বেহাল রাস্তাকেই দুষছেন প্রতিবেশীরা
বসিরহাটে লরিতে পিষ্ট হয়ে মৃত্যু স্কুলপড়ুয়ার
রির ধাক্কায় এক ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় বেহাল রাস্তা নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন স্থানীয় মানুষ। উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটে টাকি রোডে জয়পুর কালীবাড়ি মোড়ে বৃহস্পতিবার সকাল সাতটা নাগাদ ওই দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে মৃত ছাত্রীর নাম স্বপ্না কাহার (৯)। সে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। বেহাল রাস্তার কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে দাবি করে বৃহস্পতিবার সকালে প্রায় তিন ঘণ্টা টাকি রোড অবরোধ করে ক্ষুব্ধ জনতা। সকালবেলা ব্যস্ত সময়ে আচমকা রাস্তা অবরোধে যানজটে আটকে পড়ে চরম হয়রান হতে হয় ছাত্রছাত্রী এবং চাকরিজীবী নিত্যযাত্রীদের। বেলা ১০টা নাগাদ পুলিশ ও পূর্ত দফতরের লোকজন গিয়ে দ্রুত রাস্তা মেরামতির আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘোড়ারস কুলিনগ্রাম পঞ্চায়েতের জয়পুর কালীবাড়ি মোড়ে টাকি রোডের ধারে কাহার পাড়ায় থাকেন পেশায় ভ্যানচালক রাকেশ কাহার। স্ত্রী গীতাদেবী এবং দুই ছেলেমেয়ে স্বপ্না ও লবকে নিয়ে সংসার রাকেশবাবুর। পায়ের সমস্যার কারণে স্বপ্না খুঁড়িয়ে চলত। মিষ্টি স্বভাবের স্বপ্না পাড়ায় সকলের কাছেই অত্যন্ত প্রিয় ছিল বলে প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন। শুক্রবার সকাল ৭টা নাগাদ বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে পড়তে যাওয়ার জন্য বেরোনোর আগে বিস্কুট খাবে বলে জেদ ধরে সে। রাকেশবাবু রাস্তার ধারে একটি দোকান থেকে তাকে বিস্কুটও কিনে দেন। এর পরে আসছি বলে স্বপ্না হাঁটতে শুরু করে। সেই সময় বারাসতের দিক থেকে কয়লা বোঝাই একটি লরি আসছিল। এবড়ো-খেবড়ো রাস্তায় দ্রুতগতিতে যেতে গিয়ে লরিচালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলায় রাস্তার যে দিক দিয়ে স্বপ্না হাঁটছিল সে দিকে সরে আসে। মুহূর্তে লরির ধাক্কায় ছিটকে পড়ে চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। সামান্য দূরে এই দৃশ্য দেখে জ্ঞান হারান রাকেশবাবু। দুর্ঘটনার পরে চালক লরি পেলে পালিয়ে গেলেও খালাসিকে বেধড়ক মারধর করে একটি ঘরে আটকে রাখে জনতা। রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণেই দুর্ঘটনা দাবি করে গাছের গুঁড়ি ফেলে পথ অবরোধ শুরু করে জনতা। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ওই খালাসিকে উদ্ধার করে। আচমকা অবরোধের ফলে রাস্তার দু’দিকেই আটকে যায় প্রচুর যানবাহন। নাকাল হন নিত্যযাত্রীরা। এর পরে পূর্ত দফতরের লোকজন এবং পুলিশ দ্রুত রাস্তা সারানোর আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে।
গাছের গুঁড়ি ফেলে রাস্তা অবরোধ জনতার।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত এক সপ্তাহে টাকি রোডে এই নিয়ে দুর্ঘটনায় দু’জনের মৃত্যু হল। জেলার দুই মহকুমা বারাসত ও বসিরহাটের মানুষের কাছে এই রাস্তা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এমনকী এই রাস্তা দিয়েই জেলার অন্যতম সীমান্ত বাণিজ্য কেন্দ্র ঘোজাডাঙায় পণ্য পরিবহণ চলে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই রাস্তার হাল অত্যন্ত খারাপ। এই রাস্তা দিয়ে বহির্বাণিজ্যের কারণে কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হলেও রাস্তার সংস্কারের দিকে প্রশাসনের কোনও নজর নেই বলে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ সাধারণ মানুষের। নিত্য ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে। তবে এক সপ্তাহের মধ্যে পর পর দু’টি দুর্ঘটনায় মৃত্যুর জেরে এ দিন রাস্তা সারানো নিয়ে প্রশাসনের গাফিলতিতে ক্ষোভে ফেটে পড়েন মানুষ।
এ দিন স্বপ্নার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, মেয়ের শোকে বারে বারেই জ্ঞান হারাচ্ছেন মা গীতাদেবী। কান্নাকাটি করছেন প্রতিবেশীরাও। সকলেরই এক বক্তব্য, রাস্তাটা সারানো হলে হয়তো এমন দুর্ঘটনা ঘটত না।

ছবি: নির্মল বসু।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.