শান্তিপ্রয়াসে ধাক্কা, মত মধ্যস্থ ও মাওবাদীদের
কিষেণজির মৃত্যু শান্তি-প্রক্রিয়াকে বড় ধাক্কা দিল বলে মনে করছেন মধ্যস্থতাকারীরা। একই মত মাওবাদীদেরও।
কিষেণজির মৃত্যু কি শান্তি আলোচনাকে ব্যাহত করবে? মধ্যস্থতাকারী দলের সদস্যরা এ প্রশ্নের সরাসরি জবাব দিতে চাননি। তবে ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁরা বলেছেন, এ ঘটনা নিঃসন্দেহে শান্তি প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করবে। কারণ, কিষেণজি বিবৃতি দিয়ে ঘোষণা করেছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চান। এক মাওবাদী নেতাও বলেন, “কিষেণজি মমতাকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চেয়েছিলেন। আর মমতা ক্ষমতায় আসার ছ’মাসের মধ্যে তাঁর পুলিশের হাতে মৃত্যু হল কিষেণজির। এর পরে আলোচনার আর কী থাকতে পারে?”
মধ্যস্থতাকারী দলের অন্যতম সদস্য সুজাত ভদ্র এবং ছোটন দাস মানবাধিকার সংগঠনের কর্মী হিসাবে দাবি করেছেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী অবিলম্বে যৌথ বাহিনীর বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় খুনের মামলা রুজু করতে হবে। করতে হবে নিরপেক্ষ তদন্ত। তাঁদের কথা থেকে স্পষ্ট কিষেণজির মতো মাওবাদীদের শীর্ষ নেতা যৌথ বাহিনীর হাতে নিহত হওয়ায় মধ্যস্থতাকারীরা রীতিমতো সমস্যায় পড়েছেন। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী গত শনিবার সুজাতবাবুদের সঙ্গে বৈঠকের পরে তাঁদের শান্তি-আলোচনা চালিয়ে যেতে বলেন। পুজোর আগে সুজাতবাবু এবং ছোটনই মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা নিয়ে মাওবাদী নেতা আকাশের সঙ্গে আলোচনা করতে গিয়েছিলেন।
কিষেণজির মৃত্যু কি মধ্যস্থতার কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করল? জবাবে সুজাতবাবু বলেন, “কিষেণজির মৃত্যু হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যম বলছে। এর ফলে মাওবাদীদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা ভেস্তে গেল কি না, তা নিয়ে এখনই কোনও মন্তব্য করছি না। আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করব। সরকারের সঙ্গে কথা বলব। তার পরে যা বলার বলব।” একই কথা বলেছেন ছোটনবাবু এবং কল্যাণ রুদ্রও।
যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ না ভুয়ো সংঘর্ষ, তা নিয়ে তিনি এখনই প্রশ্ন তুলছেন না জানিয়ে সুজাতবাবু বলেন, “এক জন মানবাধিকার কর্মী হিসাবে আমার দাবি, যাঁরা অভিযানের দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশ মেনে ৩০২ ধারায় খুনের মামলা রুজু করতে হবে। নিরপেক্ষ কাউকে দিয়ে তদন্ত করাতে হবে। পুলিশকে প্রমাণ করতে হবে, আত্মরক্ষার্থে তারা গুলি চালিয়েছে। দেহটি সত্যিই কিষেণজির হলে অন্ধ্রপ্রদেশে তাঁর আত্মীয়দের হাতে তা তুলে দিতে হবে।”
এক ধাপ এগিয়ে ছোটনবাবু বলেন, “কিষেণজির মতো এক জন রাজনৈতিক নেতাকে এই ভাবে ঘিরে ধরে গুলি করে মারা বন্দি মুক্তি কমিটির পক্ষ থেকে আমি নিন্দা করছি। পুলিশ কিষেণজিকে গ্রেফতার না করে গুলি চালাল কেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ মতো তা নিয়ে তদন্ত করতে হবে।” কিষেণজি পাল্টা গুলি চালিয়েছিলেন কি না, সে প্রশ্ন তুলে ছোটনবাবুর আরও বলেন, “তিনি গুলি চালিয়ে থাকলে তা প্রমাণ করতে হবে।” কিষেণজি একটি রাজনৈতিক দলের প্রথম সারির নেতা ছিলেন, তা জানিয়ে ছোটনবাবু বলেন, “যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে তাঁর মরদেহ সৎকার করার জন্য আত্মীয়-পরিজনের হাতে তুলে দিতে হবে।”
সরকার-নিযুক্ত দুই মধ্যস্থতাকারীর কথা থেকে স্পষ্ট, গোটা বিষয়টা তাঁদের অত্যন্ত অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। ঘনিষ্ঠ মহলে মধ্যস্থতাকারীরা বলেছেন, এর পরে কোন মুখে তাঁরা মাওবাদীদের কাছে শান্তির বার্তা নিয়ে যাবেন? মাওবাদীদের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বজায় রাখতেই সুকৌশলে তাঁরা যৌথ বাহিনীর ভূমিকার নিন্দা করছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
আলোচনার উপরে তারা যে আর ভরসা রাখতে পারছে না, সে কথা মাওবাদীরা আগেই জানিয়েছিল। এ দিন কিষেণজির মৃত্যুর খবর নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেও এক মাওবাদী নেতা বলেন, “এর পরে সরকার আর আলোচনার কথা কোন মুখে বলবে? আমরাই বা মধ্যস্থতাকারীদের উপর আর ভরসা করব কেন?” এপিডিআর-সহ ২১টি গণ সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, আজাদের মৃত্যুকে ‘খুন’ বলেছিলেন মমতা। তখন তিনি মুখ্যমন্ত্রী হননি। কিষেণজির মৃত্যুকে তিনি কী বলবেন?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.