রডের ঘায়ে দম্পতির মাথা ফাটিয়ে ডাকাতি হাবরায়
ম্পতিকে মারধর করে লুঠপাট চালাল এক দল দুষ্কৃতী। পরে একই এলাকায় আরও একটি বাড়িতে হামলা চালায় তারা। খবর পেয়ে পুলিশ সময় মতো এসে পড়েছিল। পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। পাল্টা দু’রাউন্ড গুলি চালায় পুলিশ। বুধবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে হাবরা থানার পায়রাগাছি বাজারে। জখম দম্পতিকে ভর্তি করা হয়েছে বারাসত হাসপাতালে। উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, “দুষ্কৃতীদের ধরতে পুলিশ গুলি চালিয়েছিল। তবে কেউ ধরা পড়েনি। তল্লাশি চলছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হাবরা-নকপুল সড়কের ধারেই দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি। তিনি সিএসটিসি-র কর্মী। এই বাড়িতেই প্রথম চড়াও হয় জনা সতেরোর দুষ্কৃতী দলটি। রাত দেড়টা নাগাদ বাড়ির পিছনে আওয়াজ পেয়ে ঘুম ভাঙে দুলালবাবুর মেয়ে সোমার। তাঁর ঘরের জানলা দিয়ে টর্চের আলো ফেলে দুষ্কৃতীরা। ওই তরুণী পাশের ঘর থেকে বাবা-মাকে ডেকে তোলেন। জানলা দিয়ে উঁকি-ঝুঁকি মেরে কেউ কিছু দেখতে পাননি। দুলালবাবু বাড়ির পিছনের দরজা খুলে বেরোতেই তাঁকে ঘিরে ধরে এক দল সশস্ত্র দুষ্কৃতী। মাথায় রডের ঘা মারে। দুলালবাবুর স্ত্রী মায়াদেবী চিৎকার জুড়ে দেন। তাঁকেও রড দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়। দুষ্কৃতীদের ঘুসিতে নাক ফেটে যায় ওই মহিলার। দুলালবাবু ডাকাতদের বলেছিলেন, ‘মারধর কোরো না। যা আছে নিয়ে যাও।’ কিন্তু কে শোনে কার কথা!
ডাকাতদের মারে জখম দুলালবাবু।
রক্তাক্ত অবস্থায় ওই দম্পতি এবং তাঁদের দুই ছেলেমেয়েকে একটি ঘরে ঢুকিয়ে গোটা বাড়ি তছনছ করে ডাকাত দল। তাঁদের পাহারায় ছিল বন্দুকধারী এক দুষ্কৃতী। দুলালবাবুরা জানিয়েছেন, ঘরে ঢুকেছিল মোট সাত-আট জন। আরও জনা আটেক বাইরে পাহারায় ছিল। দুষ্কৃতীদের মুখ কালো কাপড়, গামছা, মাফলারে ঢাকা ছিল। এক জন বাড়িতে রাখা একটি গামছা জড়িয়ে নেয় মুখে। আধ ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালিয়ে সকলকে একটি ঘরে আটকে দরজায় ছিটকিনি তুলে বেরিয়ে যায় ডাকাতদল। দুলালবাবুর দাবি, কয়েক হাজার টাকা, কয়েক ভরি সোনার গয়না, ক্যামেরা, মোবাইল ফোন-সহ বেশ কিছু জিনিসপত্র লুঠ হয়েছে।
তত ক্ষণে পাড়া-প্রতিবেশী গোলমাল টের পেয়েছেন। দুলালবাবুর ভাই হাবরা থানায় ফোন করেন। যদিও ঝুঁকি নিয়ে কেউই অত রাতে বাড়ির বাড়ির বাইরে বেরোননি।
দুলালবাবুর বাড়ি থেকে মিনিট তিনেকের দূরত্বে পায়রাগাছি-সংহতি রাস্তা। সেখানে থাকেন স্থানীয় ব্যবসায়ী তুষার দাস। রাত ২টোর পরে দুষ্কৃতীরা চড়াও হয় তাঁর বাড়িতে। গ্রিলের তালা ভেঙে ঢোকে। কেউ অবশ্য সাড়াশব্দ পাননি। তুষারবাবুর বাবা নিতাই এবং মা মীরা যে ঘরে ছিলেন, সেখানে হানা দেয় দুষ্কৃতীরা। আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে শাসায়। বৃদ্ধ নিতাইবাবু বলেন, “বন্দুক দেখানোর দরকার নেই। চাবি দিয়ে দিচ্ছি। যা ইচ্ছে করো।” পাশের ঘরে ছিলেন তুষারবাবু, তাঁর স্ত্রী মিনা ও ছ’বছরের ছেলে। সেখানে ঢুকে তুষারবাবুকে দড়ি দিয়ে পিছমোড়া করে বাঁধে দুষ্কৃতীরা। একটি চাদর দিয়ে ঢেকে দেয় তাঁকে। এর পরে আলমারির চাবি নিয়ে লুঠপাট শুরু করে।
ডাকাতদের অত্যাচারের চিহ্ন।
মিনিট কুড়ির মধ্যেই এসে পড়ে পুলিশের দু’টি গাড়ি। বুঝতে পেরে দুষ্কৃতীরা পালাতে থাকে। গাড়ি লক্ষ্য করে দু’টি বোমা ছোড়ে তারা। মাঠের রাস্তা ধরে মছলন্দপুরের দিকে ছুটে পালায় সকলে। পুলিশ তাদের তাড়া করে দু’রাউন্ড গুলি চালায়। তুষারবাবুর দাবি, তাঁর বাড়ি থেকেও কয়েক হাজার টাকা এবং বেশ কয়েক ভরি সোনার গয়না লুঠ করে নিয়ে গিয়েছে ডাকাতেরা। হাবরায় ডাকাতির ঘটনা এর আগে বেশ কয়েক বার ঘটেছে। কয়েক বছর আগে সাগর চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি ডাকাতদের গুলিতে মারাও যান। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, এলাকার কয়েক জন দাগি দুষ্কৃতী সম্প্রতি জামিনে ছাড়া পেয়েছে। তাদেরই দৌরাত্ম্য শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব চলছে বলেও অভিযোগ।

নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.