|
|
|
|
পুলিশ পার পাওয়ায় অসন্তোষ |
দাসেরবাঁধ কঙ্কাল-কাণ্ডে রাজসাক্ষী নিয়ে শুনানি আজ |
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
চার্জশিট হয়ে গিয়েছে। ৫৮ জন সিপিএম নেতা-কর্মীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে চার্জশিটে। তাঁদের মধ্যে ১৯ জন এই মুহূর্তে জেলে। এবং সেই বন্দি-তালিকায় রয়েছেন এমনকী গড়বেতার একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিপিএম নেতা, প্রাক্তন মন্ত্রী, এখনও বিধায়ক সুশান্ত ঘোষও। বিচার-পর্ব শুরু শুধু সময়ের অপেক্ষা।
ন’বছর আগের ঘটনায় এক দফা খারিজ হয়ে যাওয়া মামলা ফের শুরু হওয়ায় সবচেয়ে বেশি অস্বস্তি স্বভাবতই সিপিএম-শিবিরে। উল্টো দিকে, দেরিতে হলেও বিচারের আশায় নতুন করে বুক বাঁধছেন ন’বছর আগের ঘটনায় স্বজনহারা মানুষজন। কিন্তু কিছুটা অসন্তুষ্টও তাঁরা। ন’বছর আগে তাঁদের অভিযোগই নিতে চায়নি পুলিশ। পরে অভিযোগ নাম-কা-ওয়াস্তে নথিভুক্ত করেও তদন্তের নামে পুলিশ প্রহসন চালিয়েছে, মামলার দফারফা করেছে বলে অভিযোগ। উল্টে অভিযোগকারীদেরই অন্য মামলায় জড়িয়ে হয়রান করেছে। সেই পুলিশ ‘পরিবর্তিত’ পরিস্থিতিতেও পার পেয়েই যাচ্ছে--ক্ষোভ সে কারণেই। দাসেরবাঁধ কঙ্কাল-কাণ্ডে আজ, শুক্রবারই জেলবন্দি মদন সাঁতরা ও বৈদ্যনাথ সাঁতরাকে রাজসাক্ষী করা নিয়ে সিআইডি-র আবেদনের শুনানি রয়েছে মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে। ৯ বছর আগে ২০০২-এর ২২ সেপ্টেম্বর কেশপুরের পিয়াশালায় তৃণমূল সমর্থকদের উপরে সিপিএমের হামলা এবং কয়েক জন তৃণমূল সমর্থককে খুন করে দেহ গায়েবের ঘটনায় এই দুই সিপিএম কর্মীর প্রত্যক্ষ যোগ ছিল বলেই দাবি সিআইডি-র। মদন ও বৈদ্যনাথ ইতিমধ্যেই গোপন জবানবন্দিও দিয়েছেন আদালতে। মামলা ‘দাঁড়’ করাতে এই দু’জনের জবানবন্দি অন্যতম ‘হাতিয়ার’ সিআইডি-র। তাঁদের রাজসাক্ষী করা গেলে মামলা আরও পাকাপোক্ত হবে বলেই ধারণা তদন্ত-সংস্থা তথা সরকারপক্ষের।
এ পর্যন্ত ব্যবস্থায় ‘খুশি’ পিয়াশালায় স্বজন-হারানো মানুষজন। কিন্তু তার পরেও তাঁদের প্রশ্ন, সে দিনের পুলিশের ভূমিকা কেন কার্যত উহ্যই থেকে গেল চার্জশিটে! সিপিএমের বাহিনীর সেই ‘গণহত্যা’-কর্মে পুলিশেরও মদত ছিল বলে দাবি বিক্ষুব্ধদের। আর সে কারণেই সে দিনের সিপিএম-বাহিনীর লোকজনের সঙ্গেই পুলিশেরও শাস্তি চান তাঁরা। কিন্তু সিআইডি-র চার্জশিট সেই সম্ভাবনা খারিজ করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ তাঁদের। কেশপুরের খেতুয়ার যুবক শ্যামল আচার্যের বাবা অজয় আচার্য ২০০২-এর ২২ সেপ্টেম্বর পিয়াশালা থেকেই নিখোঁজ হয়েছিলেন। তৃণমূল করতেন। অজয়বাবুর কী হল--সিপিএমের আমলে সেটুকুও আর জানতে পারেননি আচার্য পরিবার। চলতি বছর