ে সিপিএম-এর ছাত্র ও যুব সংগঠন ফেস্টুন টাঙিয়ে দেয়। ওই সময়ের বিরোধী তৃণমূল কংগ্রেসও পাল্টা দাবি করে জানিয়ে দেয়, তাদের আন্দোলনের জেরে শহরকে সরকার পুরসভার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে। পাশাপাশি, কেন ফালাকাটাকে ‘ঘ’ শ্রেণির পুরসভা হিসেবে ঘোষণা হল সেই প্রশ্নে বিরোধিতাও করে তৃণমূল। তার পরেও আজও পুরসভা হয়নি ফালাকাটায়। ইতিমধ্যে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে তোর্সায়। রাজ্যে ক্ষমতার হাত বদল ঘটেছে। ফালাকাটার বিধানসভার আসনও দীর্ঘ দিন বাদে সিপিএম-এর হাত থেকে কেড়ে নিয়েছে তৃণমূল। রাজ্যে ক্ষমতা দখলের পরে ৬ মাস কাটলেও নয়া পুরসভা গঠনের কাজ এতটুকুও এগোয়নি। এখন পাল্টা সরব হয়েছে সিপিএম। উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষও। ইতিমধ্যে ফালাকাটা ব্যবসায়ী সমিতি পৃথক কমিটি তৈরি করে এলাকার বিভিন্ন স্থরের লোকজনকে নিয়ে বড় মাপের আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিয়েছে। ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক দিলীপ দত্ত বলেন, “পুরসভা কতটা দরকার তা ফালাকাটার বাসিন্দারা জানেন। এভাবে কত দিন বিষয়টি ঝুলে থাকবে বুঝতে পারছি না। দ্রুত আমরা আন্দোলনে নামছি।”
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, প্রস্তাবিত ফালাকাটা পুরসভায় ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত, পারঙ্গেরপাড় ও ফালাকাটা ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের কিছু অংশ পড়বে। সে সময় জানানো হয়েছিল মোট ৬০ হাজার মানুষ পুর পরিষেবার অন্তর্ভুক্ত হবেন বলে বলা হয়। কারণ, ওই সব এলাকায় জনবসতি ক্রমশ বাড়ছে। পরিষেবা দিতে পঞ্চায়েত হিমশিম খাচ্ছে। ১০-২০ বছর আগে জেলা পরিষদ সহ কয়েকটি দফতরের অর্থ সাহায্যে শহরে যে সমস্ত নতুন পাকা রাস্তা হয়েছিল তার অনেকটাই বেহাল। বেশ কয়েকটি এলাকায় নিকাশি নালার প্রয়োজন। খুবই এ নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভের অন্ত নেই। পথ বাতি থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ। অনেক সময় পথবাতি খারাপ হলেও তা পাল্টানো হয় না বলে অভিযোগ। তবে সবকিছু ছাপিয়ে গেছে আবর্জনার সমস্যা। কোনও ডাম্পিং গ্রাউন্ড না ধাকায় ফালাকাটার রাস্তার ধারে বা পার্কের মাঠ বা পোষ্ট অফিসের মাঠ সহ সাপটানা নদীতে মানুষ আবর্জনা ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন। পুরসভা হলে এই সমস্ত যন্ত্রণা মানুষজনকে যেমন ভোগ করতে হবে না। পাশাপাশি শহরের মর্যাদা পেলে বহু উন্নয়ন মূলক কাজ হবে বলে মনে করছেন বাসিন্দারা হাই স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক নীরদবরণ রায়ের কথায়, এলাকা যত বড় হয়েছে তাতে অবশ্যই পুরসভা হওয়াটা অত্যন্ত জরুরি নিকাশি নালা, রাস্তা সহ নানান উন্নয়ন মূলক কাজ হবে পুরসভা হলে নাগরিক পরিষেবা আরও ভালো ভাবে পাওয়া যায় এটুকু বলতে পারি। ফুটবলার দেবব্রত ঘোষ মনে করেন শহরের পরিকাঠামো থাকা সত্বেও ফালাকাটাবাসী শহরের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত পুরসভা হলে বহু বেকারের কর্ম সংস্থানের পাশাপাশি শহরের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন।
সিপিএম-এর জেলা নেতা নিতাই পালের কথায়, “ক্যাবিনেটে পাশ হবার পর অর্থ দফতরের মঞ্জুরের পর ফালাকাটা পুরসভা হিসাবে স্বীকৃতির শেষ সিলমোহর পেতে রাজ্যপালের কাছে ফাইল যায়। কিছুতেই নির্বাচনের আগে যাতে সেই ফাইলে রাজ্যপাল সই না করেন, সে জন্য চাপ দিতে থাকেন তৃণমূল নেতারা। সব থমকে যায়।” ফালাকাটা পুরসভা না-হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “একসময়কার গ্রাম আজ শহরে পরিণত হয়েছে। ফালাকাটা পুরসভা হওয়া আবশ্যিক। আমরা ২০টি এমন শহরকে পুরসভার মর্যাদা পাইয়ে দিতে মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়েছিলাম। তার মধ্যে ফালাকাটা পঞ্চায়েতও ছিল। নির্বাচনের দিন ঘোষণার জন্য সে সময় তা করা যায় নি। তবে নতুন সরকারের কোন আগ্রহ আজ দেখা যাচ্ছে না।” বর্তমান তৃণমূল বিধায়ক অনিল অধিকারী অবশ্য বলেন, “আমরা ফালাকাটাকে পুরসভা হিসাবে ঘোষণা করব। এখন রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি ভাল নয়। সঙ্কট কাটিয়ে উঠলে বিষয়টি দেখা হবে।” |
|
|
|
|
|