|
|
|
|
বেতন চেয়ে বিক্ষোভ ট্রামে |
রুগ্ণ পরিবহণে ফের সেই ভর্তুকিরই দাওয়াই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
রাজ্যের সরকারি পরিবহণ নিগমগুলোকে নিজের পায়ে দাঁড় করাতে চেয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। যে জন্য তাদের পায়ের তলা থেকে ভর্তুকির খুঁটি সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু সিদ্ধান্তে রাজ্য অটল থাকতে পারল না। কর্মী-বিক্ষোভ সামাল দিতে পরিবহণে সেই ভর্তুকিরই পথ ধরছে রাজ্য।
লোকসানের ভারে ধুঁকতে থাকা সরকারি সংস্থার বোঝা বইতে সরকার যে আর রাজি নয়, তা বোঝাতে গত মাস থেকে পাঁচটি পরিবহণ নিগমে কর্মীদের বেতন বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। স্থগিত হয়ে গিয়েছিল অবসরপ্রাপ্তদের পেনশনও। যার প্রতিবাদে ট্রাম কোম্পানি (সিটিসি)-র কর্মীরা বৃহস্পতিবার দিনভর নোনাপুকুর ট্রাম ডিপোয় বিক্ষোভ দেখান। রাস্তা অবরোধ হয়।
প্রতিবাদের আঁচ ছড়িয়ে পড়ে অন্যত্র। বিক্ষোভ শুরু হয় বেলগাছিয়া ডিপোতেও। সমস্যা না-মিটলে ‘আরও বড়’ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়।
পরে কর্তৃপক্ষের ‘আশ্বাসে’ আন্দোলন ওঠে। যদিও ‘আশ্বাস’টা কী, তখন বোঝা যায়নি।
সেটা বিকেলে মহাকরণে পরিষ্কার করে দিলেন পরিবহণ-সচিব বিপি গোপালিকা। সচিব জানালেন, “সরকার আপাতত ভর্তুকি দিয়েই পরিবহণ সংস্থাগুলোর স্থায়ী কর্মীদের বকেয়া বেতন মেটাবে। সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আয়ের পথ খুঁজতে।”
কিন্তু বিভিন্ন নিগমের বিভিন্ন কর্তা বলছেন, আয় বাড়াতে গেলে ভাড়া বাড়ানো দরকার। অথচ সরকার তাতে নারাজ! যাত্রী-ভাড়া না-বাড়িয়ে রুগ্ণ পরিবহণকে চাঙ্গা করা আদৌ সম্ভব কি না, সে প্রশ্নটা অতএব থেকেই যাচ্ছে। আরও বড় প্রশ্ন: কোষাগারে এই টানাটানির অবস্থায় ভর্তুকি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে রাজ্য পিছিয়ে আসছে কেন?
পরিবহণ-সচিবের জবাব, “ভর্তুকি হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া যায় না।” তা হলে কেন নিগমগুলোয় বেতন-পেনশন এই ভাবে বন্ধ করে রাখা হয়েছিল?
গোপালিকা বলেন, “এক-একটা সংস্থায় কত কর্মী রয়েছেন, সে সম্পর্কে দফতরের কাছে তথ্য ছিল না। সরকারি নির্দেশমতো সিটিসি, এসবিএসটিসি এবং সিএসটিসি স্থায়ী কর্মীদের তথ্য পাঠিয়েছে।”
এবং তালিকা পেয়ে ওই তিন সংস্থার বেতন সংক্রান্ত ফাইল অর্থ দফতরে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়ে সচিব বলেন, “অর্থের সবুজ সঙ্কেত পেলেই তিনটি সংস্থার কর্মীদের বকেয়া বেতন মিটিয়ে দেওয়া হবে।” তবে এনবিএসটিসি-কর্তৃপক্ষ স্থায়ী কর্মীর তালিকা না-পাঠানোয় সেখানকার বেতন-ফাইল এখনও অর্থ দফতরে পাঠানো যায়নি।
বকেয়া বেতন না হয় মিটবে। অবসরপ্রাপ্ত যে কর্মীরা পেনশন পাচ্ছেন না, তাঁদের কী হবে? সচিব বলেন, “বিভিন্ন পরিবহণ নিগমকে পেনশনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ আমরা বেশ ক’দিন আগেই বরাদ্দ করে দিয়েছি। পেনশনের টাকা হরেক নিয়ম মেনে অবসরপ্রাপ্তদের হাতে পৌঁছোয়। আশা করি, দু’-এক দিনের মধ্যে পৌঁছে যাবে।”
এ দিকে বেতনের দাবিতে এ দিন ট্রাম কোম্পানির কর্মীরা যে ভাবে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, তার সমালোচনা করেছেন পরিবহণমন্ত্রী সুব্রত বক্সি। মন্ত্রীর মতে, “অতীতের দুর্নীতির পাহাড়কে রক্ষা করার দায়িত্ব এই মন্ত্রিসভার নয়। এই মন্ত্রিসভার দায়িত্ব দুর্নীতি দূর করে স্বচ্ছতার সঙ্গে বাংলার মানুষের জন্য কাজ করা।”
|
|
|
|
|
|