|
|
|
|
মরসুম পার, লাল ফিতের ফাঁসে বন্দি গম চাষের টাকা |
শ্যামল মুখোপাধ্যায় • কলকাতা |
খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধির প্রকল্পে কেন্দ্রের পাঠানো ২৯ কোটি টাকা এসে গিয়েছে মাস চারেক আগে। ঠিক ছিল, পশ্চিমবঙ্গে গমের ফলন বাড়াতে তা খরচ করা হবে।
কিন্তু বাদ সেধেছে লাল ফিতের ফাঁস। অনুমোদনের গেরোয় আটকে রয়েছে প্রকল্পের ছাড়পত্র। তারই মধ্যে পেরিয়ে গিয়েছে গম চাষের মরসুমই!
কেন্দ্রীয় খাদ্য নিরাপত্তা মিশনে চলতি অর্থবর্ষে পশ্চিমবঙ্গের পাওয়ার কথা ৫৭ কোটি ৩ লক্ষ ৫৩৫ টাকা। যার প্রথম কিস্তি হিসেবে ২৯ কোটি টাকা কেন্দ্র চার মাস আগে রাজ্যকে পাঠিয়ে দিয়েছে। কৃষি দফতর স্থির করেছিল, ওই টাকায় রাজ্যের আট জেলায় পৌনে চার লক্ষ হেক্টর জমিতে গম ফলানো হবে। চাষিদের দেওয়া হবে উন্নত মানের বীজ-সার-যন্ত্রপাতি। কিন্তু সব পরিকল্পনাই কার্যত জলে যেতে বসেছে স্রেফ রাজ্য সরকারি ‘দীর্ঘসূত্রতার’ জেরে। কী ভাবে?
রাজ্যের কৃষি-অধিকর্তা সার্থককুমার বর্মা বৃহস্পতিবার বলেন, “এখনও গম চাষের সরকারি অনুমোদনই মিলল না! এর পরে কোনও চাষি গম চাষ করতে রাজি হবেন না।” অধিকর্তার যুক্তি, ১৫ নভেম্বরের মধ্যে গম চাষ শুরু করতে হয়। তার পরে চেষ্টা করা বৃথা। শুধু তা-ই নয়, ডাল-শস্যের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা হতে পারে। কারণ, ওই চাষ ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে শুরু করা দরকার। এর দেরি হলে আট জেলায় ৩ লক্ষ ১০ হাজার হেক্টরে মুগ-মুসুর-সয়াবিন-ছোলা ইত্যাদি রোপণের কর্মসূচিও মার খাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন কৃষি-অধিকর্তা।
সরকারি অনুমোদনে বিলম্বের কী ব্যাখ্যা দিচ্ছে রাজ্য সরকার?
রাজ্যের কৃষি-সচিব হৃদেশ মোহন অবশ্য অভিযোগ মানতে নারাজ। তিনি এ দিন বলেন, “প্রকল্প তৈরি। দেরিতে লাগানো যায়, এমন ধরনের গমবীজ সরবরাহের ব্যবস্থা হচ্ছে। গম চাষ হবেই।” যদিও স্বয়ং কৃষিমন্ত্রী তাঁর সচিবের এ হেন দাবি সমর্থন করছেন না। বরং মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলছেন, “কৃষিজীবী পরিবারের লোক হিসেবে বলতে পারি, এখন আর গম চাষের সময় নেই।” মন্ত্রীই জানান, এখন শুরু করলেও টেন্ডার ডেকে বীজ কিনে চাষির হাতে তুলে দিতে প্রায় দেড় মাস লাগবে। তার পরে কোনও ভাবেই গম চাষ সম্ভব নয়।
তা হলে অনুমোদন এখনও মিলল না কেন?
একই প্রশ্ন মন্ত্রীরও! যিনি বলছেন, “গুরুতর অসুস্থ অবস্থাতেও বাড়িতে বসে সরকারি কাজ করছি! জানি না, প্রকল্পটা কোথায়, কী ভাবে আটকে রয়েছে। আমারও প্রশ্ন, এত দেরি হল কেন?” বস্তুত এমন নানা ‘প্রশ্নের’ উত্তর পেতেই আজ, শুক্রবার সচিবকে ডেকেছেন তিনি।
তা হলে কেন্দ্রীয় প্রকল্পটির টাকা কি ফেরত যাবে?
প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে কথা বলতে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি সঞ্জয় সাহা এ দিন কৃষি-অধিকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন। গম চাষ সম্ভব না-হলে সেই টাকায় অন্য শস্য চাষের অনুমতি যাতে কেন্দ্র দেয়, সে জন্য সঞ্জয়বাবুকে অনুরোধ করেন অধিকর্তা। সার্থককুমার পরে জানান, পরবর্তী কোনও প্রকল্পে ওই টাকা খরচের ব্যাপারে কেন্দ্র অনুমোদন দেবে বলেই তিনি আশা করছেন। |
|
|
|
|
|