|
|
|
|
বন্দি ওসি-র সেই অভিজ্ঞতা |
কিষেণজি বলেছিলেন, আমাকে তাঁরা প্রাণে মারবেন না |
সৌমেশ্বর মণ্ডল ও বরুণ দে • আনন্দপুর |
যিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রাণে মারবেন না, তিনিই ছিলেন কিষেণজি।
সে দিনের পশ্চিম মেদিনীপুরের সাঁকরাইল থানার ওসি অতীন্দ্রনাথ দত্ত, বৃহস্পতিবার স্মৃতিচারণ করছিলেন ওই জেলারই আনন্দপুর থানায় বসে।
২০০৯ সালের ২০ অক্টোবর সাঁকরাইল থানা থেকেই মাওবাদীরা অতীন্দ্রবাবুকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিলেন। সে দিন ধরেই নিয়েছিলেন আর হয়তো বেঁচে ফিরবেন না। প্রতিটি মুহূর্ত তাঁকে মৃত্যুভয় গ্রাস করেছিল। তবে অঘটন ঘটল বন্দি জীবনের দ্বিতীয় দিনে। সে দিনটা ছিল ২১ অক্টোবরের রাত। অতীন্দ্রবাবুর সামনে এসে একজন বললেন,
|
অতীন্দ্রনাথ দত্ত |
“আমরা আপনাকে মারব না। সরকারের কাছে আপনাকে আমরা যুদ্ধবন্দি হিসাবে ঘোষণা করেছি। তবে রাজ্য সরকারের কাছে আমাদের কিছু দাবি রয়েছে। সেগুলি নিয়ে আলোচনা চলছে, আপনার ঘাবড়ানোর কিছু নেই।”
অতীন্দ্রবাবুর কথায়, অপহরণ করার পর থেকেই তাঁর চোখ কাপড় দিয়ে বেধে রাখা হয়েছিল। তাই যিনি ওই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তাঁকে তিনি দেখতে পাননি। তবে তাঁর কথার উচ্চারণে, গলার শব্দে তিনিই যে কিষেণজি তা বুঝতেই পেরেছিলেন। একদিন টানা উপোস থাকার পরে সেই রাতেই অতীন্দ্রবাবু কিছুটা আশ্বস্ত হয়ে মাছ-ভাত খেয়েছিলেন বলে জানান। তিনি অবশ্য প্রথম দিকে এক বিন্দুও বুঝতে পারেননি, যে মাওবাদীরা তাঁকে ছেড়ে দেবে বলে পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলছে। যোগাযোগ রয়েছে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গেও। কারণ তাঁর সঙ্গে কেউ কথা বলত না।
এ দিন যখন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, তিনি তখন স্থানীয় একটি মেলায় ডিউটিতে ছিলেন। ওই এলাকায় লোডশেডিং ছিল। তাই জানতে পারেননি যৌথ বাহিনীর গুলিতে কিষেণজির মৃত্যু হয়েছে। সন্ধে সাড়ে ছ’টা নাগাদ অতীন্দ্রবাবুর স্ত্রী ইন্দ্রানী দত্ত ওনাকে ফোন করে প্রথম খবরটা দেন। এর পরে ডিউটি থেকে ফিরে এসে টিভি খুলে সব জানতে পারেন। প্রথমে চট করে এই সব বিষয় নিয়ে মুখ খুলতে চাইছিলেন না। পরে অতীন্দ্রবাবুর প্রতিক্রিয়া, এটা নিঃসন্দেহে রাজ্য সরকার এবং যৌথ বাহিনীর বড় সাফল্য। যে তিন দিন কিষেণজির হাতে বন্দি ছিলেন, অন্তত চার-পাঁচ বার ডেরা বদল করা হয়েছিল তাঁকে নিয়ে। থাকতেন খোলা আকাশের নীচে, গাছের তলায়। মাটিতেই শোয়া। দু’বেলা খাবার অবশ্য দেওয়া হত। চোখ বাঁধা অবস্থাতেই তা খেতে হত। এক সময় ভাবতেও শুরু করেছিলেন, আর হয়তো কোনও দিন বাড়ি ফিরতে পারবেন না।
ওই অবস্থাতেই এক দিন যৌথ বাহিনীর সঙ্গে জোর গুলির লড়াই হয়েছিল মাওবাদীদের সঙ্গে। যেখানে তাঁকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল, তার থেকে অনেকটা দূরে লড়াই চললেও বুঝতে পেরেছিলেন উদ্ধারের জন্যই হয়তো যৌথ বাহিনী তল্লাশি শুরু করেছে। তবে যে ক’টা দিন বন্দি ছিলেন, অতীনবাবুকে কোনও শারীরিক অত্যাচার করেনি মাওবাদীরা। স্মৃতিচারণ করতে করতে অতীন্দ্রবাবু জানান, তিন দিন চোখ বাঁধা অবস্থাতে অন্ধকারে থাকাটাই অনেক বড় মানসিক অত্যাচার।
তবে কথা রেখেছিলেন, কিষেণজি। তিন দিনের মাথায় ২২ অক্টোবর বিকেলে তিনি তাঁর স্কোয়াডের বিশ্বস্ত কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে সাংবাদিকদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন অতীন্দ্রবাবুকে।
অনেক মৃত্যুর সঙ্গে যাঁর নাম জড়িয়ে সেই কিষেণজির এই ভূমিকাটা অবশ্য শুধুই মুক্তিদাতার। |
|
|
|
|
|