|
|
|
|
টাকা নেই তেলের, স্পিডবোট বন্ধ থাকায় উপকূলে টহলও শিকেয় |
দেবজিৎ ভট্টাচার্য • কলকাতা |
তেল বাবদ যা খরচ হবে, কেন্দ্র পরে তা ফেরত দিয়ে দেবে। তা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার টাকা দিচ্ছে না। অনেক টাকা বাকি পড়ে যাওয়ায় স্থানীয় পাম্প-মালিকেরাও তেল দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। এই দুইয়ের ফাঁসে উপকূলবর্তী এলাকায় নজরদারির জন্য কেন্দ্রের দেওয়া স্পিডবোটগুলি অচল হয়ে গিয়েছে।
২০০৮-এর ২৬ নভেম্বর মুম্বইয়ের তাজ হোটেলে জঙ্গি হানার পরে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা জানতে পেরেছিলেন, আক্রমণকারীরা জলপথে পাকিস্তান থেকে এ দেশে ঢুকেছিল। তার পরেই জলপথে নজরদারি বাড়ানোর জন্য উপকূলবর্তী রাজ্যগুলিকে সব রকম সাহায্য দেওয়ার কথা বলেছিল কেন্দ্র। সেই অনুসারে নদীতীরবর্তী এলাকায় থানা তৈরি থেকে শুরু করে নজরদার স্পিডবোট কেনা পর্যন্ত সমস্ত খরচ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
কিন্তু সেই টাকা পেয়েও বঙ্গোপসাগরের লাগোয়া উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে উপকূল পুলিশি ব্যবস্থা পুরোদস্তুর চালু করে উঠতে পারেনি রাজ্য সরকার।
|
|
ফ্রেজারগঞ্জ মৎস্যবন্দরে পড়ে রয়েছে রাজ্য পুলিশের স্পিডবোট। ছবি: দিলীপ নস্কর |
কোথাও ভাড়া বাড়িতে থানা চলছে। কোথাও থানার ভবন তৈরি হলেও পর্যাপ্ত পুলিশ নেই। কোথাও পুলিশ আছে তো ব্যারাক নেই। আবার কোথাও জলপথে নজরদারির জন্য একটিও স্পিডবোট হাতে পায়নি রাজ্যের ‘কোস্টাল পুলিশ’ বা উপকূল পুলিশ। যে-সব জায়গায় স্পিডবোট পাওয়া গিয়েছে, তার সর্বত্র যে সেগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে, তা-ও নয়। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা জানান, এ-পর্যন্ত রাজ্যে ছ’টি উপকূল থানা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফ্রেজারগঞ্জ উপকূল থানাকে তিনটি, মৈপীঠকে দু’টি এবং সুন্দরবন থানাকে একটি স্পিডবোট দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে ফ্রেজারগঞ্জে একটি স্পিডবোট চলছে অনিয়মিত ভাবে, মৈপীঠেরটি না-চলার মতোই। এবং অনেক দিন আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে সুন্দরবন থানার স্পিডবোটটি। একই অবস্থা পূর্ব মেদিনীপুরেও। সেখানে দু’টি উপকূল থানার জন্য ছ’টি স্পিডবোট দেওয়া হলেও চলছে মাত্র দু’টি।
এই হাল কেন?
রাজ্যের এক পুলিশকর্তা বলেন, “অত্যন্ত দ্রুতগামী এই সব জলযানে খুব বেশি তেল লাগে। ঘণ্টায় ৫০-৫৫ লিটার তেল পোড়ে। কেন্দ্র বলেছে, তেল বাবদ টাকা পরে দেবে। খরচ তো প্রথমে রাজ্যকেই করতে হবে। সেটাই হয়নি।” রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা জানান, ২০০৯ সালে রাজ্যে উপকূল পুলিশি ব্যবস্থা চালু হওয়ার আগে বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মীকে স্পিডবোট চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তাঁদের উপকূল থানা থেকে বদলি করে দেওয়ার পরে সেই জায়গায় আর কোনও লোক দেওয়া হয়নি। নতুন করে কারও প্রশিক্ষণও হয়নি।
ফলে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়েই চলছে রাজ্যের উপকূল পুলিশি ব্যবস্থা। রাজ্যের এক পুলিশকর্তা বলেন, “অস্থায়ী ভাবে বাড়ি ও ব্যারাক তৈরি করে বিভিন্ন থানা থেকে পুলিশ পাঠিয়ে উপকূল থানাগুলি চালু করে দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী কালে সেখানে আরও কর্মী দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা আর দেওয়া হয়নি।”
পুলিশকর্তাদেরই একাংশের অভিযোগ, উপকূল পুলিশি ব্যবস্থাকে আঁটোসাঁটো করতে সরকার কোনও দিনই তেমন উদ্যোগীই হয়নি। ওই ব্যবস্থার দায়িত্বে ছিলেন, এমন ছ’জন আইজি-কে গত দু’বছরে বদলি করা হয়েছে।
বর্তমান আইজি (উপকূল পুলিশ) অনুজ শর্মা দায়িত্ব নিয়েছেন মাস দুয়েক আগে। তিনি বলেন, “শুধু তেল নয়, স্পিডবোটগুলি চালানোর জন্য যত পুলিশ দরকার, তা নেই। তাই আরও পুলিশ চাওয়া হয়েছে। তেলের খরচ যাতে দ্রুত মেটানো হয়, জানানো হয়েছে সেই আর্জিও।” |
|
|
|
|
|