|
|
|
|
‘সঙ্কীর্ণতা’ ছেড়ে দরকার যুক্ত আন্দোলন, বুঝছে সিপিএম |
সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা |
সরকারে থাকার সময়ে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল ‘দলতন্ত্র’ চালানোর। বিরোধী আসনে যাওয়ার পরে সেই সিপিএম-ই শ্রমিক আন্দোলনে ‘সঙ্কীর্ণতা’ পরিহার করার কথা বলছে! ডাক দিচ্ছে শ্রমিক স্বার্থে যৌথ আন্দোলন গড়ে তোলার। বাম জমানায় যেমন প্রশাসনের সর্বত্র ‘নিজেদের লোক’ বসানোর প্রবণতা চেপে বসেছিল (যার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন অশোক মিত্রের মতো প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতারাও), তেমনই বিভিন্ন গণসংগঠনে নিজেদের মত চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ বামফ্রন্টের অন্দরেই বহু বার উঠেছে। সরব হয়েছে শরিক সংগঠনগুলি। কিন্তু এখন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের তরফেই মেনে নেওয়া হচ্ছে, ‘সঙ্কীর্ণতা’ বাদ দিয়ে যুক্ত আন্দোলনের ‘ইতিবাচক প্রবণতা’ গড়ে তোলা দরকার। বলা হচ্ছে, শ্রমিকদের স্বার্থে নিজেদের ‘আন্তরিকতা’ বাড়ানোর কথা।
প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই নিজস্ব ট্রেড ইউনিয়ন থাকায় শ্রমিকেরা যে অনেক সময়েই ‘বিভক্ত’ হয়ে পড়েন তা উল্লেখ করেই সিপিএমের রাজ্য কমিটির তরফে প্রকাশিত সাম্প্রতিকতম চিঠিতে বলা হয়েছে: ‘যুক্ত আন্দোলন গড়ে তোলায় সঙ্কীর্ণতা পরিহার করা দরকার। যুক্ত আন্দোলন গড়ে তোলা ইতিবাচক প্রবণতা। কিন্তু যুক্ত আন্দোলনের উদ্দেশ্যে শিল্পের সমগ্র শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করা, সমস্ত শ্রমিকের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ স্থাপনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আন্তরিকতা ও রাজনৈতিক বক্তব্যের সাহায্যে অন্য সংগঠনের অনুগামীদের আস্থা অর্জন করে সর্ব স্তরেই যুক্ত আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার’। সিপিএম অবশ্য ‘যুক্ত আন্দোলন’ করতে গিয়ে নিজস্ব সত্তা বিসর্জন দেওয়ার কথা বলেনি। তবে যুক্ত আন্দোলন করেও নিজেদের সদস্য কমে যাওয়ায় তারা ‘উদ্বিগ্ন’। পার্টি চিঠির বক্তব্য, ‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, যুক্ত আন্দোলনের সাফল্যের পরেও সদস্য কমছে। এটা সংশ্লিষ্ট শিল্পে আমাদের নেতৃত্ব ও কর্মীদের দুর্বলতা। অথচ তার পর্যালোচনা হচ্ছে না বা রাজনৈতিক, সাংগঠনিক ত্রুটিগুলি চিহ্নিত করে তা সংশোধনের উদ্যোগ নেই। কোথাও কোথাও নিলেও ধারাবাহিকতা থাকছে না। এটা ট্রেড ইউনিয়নে কর্মরত পার্টি নেতা ও সদস্যদের দুর্বলতা’। এই ‘দুর্বলতা’ কাটানোর পাশাপাশি ই ব্যাখ্যা করা হয়েছে, ‘স্বাধীন কর্মধারা’ও অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ সিপিএমের মতে, ‘নিজস্ব শক্তির উপরে দাঁড়িয়ে যুক্ত আন্দোলনের সঠিক পথনির্দেশ করা সম্ভব’।
কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির যৌথ আন্দোলনের ফসল হিসাবেই চলতি মাসে দেশ জুড়ে আইন অমান্য কর্মসূচি পালিত হয়েছে, আগামী বছরের গোড়ায় সারা দেশে সাধারণ ধর্মঘট ডাকার প্রস্তুতিও চলছে। কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির এই এক ছাতার তলায় কংগ্রেস, বিজেপি-র শ্রমিক সংগঠনও সামিল হয়েছে। তবে এক মঞ্চে থেকেও সাম্প্রতিক কালে কখনও সিপিএমের সংগঠন সিটুর সঙ্গে সিপিআইয়ের এআইটিইউসি, কখনও অন্যান্য বাম সংগঠনের বিরোধ বেধেছে। যুক্ত আন্দোলন গড়ে তোলা এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় ‘আন্তরিকতা’র কথা বলে সিপিএম শ্রমিক নেতৃত্বকে ওই ধরনের ভুল বোঝাবুঝি এড়িয়ে চলার ‘বার্তা’ই দিল বলে দলীয় সূত্রের ব্যাখ্যা। সিপিএমের রাজ্য স্তরের এক শ্রমিক নেতার কথায়, “শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে সাধারণ রাজনীতি গুলিয়ে ফেলার একটা প্রবণতা বারেবারেই দেখা গিয়েছে। শ্রমিকদের আন্দোলন যে মূলত শিল্পের সমস্যা এবং অর্থনৈতিক দাবির ভিত্তিতেই হয় এবং তার জন্য ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম শ্রমিকদের দাবি আদায়েই সুবিধা করে দেয়, এটা বুঝেই এগোতে হবে। সাম্প্রতিক কালে সর্বভারতীয় এবং রাজ্য স্তরে বিভিন্ন আন্দোলনে যৌথ পদক্ষেপ দেখাও যাচ্ছে।” ট্রেড ইউনিয়নের সাম্প্রতিক আইন অমান্যে সিটু এ রাজ্যে ‘সন্ত্রাসে’র প্রসঙ্গটি অন্তর্ভুক্ত করায় কংগ্রেসের আইএনটিইউসি তো বটেই, সিপিআইয়ের শ্রমিক সংগঠনও আপত্তি তুলেছিল। ‘সঙ্কীর্ণতা’ পরিহার করার পরামর্শের পরে সেই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ হয় কি না, দেখতে চান বাম শরিক নেতৃত্ব। |
|
|
|
|
|