মে মাসে রাজ্যে পালাবদলের পরে পিয়াশালার অদূরে দাসেরবাঁধে মাটি খুঁড়ে হাড়গোড় উদ্ধারের পরে শ্যামল দাবি করেন, ওই হাড়গোড়ের মধ্যে তাঁর বাবার দেহাবশেষও রয়েছে। নতুন করে অভিযোগ দায়ের করেন পুলিশের কাছে। হাড়গোড় নিয়ে শ্যামলের দাবি ডিএনএ পরীক্ষায় প্রাথমিক ভাবে প্রমাণও হয়েছে। তার পরেও ক্ষুব্ধ শ্যামলের বক্তব্য, “পুলিশ সেই সময় আমাদের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছিল। শুরুতে অভিযোগও নিতে চায়নি। আমরা চাই, গণহত্যায় জড়িত সিপিএম নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি দোষী পুলিশ অফিসারদেরও শাস্তি হোক।”
সে দিনের ঘটনার অন্য এক প্রত্যক্ষদর্শীরও মন্তব্য, “পুলিশ সব জেনেশুনে সে দিন কোনও পদক্ষেপ করেনি। করলে অনেকগুলো প্রাণ হয়তো রক্ষা পেত। সেই পুলিশই যদি এ বারও পার পেয়েই যায়, তা হলে পরিবর্তন আর কোথায়?” সিআইডি-র ২২ পাতার চার্জশিটে মেনে নেওয়া হয়েছে, ‘ন’বছর আগে পিয়াশালায় যাঁদের উপর হামলা হয়েছিল, তাঁরা সবাই ছিলেন ঘর ছাড়া তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। মেদিনীপুরে এক প্রশাসনিক বৈঠকে তাঁদের ঘরে ফেরানোর সিদ্ধান্ত হয়। সেই মতো ২২ সেপ্টেম্বর তাঁরা ঘরে ফেরার চেষ্টা করেন’। ঘর ছাড়ারা ফিরছেন জেনেও সে সময়ে পুলিশ নিরাপত্তার কোনও ব্যবস্থাই করেনি বলে অভিযোগ। হামলা-গণহত্যায় জড়িতদের ধরা তো দূর্অস্ত। উল্টে সে দিনের ঘটনায় আহত কয়েক জনকে ‘হামলাকারী’ সিপিএমের অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয়েছিল! সিআইডি-র চার্জশিটেও তৃণমূল সমর্থকদের গ্রেফতারের প্রসঙ্গ রয়েছে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। পিয়াশালার ঘটনা ২০০২-এর ২২ সেপ্টেম্বরের। অজয়বাবুর স্ত্রী চন্দনা আচার্য-র অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘কেস’ নথিভুক্ত হয়েছিল কিন্তু ৪ দিন পরে--২৬ সেপ্টেম্বর (নং ৬১/২০০২)। অভিযোগ, কেশপুর থানা প্রথমে অভিযোগ নেয়নি। পরে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়। কিন্তু ২২ সেপ্টেম্বরই থানা নথিভুক্ত করেছিল নিমাইচাঁদ সরকার নামে এক সিপিএম কর্মীর অভিযোগ (নং ৫৯/২০০২)। যার প্রেক্ষিতেই গ্রেফতার করা হয়েছিল কয়েক জন তৃণমূল কর্মী-সমর্থককে। সিআইডি তাদের চার্জশিটে গণহত্যায় অন্যতম অভিযুক্ত হিসাবেই নাম রেখেছে নিমাইবাবুর। কিন্তু পুলিশ নিয়ে ‘নীরব’! কেন? সিআইডি-র তদন্তকারী অফিসার পূর্ণশিব মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “তদন্ত শেষ হয়নি। সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এখন এর বেশি কিছু বলব না।” শ্যামলের কিন্তু দাবি, “দোষী পুলিশ অফিসারদেরও শাস্তি চাই আমরা।” |
|
|
|
|
|