|
২৫ নভেম্বর-১০ ডিসেম্বর |
নারী নির্যাতন বিলোপের লক্ষ্যে |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
|
আজ, ২৫ নভেম্বর। নারী-নির্যাতন বিলোপ-পক্ষের সূচনা। ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস পর্যন্ত চলবে এই পক্ষ-পালন। জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী, তবু অসমতার এই পৃথিবীতে সেই ‘অর্ধেক আকাশ’ আজও মেঘে ঢাকা। বহু লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে নারীর উপরে শোষণ-নির্যাতন প্রতিরোধে কিছু আইন তৈরি হয়েছে। এই পক্ষে সে রকমই কয়েকটি আইন নিয়ে আলোচনা:
|
বাল্যবিবাহ |
বিবাহ নিবন্ধীকরণ বাধ্যতামূলক। তা এড়িয়ে ১৮ বছরের কমবয়সী কোনও মেয়ের বা ২১ বছরের কমবয়সী কোনও ছেলের বিয়ে দেওয়া বে-আইনি। বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ১৯২৯ অনুযায়ী যাঁরা এই বিয়ে স্থির করবেন--বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন, এমনকী পুরোহিতেরও জরিমানা ও জেলের শাস্তি হতে পারে। ১৫ বছরের কমবয়সী কোনও বালিকার সঙ্গে স্ত্রী হিসাবে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন ধর্ষণ হিসাবে গণ্য ও সেই অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য।
|
পণপ্রথা |
পণ নিবারণী আইন ১৯৬১ অনুযায়ী ‘পণ’ বলতে বোঝায় বিয়ের আগে বা পরে এক পক্ষ থেকে অন্য পক্ষকে চাপের মুখে দেওয়া গহনা, সম্পত্তি, মূল্যবান সিকিউরিটি যথা শেয়ার বা বন্ডের কাগজ। পণ দেওয়া ও নেওয়া, চাওয়া বা দেওয়া-নেওয়ায় সাহায্য করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। জরিমানা ও জেল, দুইই হতে পারে।
|
স্ত্রীধন |
স্বেচ্ছায় কেউ বিয়ের কনেকে যে-সব উপহার দেবেন তার তালিকা তৈরি করা জরুরি। এগুলি স্ত্রীধন। এর উপরে শ্বশুরবাড়ির কারও কোনও অধিকার নেই।
|
পণজনিত অপরাধ |
বিয়ের ৭ বছরের মধ্যে কোনও বধূর অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে ধরে নেওয়া হবে তা স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির নিষ্ঠুর আচরণের পরিণতিতেই ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে ভারতীয় সাক্ষ্য আইনের ১১৩ (এ) ধারা প্রযোজ্য। শ্বশুরবাড়ির লোকেদেরই প্রমাণ করতে হবে তাঁরা নিরপরাধ। পণজনিত মৃত্যুর ক্ষেত্রের পুলিশের কাছে তো বটেই নিকটবর্তী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেও অভিযোগ জানাতে হবে। সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত বাধ্যতামূলক।
|
৪৯৮ (এ) ধারা |
১৯৮৩ সালে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮ ধারাতে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকের নিষ্ঠুরতাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সংযোজিত হয় একটি উপধারা। সেটাই ৪৯৮ (এ) ধারা। সেই প্রথম বৈবাহিক সম্পর্কে স্ত্রীর উপরে স্বামীর অত্যাচার অপরাধ বলে গণ্য হয়। বহু সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও নারীর উপরে নির্যাতন প্রতিরোধে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আত্মহত্যায় প্ররোচনা, মানসিক বা শারীরিক নিগ্রহ এই ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
|
বন্দিদশা |
ইচ্ছার বিরুদ্ধে আটকে রাখা বা যাতায়াত নিয়ন্ত্রিত করা অপরাধের পর্যায়ভুক্ত। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৪১ থেকে ৩৪৮ ধারায় এ ধরনের আচরণ শাস্তিযোগ্য।
|
বিচ্ছেদ |
নিষ্ঠুরতা, অন্য নারীর সঙ্গে স্বামীর সহবাস বা স্বামী যদি পরিত্যাগ করে যান—তবে এক জন মহিলা বিবাহ-বিচ্ছেদ চাইতে পারেন। এ ছাড়া, হিন্দু বিবাহ আইন, ১৯৫৫-র ১৩ (বি) ধারা অনুযায়ী স্বামী-স্ত্রী, দু’জনেই একমত হয়ে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। জেলা আদালতে বিচ্ছেদের মামলা রুজু করা যায়।
|
ভরণপোষণ |
যে আদালতে বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলা হয়েছে, সেখানেই ভরণপোষণের আবেদন করা যায়। বিচ্ছেদের মামলা চলাকালীন বা বিচ্ছেদের পরে আদালত ভরণপোষণের নির্দেশ দিতে পারে (ফৌজদারি কার্যবিধি ১২৫)।
|
সন্তানের হেফাজত |
বিচ্ছিন্ন দাম্পত্য সম্পর্কে নাবালক সন্তানের হেফাজত নির্ধারণের ক্ষেত্রে আদালতের প্রধান বিচার্য শিশুর কল্যাণ এবং উন্নতি। যদি মায়ের আর্থিক স্বনির্ভরতা নাও থাকে কিন্তু আদালত বোঝে মায়ের কাছে থাকাই সন্তানের পক্ষে কল্যাণকর—তবে মায়ের কাছেই থাকবে সন্তান। সংশ্লিষ্ট পুরুষকে স্ত্রী ও সন্তানদের ভরণপোষণ দিতে হবে।
|
মায়ের অধিকার |
গীতা হরিহরণ মামলায় ১৯৯৯-এর ১৮ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে, নাবালক সন্তানের ক্ষেত্রে মা-ও ‘স্বাভাবিক অভিভাবক’। স্কুলে ভর্তি, রেশন কার্ড করানো, ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে অভিভাবক হিসাবে মায়ের স্বাক্ষরই যথেষ্ট।
|
জরুরি যোগাযোগ
• জাতীয় মহিলা কমিশন, ৪ দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গ, নয়াদিল্লি ১১০০০২।
ফোন: (০১১)২৩২১-৯৭৫০।
• রাজ্য মহিলা কমিশন, ১০ রেনি পার্ক, কলকাতা ৭০০০১৯। ফোন: (০৩৩) ২৪৭৪-৫৬০৮।
• লিগাল এইড কমিটি, পশ্চিমবঙ্গ সরকার, সিটি সিভিল কোর্ট (দ্বিতীয় তল), কিরণশঙ্কর রায় রোড, কলকাতা-১। |
|