|
|
|
|
|
তীব্র অর্থাভাবে এ বার রাজ্যের
বিপিএল চালের ভাঁড়ারেও টান |
কাজী গোলাম গউস সিদ্দিকী • কলকাতা |
|
বাড়তি বরাদ্দ পেয়েও লাভ হল না। টাকার অভাবে তার অর্ধেকও তুলে উঠতে পারল না রাজ্য। ফলে পশ্চিমবঙ্গে দারিদ্রসীমার নিম্নবর্তী (বিপিএল) মানুষদের সরবরাহ করার চালের ভাঁড়ারেও সঙ্কট দেখা দিতে চলেছে।
রাজ্য শাসনক্ষমতায় আসার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, জঙ্গলমহল ও পাহাড়ে দরিদ্র জনগণকে রেশনে অতিরিক্ত চাল দেওয়া হবে। সেইমতো ওই দুই এলাকায় বিপিএলের সংজ্ঞা ‘শিথিল’ করে আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে দারিদ্রসীমার আওতায় এনেছিলেন তিনি।
আর ওই বাড়তি লোকজনের জন্য কেন্দ্রের কাছে বিপিএল-খাতে অতিরিক্ত চাল চেয়েছিল রাজ্য। কিন্তু রাজ্যের বর্তমান আর্থিক সঙ্কটের প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা শেষমেশ পর্যন্ত কার্যকর করা যাবে কি না তা নিয়েই সন্দেহ দেখা দিয়েছে। বস্তুত বিপিএল-খাতে বরাদ্দ অতিরিক্ত চালের অর্ধেকও পশ্চিমবঙ্গ তুলতে পারেনি। সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ায় বাকি চাল অন্য রাজ্যে চলে যাবে বলে খাদ্য দফতরের আশঙ্কা। পশ্চিমবঙ্গের অনুরোধ মেনে কেন্দ্র এ বার রাজ্যের বিপিএল পরিবারগুলোর জন্য অতিরিক্ত ২২ হাজার ৬৮২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করেছিল। শর্ত ছিল, ৩১ অক্টোবরের মধ্যে তার অন্তত ৫০ ভাগ পশ্চিমবঙ্গ সরকার তুলে নেবে। নচেৎ বাকি চাল অন্য রাজ্যে চলে যাবে।
এখন খাদ্য দফতরের নথিতে দেখা যাচ্ছে, নির্ধারিত সময়সীমার রাজ্য ওই অতিরিক্ত বরাদ্দের মাত্র ৩৭% তুলতে পেরেছে। এ বিষয়ে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রীকে একটা নোটও পাঠিয়েছেন খাদ্য-অধিকর্তা। যাতে বলা হয়েছে, ‘তথ্য মোতাবেক, বিপিএলদের জন্য যে অতিরিক্ত চাল বরাদ্দ হয়েছে, তা ঠিকমতো তোলা হয়নি।’ |
জমা-খাতা |
বাড়তি বরাদ্দ* |
২২, ৬৮২ |
রাজ্য তুলেছে** |
৮, ৪৯২ (৩৭.৪৪%) |
তুলতে হতো** |
১১, ৩৪১ (৫০%) |
স্বাভাবিক বরাদ্দ* |
৭১, ৪২২ |
হিসেব মেট্রিক টনে **৩১ অক্টোবরের মধ্যে*চলতি বছরে |
|
এবং এই কারণে জঙ্গলমহলের গরিব মানুষকে অতিরিক্ত চাল জোগানোর কর্মসূচিও যে মার খাবে, নোটে তা পরিষ্কার করে দিয়েছেন খাদ্য-অধিকর্তা। পাশাপাশি অধিকর্তার নোটে এ-ও স্পষ্ট যে, জঙ্গলমহলে বিপিএলদের মাসিক খাদ্যশস্য সরবরাহের ধার্য লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ করা যাচ্ছে না। জঙ্গলমহলে বিপিএল পরিবারপিছু ৪৫ কিলো চাল সরবরাহের কথা। ‘ঠিকমতো ভর্তুকি ও পরিবহণ খরচের টাকা মিললে তবেই এটা ৪০ কিলো থেকে বাড়িয়ে ৪৫ কিলো করা সম্ভব হবে বলে অধিকর্তা পরিষ্কার জানিয়েছেন মন্ত্রীকে।
খাদ্যমন্ত্রী কী বলছেন? খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “আমরা কিছু চাল তুলেছি। কিন্তু সবটা তোলার মতো টাকা আমাদের হাতে নেই। রাজ্য সরকার টাকা দিলে তবেই তোলা যাবে।”
কেন্দ্রীয় নিয়মানুযায়ী, যে সব পরিবারের মাসিক আয় সর্বাধিক ১,২৫০ টাকা, তারাই বিপিএল-কার্ড পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হয়ে এই ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে দেন। ঘোষণা করেন, জঙ্গলমহলে যে সব আদিবাসী পরিবারের বাৎসরিক আয় সর্বাধিক ৩৬ হাজার টাকা (অর্থাৎ, মাসে গড়ে ৩ হাজার) তাদেরও বিপিএল-তালিকাভুক্ত করা হবে। উপরন্তু রাজ্যের অন্যত্র যে সব অ-আদিবাসী পরিবারের বার্ষিক আয় সর্বাধিক ২৪ হাজার টাকা (মাসে ২ হাজার), তারাও বিপিএল তালিকায় ঢুকবেন।
ফলে স্বভাবতই রাজ্যে বিপিএল কার্ডধারীদের সংখ্যা এক লাফে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। খাদ্য-সূত্রের খবর: বিপিএল পরিবারগুলো দু’টাকা কিলো দরে চাল পায়। ওই চাল কেন্দ্রের থেকে রাজ্য সরকার কেনে ৬ টাকা ১৫ পয়সা কিলো দরে। অর্থাৎ প্রতি কিলোয় ৪ টাকার বেশি ভর্তুকি দিয়ে বিপিএল-কে চাল জোগায় রাজ্য। আর বিপিএল-কার্ডের সংখ্যা যত বাড়ছে, ফুলে-ফেঁপে উঠছে চালে ভর্তুকির বহরও। এর ফলেই বাড়তি বরাদ্দের চাল তোলার টাকায় টান পড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন খাদ্য দফতরের এক কর্তা। |
|
|
|
|
|