|
|
|
|
রেডার, নজর-চৌকি ও ফৌজি নৌকার সুরক্ষা ব্যূহে সুন্দরবন |
চিরন্তন রায়চৌধুরী • কলকাতা |
যারা ২০০৮-এর ২৬ নভেম্বর মুম্বইয়ে হামলা চালিয়েছিল, সেই জঙ্গিরা এসেছিল সমুদ্রপথেই। একই ভাবে সুন্দরবনের উপকূল দিয়ে জঙ্গিরা ঢুকে পড়তে পারে বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের আশঙ্কা। তাই সুন্দরবনের নিরাপত্তা নিয়ে বাড়তি ‘সতর্ক’ সামরিক বাহিনী। ২৬/১১ থেকে ‘শিক্ষা’ নিয়েই সেখানে নিরাপত্তা জোরদার করছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।
ওই মন্ত্রক সূত্রের খবর, কয়েক মাসের মধ্যেই উপকূলরক্ষী বাহিনীর নতুন আঞ্চলিক সদর দফতর হচ্ছে কলকাতায়। ফ্রেজারগঞ্জে তৈরি হচ্ছে ওই বাহিনীর নজরদার চৌকি। সাগরদ্বীপে বসছে শক্তিশালী রেডার। নদী-খাঁড়ির ভিতরে পৌঁছতে তৈরি রাখা হচ্ছে ‘ফাস্ট অ্যাটাক ক্রাফট’ বা দ্রুতগতির সামরিক নৌকা।
উপকূলরক্ষী বাহিনী সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন তাদের দু’টি জাহাজ এবং দু’টি বিমান নিয়মিত সুন্দরবন ও সন্নিহিত সামুদ্রিক এলাকায় টহল দেয়। জঙ্গলের মধ্যে অগভীর জলের খাঁড়িতে প্রতিদিন নজরদারি চালায় ‘হোভারক্রাফট’। কয়েক মাসের মধ্যে হলদিয়ার মতো ফ্রেজারগঞ্জেও উপকূলরক্ষী বাহিনীর একটি নতুন চৌকি তৈরি হবে। নৌবাহিনী সূত্রের খবর, দেশের ৭৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূল জুড়ে রেডারে নজরদারির ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন এলাকার লাইটহাউস বা বাতিঘরে বসবে ৩৬টি রেডার এবং ৪৬টি সেন্সর (ইলেকট্রো-অপটিক স্ট্যাটিক সেন্সর)। সাগরদ্বীপের রেডারটির ‘মনিটরিং সিস্টেম’ বা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকবে হলদিয়ায়। উপকূলের ১২ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে কোনও জলযান এলেই রেডারে সেটির উপস্থিতি ধরা পড়বে।
|
নয়া সাজ
• ফ্রেজারগঞ্জে নজরদার চৌকি
• সাগরদ্বীপে শক্তিশালী রেডার
• নদী ও খাঁড়িতে ঢুকতে
দ্রুতগতির ফৌজি নৌকা
• কলকাতায় উপকূলরক্ষী
বাহিনীর নতুন আঞ্চলিক সদর |
|
মুম্বইয়ে জঙ্গি হানার পরে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা রিপোর্ট জানিয়েছিল, পশ্চিম এবং উত্তর-পূর্বের সীমান্ত অঞ্চলে নিরাপত্তা বেড়ে যাওয়ায় সুন্দরবনের সহজ ‘রুট’-এর দিকে নজর পড়তে পারে শত্রুদের। সুন্দরবনের পথে ৪-৫ জনের ছোট দলে ভাগ হয়ে এ দেশে ঢুকতে পারে জঙ্গিরা। ৪০ নটিক্যাল মাইল গতিবেগের নৌকায় যে-কেউই সুন্দরবন থেকে আড়াই ঘণ্টায় পৌঁছে যেতে পারে কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে।
রিপোর্টে বলা হয়, কয়েক বছর আগে সুন্দরবনের কিছু এলাকায় ‘জনসংযোগ’-এর চেষ্টা করেছিল পাকিস্তানি জঙ্গিদের বাংলাদেশি এজেন্টরা। পুরস্কারের টোপ দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনুরোধ করা হয়, তাঁরা যেন ‘বিশেষ’ লোকেদের অনুপ্রবেশে সাহায্য করেন। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সুন্দরবনের নিরাপত্তার জন্য উপকূলরক্ষী বাহিনী, সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা বিএসএফ এবং রাজ্য প্রশাসন মিলেমিশে কাজ করছে। জঙ্গি অনুপ্রবেশ, চোরাপাচার, জলদস্যু হানা রুখতে সুন্দরবনের গ্রামবাসী, মৎস্যজীবী, মাঝিমাল্লাদের নিয়ে তথ্য আদানপ্রদানের ‘নেটওয়ার্ক’ গড়ছে প্রশাসন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের এক মুখপাত্র বলেন, “সুন্দরবনে ‘সোর্স’ মারফত খবর সংগ্রহ বা ‘হিউম্যান ইনটেলিজেন্স’-এর ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। জঙ্গলে ‘গুপ্তচর’ যন্ত্রের সাহায্যে পাহারা বা বেতার মাধ্যমে রাষ্ট্র-বিরোধী গোপন সঙ্কেত জরিপের কাজও চলে।”
মন্ত্রকের এই মুখপাত্র আরও জানান, দেশের জলসীমার নজরদারিতে বিভিন্ন এলাকার মৎস্যজীবী, মাঝিমাল্লা এবং উপকূলের গ্রামবাসীদের নিয়ে ‘সাগর সুরক্ষা দল’ তৈরির প্রক্রিয়াও চলছে। মৎস্যজীবীদের ‘ডিস্ট্রেস অ্যালার্ট ট্রান্সফর্মার’ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে নৌবাহিনী। সমুদ্রে কোনও সমস্যা অথবা সন্দেহজনক কিছু দেখলে ওই যন্ত্রের সাহায্যে নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে বার্তা পাঠানো যাবে।
গোয়েন্দা রিপোর্ট জানিয়েছিল, সুন্দরবনের জনবসতিহীন দ্বীপগুলি অনুপ্রবেশকারীদের মুক্তাঞ্চল। সেখানে বাংলাদেশি মোবাইল পরিষেবা সংস্থাগুলির নেটওয়ার্কও মেলে। যাঁরা ট্রলার নিয়ে বঙ্গোপসাগরের গভীরে মাছ ধরতে যান, তাঁদের চোখেও ওই সব এলাকায় আকছার ‘গোলমেলে’ কাজকর্ম ধরা পড়ে। পাথরপ্রতিমার বনশ্যামনগরের বাসিন্দা, মৎস্যজীবী মহাদেব দেবনাথ (নাম পরিবর্তিত) যেমন বলছেন, “বাংলাদেশ থেকে স্পিডবোটে মাঝেমধ্যেই সুন্দরবনে ঢোকে অনেকে। কখনও কখনও জলদস্যুরা রিভলভার ও বোমা দেখিয়ে নৌকায় লুঠপাট চালায়। আমরাও জল-পুলিশ, নৌবাহিনীর লোকেদের খবর দেওয়ার চেষ্টা করি।” |
|
|
|
|
|