হাসপাতাল থেকে সাতসকালে নিখোঁজ হয়ে গেলেন এক বৃদ্ধা রোগিণী। আর তার কয়েক ঘণ্টা পরেই ওই রোগিণীর অতি বৃদ্ধ স্বামীর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হল তাঁদেরই বাড়ির শোয়ার ঘর থেকে।
বৃহস্পতিবার সকালে রহস্যজনক এই ঘটনাটি ঘটেছে সোদপুরের নাটাগড় এলাকার তরুণপল্লিতে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, গত সোমবার ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত লক্ষ্মী মণ্ডলকে (৭০) পানিহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বৃহস্পতিবার সকালে কর্তব্যরত নার্স ওই বৃদ্ধাকে ওষুধ দিতে গিয়ে দেখেন, তাঁর শয্যা খালি। শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। খবর দেওয়া হয় লক্ষ্মীদেবীর বাড়িতে। বৃদ্ধার পরিবারের লোকেরা হাসপাতালে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। সেই সময়ে বাড়িতে একাই ছিলেন লক্ষ্মীদেবীর স্বামী নিতাই মণ্ডল (৯০)।
দুপুরে লক্ষ্মীদেবীর পরিবারের লোকজন বাড়ি ফিরে দেখেন, সিলিং থেকে ঝুলছে নিতাইবাবুর দেহ। স্ত্রীর নিখোঁজ হওয়ার খবর জানার পর থেকে মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত নিতাইবাবু আত্মহত্যা করেছেন বলেই প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান।
তবে, হাসপাতাল থেকে রোগিণীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে সেখানকার নিরাপত্তা নিয়ে। এই ঘটনায় লক্ষ্মীদেবীর পরিবারের পক্ষ থেকে নিযুক্ত এক আয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। কী ভাবে কর্তব্যরত নার্স ও নিরাপত্তাকর্মীদের নজর এড়িয়ে ওই বৃদ্ধা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেলেন, তার বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন পানিহাটি হাসপাতালের সুপার মলয় দাস। তিনি বলেন, ‘‘এক জন রোগিণী হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেলেন, অথচ কেউ তা দেখলেন না, এটাই আশ্চর্যের। নিরাপত্তাকর্মীদের গাফিলতি নিশ্চয়ই ছিল। তা না-হলে এক জন রোগিণী বেরোন কী করে? গ্রিন কার্ডের সুযোগ নিয়ে নিয়ম ভেঙে আয়া রেখেছিলেন বৃদ্ধার পরিবারের লোকেরা। সেই আয়ার উপস্থিতিতেই ওই রোগিণী শয্যা থেকে নেমে নিখোঁজ হলেন। পুরো বিষয়টিই রহস্যজনক। আমরা হাসপাতালের পক্ষ থেকে একটি দল তৈরি করে লক্ষ্মীদেবীর খোঁজ শুরু করেছি।’’
এ দিন বিকেলে ময়না-তদন্তে পাঠানো হয় নিতাইবাবুর দেহ। মায়ের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় হাসপাতালের গাফিলতি ছিল বলে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন নিতাইবাবুর ছেলে যাদব মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘রাত পর্যন্ত আমার মায়ের কোনও খোঁজ নেই। সবাই বলছে খোঁজ করছে। কিন্তু মা কোথায় যাবেন? বাড়ি তো চিনতে পারবেন না। আর বাবা তো এই শোকে চলেই গেলেন। এই ক্ষতি কী ভাবে পূরণ হবে?’’ ওই ঘটনার পরে এলাকার কাউন্সিলরের উদ্যোগে স্থানীয়েরা অটোর মাথায় মাইক বেঁধে ওই বৃদ্ধার খোঁজ পেতে ঘোষণা করছেন আশপাশের এলাকায়। এলাকার কাউন্সিলর সঞ্জীব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হাসপাতাল থেকে রোগী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার পূর্ণ তদন্ত চেয়েছি আমরা। ওই ঘটনার জেরে একটা প্রাণ চলে গেল। পরিবারটি খুব গরিব। সৎকারের টাকাও চাঁদা তুলে জোগাড় করতে হচ্ছে।’’ দুপুরে হাসপাতাল থেকে ফিরে বাবার ঝুলন্ত দেহ দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়েন নিতাইবাবুর আর এক ছেলে আনন্দ। সঞ্জীববাবু বলেন, ‘‘আমি ওঁদের বাড়ি গিয়ে দেখি, ঘরের মধ্যে ঝুলছে বৃদ্ধের দেহ। তাড়াতাড়ি পুলিশে খবর দিই।’’
ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক অজয় পাল বলেন, ‘‘হাসপাতাল থেকে রোগী নিখোঁজের ঘটনায় কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’’ |